মানবসেবায় সব বিলিয়ে মাকে নিয়ে এক রুমে থাকতেন নানা!
অনেকে ভাবেন প্রাচুর্যের মাঝেই সুখ রয়েছে। কিন্তু কেউ কেউ কিছুটা ব্যতিক্রম। তাঁদের মতে, মনের প্রশান্তিতেই দেখা মেলে সুখের। আর সেই প্রশান্তি পেতে কেউ সন্ন্যাস জীবন বেছে নেন, নিজেকে মানবসেবায় বিলিয়ে দিতে দেখা যায় অনেককে। কিন্তু তাই বলে সম্পদের প্রায় সবটুকু অসহায়দের দিয়ে দেন কেউ! দেন, সঙ্গে যদি ‘মা’ থাকেন। মায়ের প্রতি প্রগাঢ় ভালোবাসার তেমনই অনন্য নজির স্থাপন করেন বলিউডের খ্যাতনামা অভিনেতা নানা পাটেকার।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে জানা যায়, ভীষণ সাধারণ জীবনযাপন করেন শক্তিমান অভিনেতা নানা পাটেকার। বিলাসিতার প্রতি কোনো মোহ নেই তাঁর। এরই মধ্যে উপার্জনের ৯০ শতাংশ গরিব-দুস্থদের মাঝে বিলিয়ে দিয়েছেন তিনি। আর তাঁর এই উদার মনোভাবের জন্য সবার কাছে তিনি প্রিয়মুখ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৫১ সালে ভারতের মহারাষ্ট্রের রায়গড়ে জন্মগ্রহণ করেন নানা পাটেকার। বাবা গজানন পাটেকার কাপড়ের ব্যবসায়ী ছিলেন। মা নির্মলা পাটেকার ছিলেন গৃহিণী । নানা পাটেকারের আসল নাম বিশ্বনাথ পাটেকার। শৈশবে ভীষণ অর্থকষ্টের মুখোমুখি হতে হয় নানাকে। অভিনয়ের প্রতি ব্যাপক আগ্রহ থাকলেও পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থার কথা ভেবে তা কখনো জানাননি তিনি। বরং মাত্র ১৩ বছর বয়সে পড়াশোনার পাশাপাশি অর্থ উপার্জনে মনোযোগ দেন।
শৈশবে খুব দুষ্টু ছিলেন নানা। তাঁর দস্যিপনায় অতিষ্ঠ হয়ে মা নির্মলা তাঁকে মাসির বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে বেশি দিন থাকা হয়নি তাঁর। মাসি তাঁকে দ্রুতই বাড়িতে ফেরত দিয়ে যান। নানার সম্পর্কে অভিযোগ জানাতেও ভুল করেননি তিনি। নানা ওই বাড়ির বাচ্চাদের কুবুদ্ধি দিতেন, এমনটিই অভিযোগ ছিল মাসির।
কলেজে পড়ার সময়ে বিভিন্ন নাটকে অংশগ্রহণ করতেন নানা। এর পর কিছু বিজ্ঞাপনী সংস্থায় কাজ করেন। ২৭ বছর বয়সে কলেজের সহপাঠী নীলকান্তি পাটেকারের সঙ্গে সাতপাকে বাঁধা পড়েন।
তবে বছর ঘুরতেই নানা পাটেকারের বাবার মৃত্যু হয়। এ সময় নিজের প্রথম সন্তানকেও হারান।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, কয়েক বছর ধরে স্ত্রীর কাছ থেকে আলাদা থাকছেন নানা। মাকে নিয়ে মুম্বাইয়ের ৭৫০ বর্গফুটের এক কক্ষবিশিষ্ট ফ্ল্যাটে বসবাস ছিল তাঁর। সেখানে খুব সাধারণ জীবনযাপন করতেন নন্দিত এই অভিনেতা।
১৯৭৮ সালে ‘গমন’ ছবির মাধ্যমে বলিউডে অভিষেক হয় নানার। প্রথম ছবিতে তাঁর অভিনয় ব্যাপক প্রশংসিত হয়। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। একের পর এক দর্শকপ্রিয় ছবি উপহার দিয়ে নিজের নামের পাশে জুড়ে নেন কিংবদন্তি অভিনেতার খেতাব। পেয়েছেন সম্মানজনক পদ্মশ্রী পুরস্কারসহ অসংখ্য স্বীকৃতি।
আর আজ পর্যন্ত অর্জিত অর্থের ৯০ শতাংশ তিনি দান করেছেন মানবসেবায়। অনেক সময় একটি ছবির প্রাপ্য পুরো অর্থ কোনো একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার হাতে তুলে দিয়েছেন। ‘নানা ফাউন্ডেশন’ নামে একটি সংস্থা গড়ে তুলেছেন। সম্প্রতি বন্যাকবলিত মহারাষ্ট্রের জনসাধারণের জন্য ৫০০টি ঘর তৈরি করার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। শিগগিরই এর কাজ শুরু হবে। আর এসব মহতী কর্মকাণ্ড মনকে শান্ত ও সংযত রাখে বলে জানান নানা পাটেকার।
এ বছরের ২৯ জানুয়ারি ৯৯ বছর বয়সে মারা যান নানার মা নির্মলা পাটেকার। শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে শোকে ভেঙে পড়তে দেখা যায় অশ্রুসজল এই অভিনেতাকে।