আমি চ্যাং, করোনাভাইরাস নই
জাতিগত বিদ্বেষের ভয়াবহতা বিশ্বের ইতিহাসে নতুন নয়। এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার অন্ত না থাকলেও একবিংশ শতাব্দীতে এসেও অনেককেই এর রোষানলে পড়তে হচ্ছে। করোনাভাইরাসের এই ক্রান্তিকালেও জাতিবিদ্বেষ থেকে রেহাই মিলছে না অনেকের। আর এবার নিজের সঙ্গে ঘটে যাওয়া তেমনই কিছু ঘটনা সামনে এনেছেন ভারতীয় অভিনেতা-কণ্ঠশিল্পী মায়াং চ্যাং।
হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদনে জানা যায়, সম্প্রতি ভিডিও শেয়ারিং সাইট ইউটিউবে চ্যাংয়ের একটি ভিডিও প্রকাশ্যে আসে।
ভিডিওতে চ্যাংকে বলতে শোনা যায়, “নমস্কার, আমার নাম চ্যাং এবং আমি করোনাভাইরাস নই। এখন নিশ্চয়ই আপনারা ভাবছেন, কেন আমি শাহরুখ খানের বিখ্যাত সংলাপের মতো কথা বলছি। লকডাউনের কিছু দিন আগে, রাতে একজন ব্যক্তি তাঁর বাড়ি ফিরছিলেন। আচমকা বাইকে থাকা দুজন ব্যক্তি তাঁকে অতিক্রম করে যাওয়ার সময় তাঁকে দেখতে পায় এবং ‘করোনাভাইরাস’ বলে চিৎকার করতে থাকে। কেন? সম্ভবত ওই লোকটির চেহারায় ভিন্নতা ছিল। এমন ঘটনায় ওই ব্যক্তি ভীষণ রেগে গেলেন। তিনি ওই লোকেদের গালাগাল বা কিছু একটা করার চিন্তা করতে লাগলেন। কিন্তু কিছুক্ষণ পরই তিনি শান্ত হলেন এবং বিষয়টিকে এড়িয়ে গেলেন। কেননা এ ধরনের জাতিবিদ্বেষকে তিনি শৈশব থেকেই এড়িয়ে যাচ্ছেন। কখনো ‘চিং চং’, কখনো ‘মোমো’, কখনো ‘হক্কা নুড্লস’ নামে ডাকা হয়েছে তাঁকে। কখনো তাঁকে বলা হতো ‘হে, অন্তত চোখটা খোলো’ ইত্যাদি। তিনি সব সময়ই এসব এড়িয়ে গেছেন। ওই মানুষটি আমি, চীনা বংশোদ্ভূত একজন ভারতীয়।”
দেখুন ভিডিওতে :
নিজের সঙ্গে যা ঘটেছে, তা যে কারো সঙ্গে ঘটতে পারে বলেও মনে করেন শিল্পী চ্যাং।
“কোনটি বড় ব্যাপার, তা অবশ্যই এখন আপনাদের ভাবা উচিত। সে অবশ্যই মজা করছিল, শান্ত হও। এবং আপনারা কী জানেন? আপনিই আসলে ঠিক, তাঁরা আসলেই মজা করেছিল। মজা করেই দিল্লির একজন কাকু মণিপুরী এক মেয়েকে থুথু দিয়েছেন, মজা করে আহমেদাবাদ ও কলকাতা থেকে নাগাল্যান্ডের লোকজনকে ঘর থেকে তাড়ানো হয়েছে, পুনেতে এক আন্টি মিজোরামের এক মেয়েকে প্রকাশ্যে হেনস্তা করেছেন। মজা করেই কেউ একজন আপনাকে মনে করিয়ে দিচ্ছেন, আপনি এ দেশের হলেও এখানে আপনার অধিকার নেই। ‘চীন, নেপাল কিংবা যেখান থেকে এসেছ, সেখানে চলে যাও!’—এ কথা বলার মাধ্যমে তাঁরা একজনের পরিচয়কে আঘাত করছে। এটি কোনো কৌতুক নয়। এটি জাতিবিদ্বেষ। আমরা সবাই এটার শিকার,” বলেন চ্যাং।
তরুণদের উদ্দেশে চ্যাং বলেন, ‘এ কারণেই তোমাদের যদি কিছু বলার না থাকে, কিছু বলো না। আমি জানি, ভারতের তরুণেরা দয়ালু, স্মার্ট ও অনুভূতিপ্রবণ। তোমরা বুঝতে পারছ আমি কী বলছি এবং তোমরা অন্যকে জাতিবিদ্বেষী না হতে বলবে। তোমরা যদি কিছু করতে চাও, তাহলে তোমার মানবসত্তাকে সম্মান করো। বিশেষত এমন সময়ে, যখন আমাদের সবার একসঙ্গে থাকা উচিত। অনেক ধন্যবাদ। নিজের স্বাস্থ্যের যত্ন নাও।’