সন্ধ্যায় সৌমিত্রের শেষকৃত্য, শ্রদ্ধা রবীন্দ্রসদনে
৪১ দিনের হাসপাতাল-যাত্রা শেষ করে কলকাতার গলফগ্রিনের বাড়িতে শেষবার ফিরেছিলেন বর্ষীয়ান অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। তবে এই ফেরা ক্ষণিকের, যেন শেষবার তাঁর দীর্ঘদিনের পরিচিত স্থানকে জানিয়ে দেওয়া এই বাসভবনে আর দেখা যাবে না ফেলুদাকে।
এরপর বাংলা সিনেমার অপুকে নেওয়া হয়েছে তাঁর কাজের স্থান টেকনিশিয়ান স্টুডিওতে। সেখান থেকে ভারতীয় সময় সাড়ে ৩টায় তাঁকে নেওয়া হয়েছে রবীন্দ্রসদনে। সেখানে শেষবার শিল্পী-কুশলী-স্বজন শ্রদ্ধা জানাতে পারবেন এ অভিনেতাকে।
কলকাতার একাধিক গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, আজ সন্ধ্যা ৬টা ১৫ মিনিট থেকে সাড়ে ৬টার মধ্যে কেওড়াতলা মহাশ্মশানে রাজ্য সরকারের সম্মাননার পর শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে সৌমিত্রের।
এর আগে ভারতীয় সময় দুপুর ১টায় কলকাতার বেলভিউ নার্সিংহোমে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে দেখতে যান পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। এ ছাড়া কলকাতার সিনেমায় অভিনয় করা একধিক তারকা তাঁকে দেখতে গিয়েছিলেন।
আজ ভারতীয় সময় দুপুর ১২টা ১৫ মিনিটে কলকাতার বেলভিউ নার্সিংহোমে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন এই কিংবদন্তি অভিনেতা। গত ৬ অক্টোবর করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। এরপর চিকিৎসকেরা জানিয়েছিলেন, এই অভিনেতা করোনার সঙ্গে একাধিক রোগে ভুগছিলেন।
১৯৩৫ সালে জন্মগ্রহণ করা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ১৯৫৯ সালে অস্কারজয়ী পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের ‘অপুর সংসার’ সিনেমার মাধ্যমে অভিনয়জগতে পা রাখেন। এরপর তিনি সত্যজিৎ রায়ের ৩৪টি সিনেমার ১৪টিতে অভিনয় করেছেন। তাঁর অভিনীত চরিত্রগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ‘ফেলুদা’। তিনি সত্যজিৎ রায়ের পরিচালনায় ‘সোনার কেল্লা’ এবং ‘জয় বাবা ফেলুনাথ’ সিনেমায় ফেলুদার ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। পরে তিনি মৃণাল সেন, তপন সিংহ, অজয় করের মতো জনপ্রিয় পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করেছেন।
শুধু সিনেমা নয়, অসংখ্য নাটক, যাত্রা এবং টিভি ধারাবাহিকে অভিনয় করেছেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। আবৃত্তিশিল্পী হিসেবেও তাঁর নাম অত্যন্ত সম্ভ্রমের সঙ্গে উচ্চারিত হয়। তিনি কবি ও অনুবাদক।
ভারত সরকার কর্তৃক সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ২০০৪ সালে ‘পদ্মভূষণ’ ও ২০১২ সালে ‘দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার’ লাভ করেন। এ ছাড়া ২০১৭ সালে তিনি ফ্রান্স সরকার কর্তৃক ‘লিজিওন অব অনার’ লাভ করেন। একই বছর পশ্চিমবঙ্গ সরকার কর্তৃক ‘বঙ্গবিভূষণ’ পুরস্কার অর্জন করেন। যদিও ২০১৩ সালে এই পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেছিলেন বর্ষীয়ান এ অভিনেতা।