দাবি পূরণ না হলে সিনেপ্লেক্স বন্ধের আশঙ্কা
দীর্ঘদিন ধরে মন্দাভাব চলছে চলচ্চিত্রে। একের পর এক বন্ধ হয়েছে সিনেমা হল। এক হাজার ৬০০ থেকে বর্তমানে ৬০টির মতো সিনেমা হল রয়েছে দেশে। তবে করোনার প্রকোপে সিনেমা হল বন্ধ, আগামী দিনে তা খুলবে কি না, তা নিয়ে রয়েছে সংশয়। চলচ্চিত্রপ্রেমীদের একমাত্র ভরসা সিনেপ্লেক্স। এবার সেই সিনেপ্লেক্সও বন্ধ হওয়ার উপক্রম।
দেশের শপিংমল, রেস্টুরেন্ট, অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইট, পর্যটনসহ দেশের অর্থনীতির প্রায় সব খাত যখন সচল, তখন দেশের সিনেমা হল বন্ধ। এতে সিনেমা ব্যবসায়ী ও হলমালিকরা হতাশ। এ অবস্থায় সরকারের সহায়তা না পেলে বন্ধ হয়ে যাবে দেশের জনপ্রিয় সিনেমা থিয়েটার স্টার সিনেপ্লেক্স। গতকাল বুধবার রাতে (১২ আগস্ট) সংবাদ সম্মেলনে এমন আশঙ্কা প্রকাশ করলেন স্টার সিনেপ্লেক্সের চেয়ারম্যান মাহবুব রহমান রুহেল।
গণমাধ্যমে পাঠানো সংবাদমাধ্যমে স্টার সিনেপ্লেক্সের চেয়ারম্যান মাহবুব রহমান রুহেল সরকারের কাছে পাঁচটিসহ মোট সাতটি দাবি তুলে ধরেছেন। যেগুলো পূরণ হলে স্টার সিনেপ্লেক্স এ দেশে সিনেমা থিয়েটারের ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারবে। সেগুলো হলো—
১. নগরবাসীর বিনোদনের জন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে অনতিবিলম্বে সিনেমা হলসমূহ খুলে দেওয়া
২. জরুরি আর্থিক সহায়তা কিংবা প্রণোদনা তহবিল ঘোষণা
৩. সিনেমা হলের টিকেটের ওপর সব ধরনের মূসক ও কর মওকুফের সুযোগ প্রদান
৪. সুদবিহীন ঋণ প্রদানের অনুমোদন
৫. উপমহাদেশীয় ভাষার চলচ্চিত্রসমূহ শর্তহীনভাবে আমদানির অনুমতি প্রদান
এ ছাড়া রুহেল দুটি দাবি উপস্থাপন করেছেন। শপিংমল কর্তৃপক্ষের কাছে রুহেলের দাবি, করোনাকালীন পরিস্থিতে স্টার সিনেপ্লেক্সের প্রতিটি শাখা বিভিন্ন শপিংমলে ভাড়ায় পরিচালিত হয়। করোনাকালে শপিংমল কর্তৃপক্ষের কাছে ভাড়া মওকুফ ও অবস্থা স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত অর্ধেক ভাড়া নেওয়ার অনুরোধ তাঁর।
প্রযোজক সমিতির কাছে রুহেলের অনুরোধ, সেন্সর পাওয়া সিনেমাগুলো মুক্তি দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। শুধু সিনেমা হল খুললেই হবে না, নতুন ছবি মুক্তি না পেলে দর্শক হলে যাবে না বলেও মনে করেন তিনি।
রুহেল বলেন, আধুনিক মাল্টিপ্লেক্স সিনেমা হলগুলো সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার চমৎকার উদাহরণ হতে পারে। নির্ধারিত আসনের জন্য অল্পসংখ্যক লোক টিকিটের বিনিময়ে সিনেমা দেখে। অন্যান্য জনবহুল স্থানের তুলনায় এখানে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে মানুষের বিনোদনের সুযোগ করে দেওয়া সম্ভব বলে আমরা মনে করি। স্টার সিনেপ্লেক্স বরাবরই স্বাস্থ্যকর পরিবেশ এবং পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে সচেতন। এখানকার কর্মীসহ আগত সবার জন্য বাধ্যতামূলক মাস্ক ব্যবহার, হলের আসনগুলো নিয়মিত জীবাণুমুক্তকরণসহ স্বাস্থ্যবিধি রক্ষার সব ধরনের সুব্যবস্থা রয়েছে। লক্ষ্যণীয় যে চীন, জার্মানি রাশিয়া, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, ডেনমার্ক, নরওয়ে, ইতালি, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়াসহ বিশ্বের অনেক দেশেই এরই মধ্যে সিনেমা হল চালু করা হয়েছে। ভারতেও এ মাসে সিনেমা হল খুলে দেওয়ার কথা রয়েছে। তা-ই নয়, সংস্কৃতি ও বিনোদনসংশ্লিষ্ট ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আর্থিক সহায়তাও করছে বিভিন্ন দেশের সরকার। মুভি থিয়েটার ক্ষতিগ্রস্ত খাতগুলোর জন্য দুই ট্রিলিয়ন ডলার আর্থিক সহায়তা বিল পাস করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট। ফ্রান্সের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় পাঁচ বিলিয়ন ইউরো বরাদ্দ দিয়েছে। যুক্তরাজ্য দিয়েছে দুই বিলিয়ন ডলার। এমন অবস্থায় আমাদের দেশেও সিনেমা হল চালু রাখতে সরকারের আন্তরিক সহায়তা জরুরি।
সরকারের কাছে আবেদন জানিয়ে রুহেল আরো বলেন, চলচ্চিত্র শিল্পের মেরুদণ্ড বলা যায় সিনেমা হলকে। হল না বাঁচলে চলচ্চিত্র বাঁচবে না। তাই সরকারের কাছে আমাদের আবেদন, অনতিবিলম্বে দেশের সিনেমা হল খুলে দেওয়া হোক। স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সিনেমা হল পরিচালনায় ব্যয় বেড়ে যাবে, তাই টিকিট থেকে ভ্যাট, ট্যাক্স মওকুফ করা হোক। এ ছাড়া সুদবিহীন ঋণসহ পর্যাপ্ত আর্থিক সহায়তা অত্যন্ত জরুরি।
১৬ বছর ধরে স্টার সিনেপ্লেক্স ব্যবসা করছে। ঢাকার বিভিন্ন লোকেশনে তিনটি শাখায় ১৫টি স্ক্রিনে সিনেমা দেখাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। নতুন করে মিরপুরে চতুর্থ শাখা চালুর প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। এমন অবস্থায় উপরোক্ত দাবি পূরণ না হলে তাদের সব ব্যবসা হুমকির মুখে পড়বে বলে মন্তব্য করেন মাহবুব রহমান রুহেল।