পর্দা উঠল ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ফোক ফেস্টের
বাংলাদেশের নৃত্যশিল্পী সামিনা হোসেন প্রেমা ও তাঁর নৃত্যদল ‘ভাবনা’র শিল্পীদের নাচের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে তিন দিনব্যাপী ‘ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ফোক ফেস্ট ২০১৯’। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় রাজধানীর আর্মি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠানটির পর্দা ওঠে।
এদিন মঞ্চে লোকসংগীতের পরিবেশনা নিয়ে আসে গানের দল জর্জিয়ার ‘শেভেনেবুরেবি’। মঞ্চে হাজির হয়ে এই দলের প্রধান বাংলায় কথা বলে চমকে দিলেন দর্শককে। বললেন, ‘স্বাগতম ঢাকা। তোমরা কেমন আছো? আমরা তোমাদের ভালোবাসি।’ এর পর গান গাইতে শুরু করেন তাঁরা। গানের কথা না বুঝলেও তাঁদের গানের সুরের মাধুরীতে ভেসেছেন দর্শক।
রাত ৯টায় শুরু হয় ফোক ফেস্টের উদ্বোধন অনুষ্ঠান। শুরুতেই বাংলাদেশের সংগীতাঙ্গনের সদ্যপ্রয়াত সংগীতশিল্পী সুবীর নন্দী, বারী সিদ্দিকী, আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল ও আইয়ুব বাচ্চুর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে একটি তথ্যচিত্র দেখানো হয়।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন আয়োজক সান ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান অঞ্জন চৌধুরী। এর পর তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ আনুষ্ঠানিকভাবে লোকসংগীত উৎসব উদ্বোধন করেন।
তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আমি না এলে জানতেই পারতাম না এত বড় আয়োজন হচ্ছে এখানে। শুরুতেই আয়োজকদের ধন্যবাদ জানাই। যাঁরা সংগীত চর্চা করেন, তাঁরা পরিশীলিত মনের মানুষ। সংগীত চর্চাকারীরা কখনো বিপথগামী হয় না।’
উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতার পর মঞ্চে আসেন বাংলাদেশের বাউলশিল্পী শাহ আলম সরকার। বাংলা গান যাঁরা শোনেন, তাঁরা সবাই শাহ আলম সরকারকে চেনেন। বাংলাদেশের লোকসংগীতের জনপ্রিয় মুখ তিনি। প্রথমেই অসাম্প্রদায়িক বাংলার বার্তা ছড়ান গানে গানে। গেয়ে উঠলেন ‘কী দরকার হিন্দু-মুসলমান’। এরপর গাইলেন ‘বিয়ে করা মানে জ্যান্ত প্রাণে মরা’, ‘এত যে নিঠুর বন্ধু জানা ছিল না’, ‘পিরিত যতন পিরিত যতন’, ‘আমি তো মরে যাব, চলে যাব, রেখে যাব সবই’।
একের পর এক গান গেয়ে দর্শক হৃদয়ে ঝড় তোলেন তিনি। ‘আমি তো মরে যাব, চলে যাব রেখে যাব সবই’ গানটির মধ্য দিয়ে নিজের পরিবেশনা শেষ করেন শাহ আলম সরকার।
অনেক প্রতীক্ষার পরে পাগড়ি ও দীর্ঘ আলখাল্লা পরে মঞ্চে হাজির হন ভারতীয় পপব্যক্তিত্ব দালের মেহেন্দি। ফোক ফেস্টের প্রথম দিনের চমক ছিলেন তিনি। তাঁকে দেখেই উচ্ছ্বসিত দর্শক। মঞ্চে এসে বললেন, ‘কেমন আছো বাংলাদেশ?’ এরপর গান ধরলেন। শুরুতেই ‘বাহুবলি : দ্য বিগিনিং’ চলচ্চিত্রের টাইটেল গান ‘বাহুবলি’ গেয়ে শোনান। গান ধরার সঙ্গে মনে হলো আর্মি স্টোডিয়ামে ঝড় বইছে। তাঁর গানের সঙ্গে টালমাটাল হয়ে দর্শক নাচছে। একে একে গেয়ে শোনান ‘বলো তা না রা রা’, ‘হ্যায়ো রাব্বা হ্যায়ো রাব্বা’, ‘ম্যায় রাব রাব কারদি’, ‘সারি দিল দে দি কুড়িয়া’, ‘ও গোরি নাচেগি’, ‘গোরি নাল ইশক মিঠা’, ‘হোগায়ে তো বাল্লে বাল্লে’সহ তাঁর জনপ্রিয় সব গান। শেষে বাংলাদেশের গায়িকা রুনা লায়লার প্রশংসা করেন। গেয়ে শোনান ‘দমাদম মাস্ত কালান্দার’ গানটি। সেইসঙ্গে বলিউড চলচ্চিত্রগুলোর জনপ্রিয় বেশ কিছু গান শোনান। দালের মেহেন্দির গানে নেচেছে স্টেডিয়ামভরা দর্শক। দালের মেহেন্দী হলেন একজন ভারতীয় কণ্ঠশিল্পী, সুরকার, গীতিকার, লেখক, প্রযোজক, সম্পাদক এবং পরিবেশবিদ। তাঁর মূল নাম দালের সিং। ভাংড়া সংগীতকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে কাজ করে চলেছেন তিনি। চলচ্চিত্রেও উপহার দিয়েছেন অনেক সুপারহিট গান। এর পরিবেশনার মধ্য দিয়ে প্রথম দিনের ফোক ফেস্ট শেষ হয়।
প্রতিদিন সন্ধ্যা ৬টা থেকে শুরু হয়ে উৎসব চলবে রাত ১২টা পর্যন্ত। বাংলাদেশসহ ছয় দেশের দুই শতাধিক শিল্পী অংশ নিচ্ছেন এবারের উৎসবে। ২০১৫ সাল থেকে প্রতিবছর অনুষ্ঠিত হচ্ছে ‘ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ফোক ফেস্ট’। শনিবার শেষ হবে এবারের উৎসব।