‘দোয়া করিস বন্ধু, কষ্টটা যেন কম হয়’
বরেণ্য সংগীতশিল্পী এন্ড্রু কিশোর আর নেই। আজ সোমবার সন্ধ্যা ৬টা ৫৫ মিনিটে বাংলা চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় এই কণ্ঠশিল্পী রাজশাহী মহানগরীর মহিষবাথান এলাকায় বোনের বাসায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৫ বছর।
এন্ড্রু কিশোরের মৃত্যুতে দেশের সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে শোকাবহ বিরাজ করছে। কত গান মানুষের হৃদয়ে গেঁথে আছে। তাঁর সঙ্গে কাটানো দারুণ সব স্মৃতি ভাগাভাগি করছেন অনেকে। কষ্টের স্মৃতিও। প্রিয় বন্ধুর মৃত্যুতে শোকে কাতর বিশিষ্ট টিভি ব্যক্তিত্ব হানিফ সংকেত। নিজ হাতে প্রিয় বন্ধুর মৃত্যুর কথা লিখতে হবে, এমনটা কখনো ভাবতে পারেননি তিনি। কিন্তু মৃত্যু অমোঘ সত্য, এ মানতেই হচ্ছে!
নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক ওয়ালে এন্ড্রু কিশোরের সঙ্গে তোলা একটি সজীব ছবি শেয়ার করে হানিফ সংকেত লিখেছেন, “‘এন্ড্রু কিশোর আর নেই’, প্রিয় বন্ধুর মৃত্যু সংবাদটি নিজের হাতে এত তাড়াতাড়ি লিখতে হবে কখনো কল্পনাও করিনি। এই মুহূর্তে কানে বাজছে রাজশাহী থেকে বলা কিশোরের শেষ কথাগুলো, ‘দোয়া করিস বন্ধু, কষ্টটা যেনো কম হয়, আর হয়তো কথা বলতে পারবো না’। এর পরই খুব দ্রুত শরীর খারাপ হতে থাকে কিশোরের। আর আমারও যোগাযোগ বেড়ে যায় রাজশাহীতে তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে। অবশেষে সবাইকে কাঁদিয়ে আজ সন্ধ্যায় এই পৃথিবী থেকে বিদায় নেয় এন্ড্রু কিশোর-বাংলা গানের ঐশ্বর্য, যার খ্যাতির চাইতে কণ্ঠের দ্যুতিই ছিলো বেশি। যার মৃত্যুতে সংগীতাঙ্গনের অনেক বড় ক্ষতি হয়ে গেলো। অনেক কষ্ট পেয়েছি বন্ধু, এতো তাড়াতাড়ি চলে যাবি ভাবিনি-কিশোরের আত্মার শান্তি কামনা করছি।”
দুদিন ধরেই এন্ড্রু কিশোরের অবস্থা ভালো যাচ্ছিল না। আজ সকাল থেকে অবস্থার আরো অবনতি হয়। তিনি কথা বলতে পারছিলেন না। ফলে তাঁকে অক্সিজেন দিয়ে রাখা হয়েছিল।
১৯৫৫ সালে এন্ড্রু কিশোরের জন্ম রাজশাহীতে। সেখানেই কেটেছে তাঁর শৈশব ও কৈশোর। এন্ড্রু কিশোর প্রাথমিকভাবে সংগীতের পাঠ শুরু করেন রাজশাহীর আবদুল আজিজ বাচ্চুর কাছে। একসময় গানের নেশায় রাজধানীতে ছুটে আসেন। মুক্তিযুদ্ধের পর তিনি রবীন্দ্রসংগীত, নজরুলসংগীত, আধুনিক গান, লোকগান ও দেশাত্মবোধক গানে রেডিওর তালিকাভুক্ত শিল্পী হন।
বাংলা গানের কিংবদন্তি এই সংগীতশিল্পী ‘প্লেব্যাক সম্রাট’ হিসেবেও পরিচিত। বাংলা চলচ্চিত্রের গানে তাঁকে বলা যেতে পারে এক মহাসমুদ্র। কয়েক দশক ধরে সেই সমুদ্রে সাঁতার কেটে চলেছেন শ্রোতারা। ‘জীবনের গল্প আছে বাকি অল্প’, ‘হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস’, ‘ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে’, ‘আমার সারা দেহ খেয়ো গো মাটি’, ‘আমার বুকের মধ্যখানে’, ‘পৃথিবীর যত সুখ আমি তোমারই ছোঁয়াতে খুঁজে পেয়েছি’, ‘সবাই তো ভালোবাসা চায়’, ‘বেদের মেয়ে জোছনা আমায় কথা দিয়েছে’, ‘তুমি আমার জীবন আমি তোমার জীবন’, ‘ভালো আছি ভালো থেকো’, ‘তুমি মোর জীবনের ভাবনা’, ‘চোখ যে মনের কথা বলে’সহ অসংখ্য শ্রোতাপ্রিয় গান রয়েছে তাঁর।
মৃত্যুকালে এন্ড্রু কিশোর স্ত্রী ও দুই সন্তান রেখে গেছে। প্রথম সন্তানের নাম সংজ্ঞা আর দ্বিতীয় জনের নাম সপ্তক।