ক্ষমা চেয়েছেন কাজী হায়াৎ, মোসাহেবদের শুধরে নেওয়ার অনুরোধ
চলচ্চিত্রের মেকআপম্যান ও আলোকচিত্রীদের নিয়ে করা একটি মন্তব্য সম্প্রতি আলোচনায় নিয়ে আসে বিশিষ্ট পরিচালক ও প্রযোজক কাজী হায়াৎকে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে কাজী হায়াৎকে মেকআপম্যান ও আলোকচিত্রীদের নায়ক-নায়িকা ও প্রযোজকদের ‘চামচা’ হিসেবে অভিহিত করতে শোনা যায়।
সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে দুই সমিতির সবার কাছে নিজের বক্তব্যের জন্য ক্ষমা চান কাজী হায়াৎ। তবে মেকআপম্যান ও আলোকচিত্রীদের মধ্যে যাঁরা নায়ক-নায়িকা, প্রযোজকদের ‘মোসাহেবি’ করেন; তাঁদের শুধরে নেওয়ারও অনুরোধ করেন এই গুণী নির্মাতা।
ওই অনুষ্ঠানে দুই হাত জোড় করে কাজী হায়াৎ বলেন, ‘আমি কিছুদিন আগে মেকআপম্যান ও আলোকচিত্রীদের নিয়ে একটি বক্তব্য দিয়েছিলাম। যে কারণে এই দুই সমিতির সদস্যরা কষ্ট পেয়েছেন। আমি আপনাদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। আপনারা আমাকে ক্ষমা করে দেবেন। আমি আপনাদের কাছে হাতজোড় করে ক্ষমা চাইছি। তবে আপনাদের কাছে আমার অনুরোধ, আপনাদের মধ্যে যাঁদের এসব সমস্যা রয়েছে, তাঁরা নিজেদের শুধরে নেবেন। এটা আপনাদের প্রতি আমার অনুরোধ।’
এর আগে ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে কাজী হায়াৎকে বলতে শোনা যায়, ‘আমাদের চলচ্চিত্র শিল্পের দুটি বিভাগ, মেকআপম্যান ও স্টিল ফটোগ্রাফি। এদের যাঁরা প্রধান থাকেন, তাঁরা সাধারণত নায়ক-নায়িকা, প্রযোজক, তাঁদের মোসাহেবি করেন। বাংলা কথায় যাকে বলে চামচামি।’
এখানেই শেষ নয়। মেকআপম্যান-ফটোগ্রাফারদের ব্যক্তিত্ব নিয়েও প্রশ্ন তোলেন জাঁদরেল এই নির্মাতা। তিনি বলেন, ‘এর জন্য অনেকেই আমার ওপর রাগ করতে পারেন। তাঁদের তো বিবেক আছে, ব্যক্তিত্ব আছে, তাঁদের ব্যক্তিত্বে আঘাত লাগে না, যখন তাঁরা মোসাহেবি করেন, চামচামি করেন?’
এসব কথা বলার আর কেউ নেই, এমনটি দাবি করে কাজী হায়াৎ আরো বলেন, “আমার ওপর রাগ করতে পারেন অনেকেই। একবার ভেবে দেখবেন কথাটি সত্যি না মিথ্যা। আর আমার পক্ষ থেকে আমি বলব, আমার ৭৩ বছর বয়স। ৫০তম ছবি ‘বীর’-এর কাজ চলছে। আমার এখনই বলার সময়। আমি ছাড়া বলার বোধ হয় আর কেউ নেই।”
কাজী হায়াতের ক্ষমা প্রার্থনা প্রসঙ্গে আজ (১৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র স্থির চিত্রগ্রাহক সমিতির সভাপতি জি ডি পিন্টু এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘কাজী হায়াৎ আমাদের চলচ্চিত্রের অন্যতম উজ্জ্বল নক্ষত্র। আমরা সবাই উনাকে সম্মান করি। তিনি ভুল বুঝতে পেরেছেন, এটা আমাদের কাছে সম্মানের। তবে এত বড় অনুষ্ঠানে সবার সামনে উনার ক্ষমা চাওয়ার কিছু নেই। কারণ উনি ছোট হলে আমরা চলচ্চিত্রের মানুষগুলো ছোট হই। আমাদের ডেকে উনি দুটি কথা বললেই বিষয়টি সমাধান হয়ে যেত। উনার প্রতি আমাদের কোনো ক্ষোভ নেই।’
পিন্টু আরো বলেন, ‘আরেকটা কথা বলতে চাই। মেকআপম্যান ও আলোকচিত্রীদের কারণে চলচ্চিত্র খারাপ হয়নি। আমাদের কারো জন্য সিনেমা হলের দরজা বন্ধ হয়নি। সন্তানের মুখে অন্ন তুলে দেওয়ার জন্য একজন যখন মোসাহেবি করেন, তখন তাঁকে আসলে মানুষ কী বলবে আমি জানি না।’
বাংলাদেশ ফিল্ম মেকআপ আর্টিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শামসুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আসলে আমরা সবাই একটি পরিবার। আর পরিবারের কর্তা হচ্ছেন পরিচালক। তিনি যেহেতু ভুল বুঝতে পেরেছেন, আমরা বিষয়টি সুন্দরভাবে গ্রহণ করছি। বিষয়টি নিয়ে এর চেয়ে বেশি কিছু বলার নেই।’
সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে কাজী হায়াতের ৫০তম ছবি ‘বীর’, এতে কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন শাকিব খান ও শবনম বুবলী। এতে শাকিব-বুবলী ছাড়াও অভিনয় করেছেন সাদেক বাচ্চু, মিশা সওদাগর, শিবা শানু, জ্যাকি আলমগীর, কাবিলাসহ অনেকে।
কাজী হায়াৎ একাধারে একজন পরিচালক, কাহিনিকার, চিত্রনাট্যকার, প্রযোজক ও অভিনেতা। ১৯৭৯ সালে ‘দ্য ফাদার’ নামের চলচ্চিত্রের মাধ্যমে পরিচালনা-জীবন শুরু করেন। এর আগে পরিচালক মমতাজ আলীর সহকারী হিসেবে চলচ্চিত্রজগতে কর্মজীবন শুরু করেন তিনি।