আবরার হত্যার দায় নিলেন সব শিক্ষক, নিলেন না প্রভোস্ট
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সব শিক্ষক আবরার ফাহাদ রাব্বী হত্যাকাণ্ডের দায় নিলেও নেননি শেরে বাংলা হলের পদত্যাগ করা প্রভোস্ট অধ্যাপক জাফর ইকবাল খান। প্রভোস্ট বারবার বলছেন, ‘আমি চেষ্টা করেছি।’
আজ বুধবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারে শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি হন জাফর ইকবাল খান। তখন তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন। এর আগে প্রভোস্টের পদ থেকে পদত্যাগ করেন।
শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি হওয়ার পর প্রভোস্ট জাফর ইকবাল তাদের নানা ধরনের প্রশ্নের উত্তর দেন। কিন্তু তাঁর উত্তরে খুব একটা খুশি হতে দেখা যায়নি শিক্ষার্থীদের। ফলে প্রভোস্টকে একের পর এক প্রশ্ন করতেই থাকেন শিক্ষার্থীরা। প্রভোস্ট উত্তর দিতে না পারলে পাশ থেকে শিক্ষক সমিতির নেতারাও মাঝেমধ্যে উত্তর দিয়ে দিচ্ছিলেন।
একপর্যায়ে এক শিক্ষার্থী প্রভোস্টকে লক্ষ্য করে বলেন, ‘স্যার, আপনি বুঝতেছেন যে আপনি আপনার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছেন। আমি আপনার কাছে বিনীতভাবে অনুরোধ করছি, আপনি এই দায়ভার নেবেন এবং আবরারের বাবা-মা ও জাতির কাছে মাফ চাইবেন। আমরা আপনার কাছ থেকে এটুকু চাই।’
জবাবে জাফর ইকবাল খান বলেন, ‘আমার ব্যর্থতার কথা আমি ওইভাবে বলতে চাই না, কারণ আমি চেষ্টা করছি।’
এরপর শিক্ষার্থীরা আরো জোরে বলতে থাকেন, ‘স্যার, আপনি নিজে ভালোভাবে বুঝতেছেন আপনি ব্যর্থ। তা না হলে আমাদের আজ এই অবস্থা হওয়ার কথা না।’
জবাবে প্রভোস্ট আবারো বলেন, ‘আমি চেষ্টা করেছি।’
এরপর প্রভোস্টের হাত থেকে মাইক্রোফোনটি কেড়ে নেন শিক্ষক সমিতির এক শিক্ষক। তখন তিনি বলেন, ‘কে ব্যর্থ হয়নি এই ক্যাম্পাসে? সব টিচার অবশ্যই ব্যর্থ হয়েছি।’
জবাবে শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘সবাই সবার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু স্যার (প্রভোস্ট) যে ব্যর্থ হয়েছেন সেটা আমরা তাঁর মুখ থেকেই শুনতে চাই।’
এরপর আবারো মাইক হাতে নেন প্রভোস্ট জাফর ইকবাল। তখন তিনি বলেন, ‘সম্মিলিত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হল পরিচালনা করা হয়। আমার তিনজন অ্যাসিসট্যান্ট আছে। একেকজনকে একেক দায়িত্ব দেওয়া আছে। তাদের কাছ থেকে ইনফরমেশন আমি পাইনি। একেকজন কর্মচারী আছেন কেউ ১৬ বছর, কেউ ২০ বছর ধরে চাকরি করছেন। মেস বয় আছে এবং গার্ড আছে। কেউ কোনো দিন আমাকে বলেনি যে হলে এই রকম হয়। আমি কীভাবে জানব? এর আগে যখন আমি র্যাগিংয়ের কথা বলেছিলাম, তখন ছাত্ররাই আমাকে বলেছে এটা র্যাগ মুক্ত হল।’
সে সময় শিক্ষার্থীরা উত্তেজিত হয়ে উঠেন। তখন মাইক হাতে নিয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি এ কে এম মাসুদ বলেন, ‘অবশ্যই আমরা ব্যর্থ হয়েছি। এখানে কোনো প্রশ্ন নেই। তোমরা যদি মনে করো আমরা ব্যর্থ হয়েছি তাহলে আমরা ব্যর্থ হয়েছি।’
তখন শিক্ষার্থীরা আবারো বলেন, ‘আমরা স্যারের (প্রভোস্ট) মুখ থেকে শুনতে চাই।’
এরপর জাফর ইকবাল বলেন, ‘আমি হলে জয়েন করার পর থেকে কেউ আমার কাছে অভিযোগ নিয়ে আসছো? যে অভিযোগ নিয়ে আসার পর কাজ হয়নি।’
এরপর শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘স্যার, অভিযোগ নিয়ে যাওয়ার তো পরিবেশ নেই। অভিযোগ দিলে হল থেকে বের হয়ে যেতে হবে। এটা পুরো সিস্টেমেরই ব্যর্থতা। আপনারা নিজেই বলছেন, ‘শিক্ষকের চেয়ে পলিটিক্যাল শিক্ষার্থীদের পাওয়ার বেশি।’ তাহলে আমাদের পিতা-মাতা কি ছাত্রলীগের কাছে লাশ হওয়ার জন্য রেখে যায় আমাদের? আপনার কি মনে হয় না, এটা আপনাদের ব্যর্থতা?’
এরপর প্রভোস্ট বলেন, ‘আমি টোটাল শিক্ষকের পক্ষ থেকে বলছি, তোমাদের দাবির সাথে একমত প্রকাশ করছি। আমি ঘটনা শোনার পর থেকে তোমাদের সঙ্গে আছি। এই হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার চাই আমি।’
গত রোববার রাতে বুয়েটের শেরেবাংলা হলের কক্ষে আবরার ফাহাদ রাব্বীকে পিটিয়ে হত্যা করেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।