ব্যর্থ শাকিব খান, শঙ্কিত চলচ্চিত্রপাড়া!
শাকিব খান মানেই হিট, শাকিব মানেই ব্যবসাসফল চলচ্চিত্র। এমনকি সাধারণ দিনেও শাকিব খানের চলচ্চিত্র মুক্তি পেলে সিনেমা হলে বয়ে যায় ঈদের আমেজ! টানা তিন-চার দিন থাকে হাউসফুল। যে কারণে সারা বছরই সিনেমা হল মালিকেরা তাঁর অভিনীত চলচ্চিত্রের জন্য অপেক্ষায় থাকেন। তাঁকে ছাড়া অন্য ছবিগুলো দর্শককে প্রেক্ষাগৃহমুখী করতে প্রায় ব্যর্থ। এমন অবস্থা দীর্ঘদিন ধরে দেখে আসছে ঢালিউড অঙ্গন। শোনা যায়, নায়ক মান্না প্রয়াত হওয়ার পর থেকেই চলছে শাকিব খানের একক আধিপত্য।
কিন্তু এবার ‘ব্যর্থতার’ খাতায় নাম উঠল ঢাকাই চলচ্চিত্রের জনপ্রিয়তম নায়ক শাকিব খানের। এ নিয়ে চিন্তিত চলচ্চিত্রবোদ্ধারা।
এবারের ভালোবাসা দিবসে, অর্থাৎ ১৪ ফেব্রুয়ারি মুক্তি পায় শাকিব অভিনীত-প্রযোজিত ‘বীর’। অন্তর্জালে পোস্টার-ট্রেইলার ঝড় তুললেও প্রেক্ষাগৃহমুখী হননি সিনেপ্রেমীরা। গত ৬ মার্চ মুক্তি পায় শাকিব অভিনীত ‘শাহেনশাহ’। এ ছবিও প্রত্যাশিত ব্যবসা করতে পারেনি। হলমুখী হননি দর্শক।
‘বীর’-এর সাফল্য নিয়ে কোনো সন্দেহ ছিল না নির্মাণ-সংশ্লিষ্টদের। কারণ, এটা শুধু শাকিবের ছবিই নয়, দেশের অন্যতম জনপ্রিয় ও শীর্ষ নির্মাতা কাজী হায়াৎ এটি নির্মাণ করেছেন। তা ছাড়া এ ছবির মাধ্যমে কাজী হায়াৎ পূর্ণ করেছেন নির্মাণের হাফ সেঞ্চুরি। তাই প্রত্যাশাও ছিল বেশি। কিন্তু একঘেয়ে ও খাপছাড়া গল্প, সেকেলে হিরোইজম প্রদর্শন, পুরোনো ধাঁচের অ্যাকশন দৃশ্য মন টানেনি দর্শকের। এ খবর কিছুটা পুরোনো। নতুন খবর হচ্ছে, শাকিব খান অভিনীত ‘শাহেনশাহ’ ছবিটিও প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ।
‘শাহেনশাহ’ ছবি প্রসঙ্গে মধুমিতা হলের কর্ণধার ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ বলেন, “‘শাহেনশাহ’র গল্প ভালো। কিন্তু দুই বছর আগের সিনেমা হওয়ায় দর্শক টানতে পারেনি। অনেক দিন ট্রেইলার চালানো হয়েছে। আসবে আসবে বলেও আসেনি। যে কারণে দর্শক কম হয়েছে বলে আমি মনে করি। তবে করোনার আতঙ্ক এখনো আমাদের সিনেমার দর্শকের ওপর পড়েনি।”
নওশাদ আরো বলেন, “শাকিব অভিনীত ‘বীর’ সিনেমাও ভালো যায়নি। ‘বীর’-এর তুলনায় ‘শাহেনশাহ’ অনেক ভালো সিনেমা। শাকিবের সিনেমাও এখন দর্শক টানতে পারছে না। একটা সময় শাকিবের সিনেমা মুক্তি পেলে সপ্তাহের শুরুতে দর্শক পাওয়া যেত।”
ঢাকার বাইরে অন্য হলগুলোতেও ‘শাহেনশাহ’র দর্শকচিত্র নেতিবাচক। চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির প্রধান উপদেষ্টা সুদীপ্ত কুমার দাস বলেন, ‘ঢাকার বাইরে দুই হল মিলে একটি সিনেমা চার লাখ টাকা দিয়ে নেয়, কিন্তু পুরো সপ্তাহে দুটি হল মিলেও দেড় লাখ টাকা ওঠাতে পারেনি। তাতে দুই হলের আড়াই লাখ টাকা লোকসান হয়েছে। মাত্র দুই সপ্তাহ আগে আরেকটি সিনেমা (বীর) এ হল মালিকদের আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।”
