এই গল্প অভিনেতার নয়, মানবিক শাহীন আলমের
দেড় শতাধিক ঢাকাই সিনেমার অভিনেতা শাহীন আলমকে সিনেমাপ্রেমী প্রায় সবাই চেনেন। কিন্তু এই পরিচয়ের বাইরে মানবিক আরও এক শাহীন আলমের গল্প জানা গেল তাঁর মৃত্যুর পর।
রাজধানীর আজগর আলী হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় গতকাল সোমবার রাত ১০টা ৫ মিনিটে শাহীন আলমের মৃত্যু হয়। এরপর তাঁকে স্মরণ করে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন কাজী মুশফিকুর রহমান। যিনি ছাত্র থাকাকালীন শাহীন আলমের ছেলের গৃহশিক্ষক ছিলেন।
স্ট্যাটাসে কাজী মুশফিকুর রহমান লিখেছেন, ‘সেই বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শেষ দিকের কথা, আমার পড়াশোনার খরচ জোগানো বাবার পক্ষে খুব কষ্ট হয়ে যাচ্ছিলো… তখন শাহীন আলম সাহেবের ছেলেকে পড়িয়ে নিজের খরচ চালাতাম। মগবাজারে ওনার বাসা ছিলো। তারপর চলে গেলেন নিকেতনের ঝকমকে ফ্ল্যাটে, আমি পরলাম মহাফাঁপরে। সেই জাহাঙ্গীরনগর থেকে আসতাম দুপুরের বাসে, আসাদগেট নেমে গুলশান-১ ট্যাম্পুতে তারপর হেঁটে নিকেতন... এখনকার মতো নিকেতন নয়, সবে শুরু হয়েছে বাড়ি ওঠা। সে গল্প থাক আত্মজীবনীর জন্য।’
গল্পে মুশফিকুর আরও লিখেছেন, ‘যখন বাচ্চাটাকে পড়িয়েছি বেশীরভাগ দিনই দুপুরের ভাত খাওয়াটা হতো না, সেই জাহাঙ্গীরনগরে ২.৩০ এর বাস ধরতে ছুটতে হতো। সেই জাহাঙ্গীরনগর টু নিকেতন। কাঁচা রাস্তা। মহাখালী ফ্লাইওভারের কাজ চলে... সে এক তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ। পড়ানো শেষ করে ফিরতে হতো রাতে... যাক সে আলাপও থাক। একদিন শাহীন আলম সাহেব এর মা এসে দেখলেন চায়ের সাথে দেয়া গোটা কয়েক বিস্কুট এক নিমিষেই খেয়ে ফেলেছি, চরম ক্লান্ত ও ক্ষুধার্ত আমার সেদিকে কোন খেয়াল ছিলো না। পরদিন থেকে হঠাৎ রকমারি নাস্তা আসতো। রাক্ষুসে খিদেটা মিটতো। একদিন কালো স্যুট পরা শাহীন আলম সাহেব আমাকে রাতে নিকেতনের কাঁদাপানিতে ফিরতে দেখেন, আমি হন্তদন্ত হয়ে ৮টার বাস টার্গেট করে জোর কদমে হাঁটছি বলা ভুল হবে, দৌড়োচ্ছি... পরেরদিন ছেলের পড়া দেখতে আসবার ছলে অবজারভ করেন আমি সমুচা-রোল যা দেয় তা ঝাঁপিয়ে পরে খাই। পড়ানোর চেয়ে খাওয়ায় আমার আগ্রহ। কোন কথা না বলে অন্য রুমে চলে যান।’
মানবিক শাহীন আলমের গল্প কাজী মুশফিকুর রহমান শেষ করেছেন এভাবে, ‘তারপর থেকে মাস্টার্স দেয়া অবধি যতদিন ফাহিম সম্ভবত ছেলেটার নাম, পড়িয়েছি আমার জন্য বাহারি তরকারি দিয়ে ভাত আসতো নাস্তা হিসেবে। রাতে ওনার চকচকে গাড়িটা বেশিরভাগ দিনই আসাদ গেট নামিয়ে দিয়ে যেত বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮টার বাস ধরতে। বেতনও বাড়িয়ে দিলেন না চাইতেই! এমন অসীম মমতাবান একজন মানুষকে আপনারা চিনেন একজন অভিনেতা হিসেবে, অশ্লীল ছবিও করেছেন তিনি... আপনাদের হিসেবে। আর আমি চিনি একজন অভুক্ত মানুষকে পরম মমতার ছায়ায় আশ্রয়দাতা হিসেবে। আপনাদের হিসেবে কুলোবে না। শাহীন আলম আল্লাহতালা আপনাকে অনেক অনেক শান্তিতে রাখুক। আমিন।’
মঞ্চ নাটকের মাধ্যমে অভিনয় শুরু করেন শাহীন আলম। ১৯৮৬ সালে এফডিসির ‘নতুন মুখের সন্ধানে’-এর মাধ্যমে চলচ্চিত্রে অভিনয় করার সুযোগ পান তিনি। তাঁর প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র ‘মায়ের কান্না’, এটি ১৯৯১ সালে মুক্তি পেয়েছিল।