যক্ষ্মায় আক্রান্ত ফারুক, দ্রুত ফিরছেন না দেশে
যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়েছেন চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি অভিনেতা ও ঢাকা-১৭ আসনের সংসদ সদস্য আকবর হোসেন পাঠান ওরফে চিত্রনায়ক ফারুক। বর্তমানে তিনি সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। গতকাল তাঁর ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিন শেষ হয়েছে। এক মাসের মধ্যে তাঁর দেশে ফেরার সম্ভাবনা নেই বলে এনটিভি অনলাইনকে জানিয়েছেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান।
বেশ কিছুদিন ধরে ঠাণ্ডা-জ্বরে ভুগছিলেন চিত্রনায়ক ফারুক। গত ১৮ আগস্ট রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। কিছুটা সুস্থবোধ করলে ২৬ আগস্ট হাসপাতাল ত্যাগ করেন। ফের অসুস্থ হলে ২৯ আগস্ট তাঁকে একই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত ১৩ সেপ্টেম্বর উন্নত চিকিৎসার জন্য তিনি সিঙ্গাপুরে যান।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে এনটিভি অনলাইনকে জায়েদ খান বলেন, ‘ফারুক ভাইয়ের টিবি (যক্ষ্মা) রোগ ধরা পড়েছে। চিকিৎসা শুরু হয়েছে। ডাক্তার বলেছেন, আগামী চার সপ্তাহ পর বোঝা যাবে রোগটি কোন দিকে যাচ্ছে। তবে ভয়ের কোনো কারণ নেই বলেও তিনি জানিয়েছেন।’
আগামী এক সপ্তাহ মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে থাকবেন নায়ক ফারুক। তারপর বাসায় থেকে বাকি চিকিৎসা চালাবেন। চার সপ্তাহ পর জানা যাবে, তিনি কবে দেশে ফিরবেন। সবার কাছে দোয়া চেয়ে জায়েদ খান বলেন, ‘সবাই দোয়া করবেন, ভাইয়া যেন সুস্থ হয়ে দ্রুত আমাদের মাঝে ফিরে আসেন।’
নায়ক ফারুক একাধারে চলচ্চিত্র অভিনেতা, প্রযোজক ও ব্যবসায়ী। ফারুক ১৯৭১ সালে এইচ আকবর পরিচালিত ‘জলছবি’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে বাংলা চলচ্চিত্রে যাত্রা শুরু করেন। প্রথম ছবিতে তিনি কবরীর সঙ্গে জুটি বাঁধেন। এরপর তিনি ১৯৭৩ সালে খান আতাউর রহমান পরিচালিত মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র ‘আবার তোরা মানুষ হ’, ১৯৭৪ সালে নারায়ণ ঘোষ মিতা পরিচালিত ‘আলোর মিছিল’-এ পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয় করেন। ১৯৭৫ সালে গ্রামীণ পটভূমিতে নির্মিত ‘সুজন সখী’ ও ‘লাঠিয়াল’ নামের দুটি ব্যবসাসফল ও আলোচিত চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন এবং সে বছর ‘লাঠিয়াল’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য সেরা অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।
১৯৭৬ সালে মুক্তি পায় ফারুক অভিনীত তিনটি ছায়াছবি ‘সূর্যগ্রহণ’, ‘মাটির মায়া’ ও ‘নয়নমণি’। চলচ্চিত্র তিনটি বিভিন্ন বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পায়। পরের বছর শহীদুল্লাহ কায়সার রচিত কালজয়ী উপন্যাস ‘সারেং বৌ’ অবলম্বনে নির্মিত ‘সারেং বৌ’ ও আমজাদ হোসেন পরিচালিত ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। চলচ্চিত্র দুটি নারীকেন্দ্রিক হলেও তাঁর অভিনয় প্রশংসিত হয়।
১৯৭৯ সালে ফারুক অভিনীত ‘নাগরদোলা’, ‘দিন যায় কথা থাকে’, ‘কথা দিলাম’, ‘মাটির পুতুল’, ‘সাহেব’, ‘ছোট মা’, ‘এতিম’, ‘ঘরজামাই’ চলচ্চিত্রগুলো ব্যবসাসফল হয়। ১৯৮০ সালে ‘সখী তুমি কার’ ছায়াছবিতে শাবানার বিপরীতে শহুরে ধনী যুবকের চরিত্রে অভিনয় করে সমালোচকদের প্রশংসা পান। ১৯৮৭ সালে ‘মিয়াভাই’ চলচ্চিত্রের সাফল্যের পর তিনি চলচ্চিত্রাঙ্গনে মিয়াভাই হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। চলচ্চিত্রে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১৬ সালে তিনি আজীবন সম্মাননা পান।