হল মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ প্রদর্শক সমিতির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান মিয়া আলাউদ্দিন বলেন, ‘শাকিব খানের সিনেমা যে রকম ওপেনিং হয়, প্রথম দুই দিনে কিছু বড় সিনেমা হল ছাড়া এবারে তা দেখা যায়নি। এ ছাড়া প্রচারণার অভাব ছিল সিনেমাটির (শাহেনশাহ)। দেখা যাক, আগামী সপ্তাহে কী হয়।’
ঢাকাই চলচ্চিত্রের ভরসা শাকিব খান। সেই শাকিব খানের সিনেমা একের পর এক ফ্লপের তালিকায় যোগ হচ্ছে। ঢালিউডে নতুন নেতৃত্ব তৈরি হওয়ার আগেই এই নাম্বার ওয়ান তারকার পতন হলে শুধু শাকিব খানের জন্য অশনিসংকেত নয়, বরং পুরো ইন্ডাস্ট্রির জন্য অশনিসংকেত বলে মনে করেন চলচ্চিত্রবোদ্ধারা।
বিষয়টি নিয়ে নির্মাতা এফ আই মানিক বলেন, ‘চলচ্চিত্রপাড়ায় শাকিব খানের যেমন বন্ধু রয়েছে, তেমনি রয়েছে শত্রু। তবে শাকিব খানের এই ব্যর্থতায় তার শত্রুদের মুখেও হাসি নেই। কারণ শাকিব খান ব্যর্থ মানে ইন্ডাস্ট্রি ব্যর্থ। তার ছবিই যদি দর্শক এখন আর না দেখে, তবে আমাদের অবস্থা আরো খারাপের দিকে যাবে।’
তবে ব্যর্থতার দায় পুরোটা শাকিব খানের ওপর চাপিয়ে দিতে নারাজ পরিচালক সোহানুর রহমান সোহান। তিনি বলেন, “শাকিব খান দুটি ছবি নিয়ে ব্যর্থ, তবে পুরোটা দায় তাঁর নয়। কারণ ‘বীর’ ও ‘শাহেনশাহ’ ছবি দুটিই মুক্তির পর প্রথম দুদিন দর্শক হলে এসেছে। এটা কিন্তু শাকিব খানের জন্যই এসেছে। তারপর সেই দর্শক ধরে রাখা যায়নি। তার মানে ছবির গল্প ও মেকিং দেখে দর্শক সন্তুষ্ট নয়। আমার মনে হয়, শাকিব খানকে নিয়ে ভালো মানের ছবি নির্মাণ করলে দর্শক সপ্তাহজুড়েই ছবি দেখতে ভিড় করত।”
এ ব্যাপারে চিত্রনায়ক শাকিব খানের সঙ্গে মুঠোফোনে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ‘শাহেনশাহ’ ছবির শুটিং শেষ হয়। ছবিটির সেন্সর ছাড়পত্র পেয়েছিল একই বছরের মার্চে। এরপর বছরজুড়েই ছিল মুক্তির আলোচনা, ঘোষণাও। বারবার মুক্তির তারিখ ঘোষণা দিয়েও পিছিয়ে যায়। এ বছরের ৬ মার্চ মুক্তি পায় ছবিটি।
‘শাহেনশাহ’ ছবিতে প্রথমবারের মতো জুটি বাঁধেন শাকিব খান, নুসরাত ফারিয়া ও নবাগত রোদেলা জান্নাত। এ ছাড়া অভিনয় করেছেন মিশা সওদাগর, উজ্জ্বল, আহমেদ শরিফ, অনুভব মাহবুব ও লিটন হাশমি। সিনেমাটি পরিচালনা করেছেন শামীম আহমেদ রনি।
‘বীর’ প্রযোজনা করেছে শাকিব খানের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান এস কে ফিল্মস। এর সহপ্রযোজক মোহাম্মদ ইকবাল। পরিচালক কাজী হায়াৎ প্রায় অর্ধশত সিনেমা নির্মাণ করলেও শাকিব খানকে নিয়ে এর আগে কোনো চলচ্চিত্র নির্মাণ করেননি।
‘বীর’ ছবিতে শাকিব খানের সঙ্গে জুটি বাঁধেন শবনম বুবলী। এ ছাড়া অভিনয় করেছেন সাদেক বাচ্চু, মিশা সওদাগর, শিবা শানু, নানা শাহ, জ্যাকি আলমগীর, কমল, কাবিলাসহ অনেকে। এর আগে শাকিব খানের এস কে ফিল্মস থেকে ‘হিরো : দ্য সুপারস্টার’ ও ‘পাসওয়ার্ড’ নামে দুটি ছবি মুক্তি পায়। ছবি দুটি ব্যবসায়িক সফলতাও পেয়েছে। ‘বীর’ শাকিবের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের তৃতীয় ছবি।