ফ্লাইট বিড়ম্বনায় শেষ কথা হলো না বাবা-ছেলের
গত শনিবার থেকে শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে এন্ড্রু কিশোরের। মৃত্যু দুয়ারে দাঁড়িয়ে, জানা ছিল পরিবারের সবার। দুই সন্তানকে শেষবারের মতো দেখার জন্য আকুল ছিলেন বাবা এন্ড্রু কিশোর। ছেলে সপ্তক টিকেট কেটে ফ্লাইটের অপেক্ষায় ছিলেন। দুর্ভাগ্য, রোববার রাতে ফ্লাইট বাতিল হয়ে যায়।
ছেলের আর দেশে ফেরা হয়নি। খবরটি জেনেছিলেন বাবাও। গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন এন্ড্রু কিশোর। তাই বাবার সঙ্গে শেষবার একটু কথাও বলা হলো না ছেলের।
এন্ড্রু কিশোরের এক ছেলে ও এক মেয়ে। তাঁরা দুজনই অস্ট্রেলিয়ায় পড়াশোনা করছেন। মেয়ে মিনিম এন্ড্রু সংজ্ঞা সিডনিতে গ্রাফিক ডিজাইন আর ছেলে জে এন্ড্রু সপ্তক মেলবোর্নে ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ে পড়ছেন।
আজ মঙ্গলবার (৭ জুলাই) এনটিভি অনলাইনকে এন্ড্রু কিশোরের পরিবারের ঘনিষ্ঠজন মোমিন বিশ্বাস বলেন, ‘মৃত্যুর খবর শুনে দাদার ছেলেমেয়ে দেশে ফেরার চেষ্টা করছে, বিষয়টি এমন নয়। দাদার শরীর খারাপের দিকে যাওয়ার পর থেকে তারা দেশে ফেরার চেষ্টা করছে। গত রোববার রাতে জে এন্ড্রু সপ্তক মেলবোর্ন থেকে দেশে ফেরার কথা ছিল। তবে উড়াল-সময়ের কিছুক্ষণ আগে ফ্লাইট ক্যানসেল হয়। যে কারণে তার আর দেশে ফেরা হয়নি। দুর্ভাগ্য, জীবিতাবস্থায় বাবার সঙ্গে দেখা হলো না ছেলের।’
মোমিন বিশ্বাস আরো বলেন, ‘করোনার কারণে এখন অনেক ফ্লাইটই বন্ধ। আবার যাত্রী কম হওয়ায় যখন-তখন ক্যানসেল করা হচ্ছে ফ্লাইট। ৯ জুলাই আবারও দেশে ফেরার জন্য টিকেট কেটেছে সপ্তক। আর মেয়ে এখনো টিকেট পায়নি। ৯ তারিখ প্লেনে ওঠার পর নিশ্চিত হব ছেলে দেশে ফিরছে কি না। এর আগে নিশ্চিত করে কিছুই বলা যাচ্ছে না।’
এন্ড্রু কিশোরের মরদেহ হিমঘরে রয়েছে জানিয়ে মোমিন বলেন, ‘দাদাকে গত রাতেই গোসল করিয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয়েছে। সমাহিত করার আগ পর্যন্ত সেখানেই রাখা হবে দাদাকে।’
এর আগে মোমিন বিশ্বাস এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আসলে ছেলেমেয়ে দেশে ফেরার আগে দাদাকে সমাহিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া যাচ্ছে না। আমরা প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আগামী ১৫ জুলাই সমাহিত করার। তবে পুরো বিষয়টি দাদার ছেলেমেয়ের ওপর নির্ভর করছে। কোনো কারণে তাদের দেশে আসতে দেরি হলে, সে ক্ষেত্রে তারিখ পরিবর্তন করা হবে।’
বাংলা গানের কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী এন্ড্রু কিশোরের মৃত্যুতে সংগীতাঙ্গনে শোকাবহ বিরাজ করছে। দীর্ঘদিন ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করে সোমবার সন্ধ্যায় হার মানেন বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের প্লেব্যাক সম্রাট। তাঁর মৃত্যুতে বিভিন্ন অঙ্গনের তারকা থেকে শুরু করে শোক জানিয়েছেন সর্বস্তরের মানুষ।
বরেণ্য কণ্ঠশিল্পী এন্ড্রু কিশোরের শেষ ইচ্ছে ছিল, মায়ের পাশে যেন তাঁকে সমাধিস্থ করা হয়। তাঁর সেই ইচ্ছে অনুযায়ী মায়ের পাশে সমাহিত করা হবে বলে এর আগে এনটিভি অনলাইনকে জানিয়েছেন প্রয়াতের ভগ্নিপতি ডা. প্যাট্রিক বিপুল বিশ্বাস।