জানাজা হবে না, দাফনে থাকবে না স্বজন, ভয়ে ঘরবন্দি মাহী
করোনাভাইরাসের সঙ্গে লড়ছে সারা বিশ্ব। বাংলাদেশের মানুষও ঘরবন্দি। সবার মতোই নিজের ঘরে বন্দি জীবন পার করছেন দেশের জনপ্রিয় নায়িকা মাহিয়া মাহী। একদমই বাসা থেকে বের হচ্ছেন না তিনি। এমনকি বাসার দরজা-জানালাও বন্ধ রাখছেন।
ভাবছেন, করোনাভাইরাসের আতঙ্কে এতটাই ভয় পেয়েছেন মাহী? বিষয়টি আসলে তার চেয়েও জটিল। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে জানাজা হবে না, এমনকি দাফনেও থাকবে না স্বজনরা। শেষবারের মতো প্রিয় মানুষটিকে জড়িয়ে ধরতে পারবেন না। এটা মেনে নিতে পারছেন না মাহী।
এ বিষয়ে সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কথা বলেন মাহী। নিজের ফেসবুকে এক ভিডিও বার্তায় মাহী বলেন, ‘পাঁচ দিন আগে আমি একটি নিউজ দেখেছি। নিউজটা হচ্ছে, একজন মানুষ মারা গেছে, সে মানুষটিকে তার আত্মীয়-স্বজন কেউ দেখতে পাননি এবং মৃত ব্যক্তিকে দুজন লোক গিয়ে দাফন করেছেন। সেদিন থেকেই আমার মধ্যে উপলব্ধি হয়েছে। আমার ভয় হয়েছে।’
মাহী আরো বলেন, ‘আমরা কি মুসলমান হিসেবে চিন্তা করতে পারি যে, আমাদের জানাজায় আমাদের আত্মীয়-স্বজন আসতে পারবে না? কোনো মুসল্লি জানাজা পড়তে পারবেন না? আমরা কি চিন্তা করতে পারি, আমাদের মা-বাবা মারা যাবেন, তাঁদের শেষবারের মতো দেখতে পারব না, তাদের একটাবার জড়িয়ে ধরতে পারব না? সেটা কি আমরা কখনো চিন্তা করতে পেরেছি? পারিনি। কিন্তু সেটিই এখন হচ্ছে।’
মা-বাবাকে নিয়ে মাহী বলেন, ‘যদি করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান, তাহলে মা-বাবার চেহারা দেখা যাবে না। বিষয়টি জানার পর থেকে আমার ভেতর ভয় ঢুকে গেছে। আমার মনে হয়েছে, আমার বাবা-মা যদি মারা যান, তাহলে আমি তাদের চেহারা দেখতে পাব না? আমি যদি বাইরে বের হই, আমি যদি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হই, আমার মা-বাবা কিন্তু আমাকে ছেড়ে চলে যাবেন না। এতে আমার মা-বাবাকেও ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেওয়া হবে।’
ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ রাখেন জানিয়ে মাহী বলেন, ‘এ উপলব্ধি যখন থেকে হয়েছে, তখন থেকেই আমি নিজেকে লকডাউন করে ফেলেছি। একদমই ঘর থেকে বের হই না। পারলে আমি দরজা-জানালাও বন্ধ করে রাখি। যদিও করোনা আকাশ-বাতাস থেকে ছড়ায় না। তবুও আমার মনে হয়, করোনা বোধ হয় দরজা-জানালা দিয়ে চলে আসবে।’
তবে এর আগে মাহি বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিয়েছেন জানিয়ে মাহী বলেন, ‘এর আগে কিন্তু বন্ধুদের সঙ্গে রেস্টুরেন্টে আড্ডা দিয়েছি। সিনেমা নিয়ে মিটিং করেছি। আমার মনে হয়, সবাইকে এখন নিজের মতো ঘরে সময় কাটনো উচিত।’
বৈশ্বিক মহামারিরূপে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের মধ্যেও বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা নেই বলে মনে করেন এ চিত্রনায়িকা।
এ বিষয়ে মাহী বলেন, ‘পরশুদিনও বাসার নিচে দেখলাম, দোকানে বসে দেদারসে লোকজন খাচ্ছে, আড্ডা দিচ্ছে। আমরা আসলে এখনো ভয় পাইনি। আমার মনে হয়, সবারই একটু ভয় পাওয়া উচিত।’
এ সময় সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলার পাশাপাশি নিয়মিত হাত ধোয়ার পরামর্শ দিয়ে মাহী বলেন, ‘বাসা থেকে বের হবেন না। নিজের বাসায় সাবধানে থাকুন। করোনা মোকাবিলায় আমাদের প্রধানমন্ত্রীও অনেক প্রস্তুতি নিয়েছেন। সবাই মিলে সচেতন না হলে তিনি একা কিছু করতে পারবেন না। আমরা সবাই সচেতন হব।’
মাহিয়া মাহী ২০১২ সালে জাজ মাল্টিমিডিয়া প্রযোজিত ‘ভালোবাসার রঙ’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে অভিনয়জীবন শুরু করেন। পরের বছর তাঁর অভিনীত পরপর তিনটি চলচ্চিত্র সাফল্যের মুখ দেখে এবং তিনি অভিনেত্রী হিসেবে নিজের অবস্থান তৈরি করেন। বর্তমানে বাংলাদেশের সর্বাধিক পারিশ্রমিকপ্রাপ্ত অভিনেত্রী মাহী। ২০১৯ সালে মাহীকে নিয়ে বই প্রকাশ করেন তাঁর ভক্তরা। বইটির নাম 'মাহী দ্য প্রিন্সেস'।