আবরারের খুনিরা ‘মাতাল’ ছিল, ছাত্রলীগের তদন্ত কমিটির দাবি
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছাত্রলীগ নেতারা ঘটনার সময় ‘মাতাল’ ছিলেন বলে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে করা তদন্তে দাবি করা হয়েছে।
গত রোববার রাতে বুয়েটের শেরাবাংলা হলে তড়িৎ কৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরারকে একটি কক্ষে নিয়ে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ ঘটনায় আবরারের বাবা ১৯ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেন। ঘটনায় জড়িত সন্দেহে বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের ১১ জনকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করে কেন্দ্রীয় কমিটি।
হত্যাকাণ্ডের পর পরই ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এর দায়িত্বে ছিলেন ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ইয়াজ আল রিয়াদ ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক আসিফ তালুকদার। তাদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়। তাঁরা নির্দিষ্ট সময়েই প্রতিবেদন দাখিল করেন।
এই প্রতিবেদনে হত্যাকাণ্ডের সময় হল প্রশাসনের ‘দায়িত্বহীনতা ও নির্লিপ্ত’ ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়।
তদন্ত কমিটির সদস্য ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ইয়াজ আল রিয়াদ গতকাল মঙ্গলবার এনটিভি অনলাইনকে বলেন, কমিটি করার পর আমরা তৎক্ষণাৎ সেখানে যাই। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, সাধারণ শিক্ষার্থী, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থার দায়িত্বে যারা আছেন সবার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করি। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করার নির্দেশ দেওয়া হলেও তার আগেই কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দেই।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ইয়াজ আল রিয়াদ বলেন, ‘সেদিন রাতে যারা এই হত্যাকাণ্ডটি ঘটিয়েছেন তাঁরা এর আগে দুর্গাপূজা দেখতে গিয়েছিলেন। সেখানে তাঁরা মদপান করেছিলেন। সবাই মাতাল ছিলেন। তাদের মধ্যে মানবিকতা বলে কিছুই ছিল না। সেখান থেকে এসে তাঁরা একটি স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে আবরারকে তাঁর ১০১১ নম্বর রুম থেকে ২০১১ নম্বর রুমে ডেকে নিয়ে যায় এবং তাঁকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে। যার পরিপ্রেক্ষিতে আবরারের মৃত্যুর মতো ঘটনা ঘটে।’
ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আরো দাবি করেন, ‘আবরারকে নির্যাতনের সময় ওই কক্ষে তিন থেকে চারজন শিক্ষার্থী থাকলেও অন্যান্য রুমের কিছু লোক এই নির্যাতনে অংশ নেয়।’
নির্যাতনের একপর্যায়ে অসুস্থ হয়ে আবরার মোবাইলে তাঁর বন্ধু ও সহপাঠীদের সাহায্য চেয়েছিলেন বলেও ছাত্রলীগের তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এতে আরো বলা হয়, ‘কিন্তু কারো সাড়া পাননি আবরার ফাহাদ।’
ছাত্রলীগের তদন্ত কমিটির নেতা আরো বলেন, ‘তদন্তে আরো পেয়েছি, ওই রাতে বার্সেলোনার খেলা ছিল। পূজা থেকে এসে আবরারকে শারীরিক নির্যাতনের পর তাঁরা বার্সেলোনার খেলা দেখতে চলে গিয়েছিলেন।’
‘আবরার এই ফাঁকে তাঁর এক বন্ধুকে ফোন করে তাঁকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু তাঁর বন্ধু তাঁকে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসেননি। যদি তাঁর বন্ধুরা এগিয়ে আসত তাহলে হয়তো এমন একটি অপমৃত্যুর মতো ঘটনা নাও ঘটতে পারত’, যোগ করেন ইয়াজ আল রিয়াদ।
হল প্রশাসনের দায়
হলের কক্ষের মধ্যে অন্য ছাত্রদের হাতে নির্যাতিত হয়ে আবরারের মৃত্যুর জন্য প্রশাসনের ‘দায়িত্বহীনতা ও নির্লিপ্ততাকে’ও দায়ী করেছেন ছাত্রলীগ নেতা ইয়াজ আল রিয়াদ। তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘হলের মধ্যে রাতভর একটা ছাত্রকে নির্যাতন করা হলেও প্রশাসন কেন বিষয়টি জানতে পারল না? হলের প্রভোস্ট, আবাসিক শিক্ষকরা তাহলে কী দায়িত্ব পালন করলেন?’
এই ঘটনায় প্রশাসন ‘দায়িত্বহীনতার’ পরিচয় দিয়েছেন, এতে কোনো সন্দেহ নেই বলেও মন্তব্য করেন ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি। তিনি আরো বলেন, হল কর্তৃপক্ষ কোনোভাবেই এর দায়ভার এড়াতে পারে না।’
তাছাড়া ফেইসবুক বা অন্য কোনো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কারো মত প্রকাশে ছাত্রলীগ বাধা দিতে পারে না বলেও মনে করেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির এই সহ-সভাপতি। তিনি বলেন, ‘ছাত্রলীগ কখনও কারো ব্যক্তিগত মত প্রকাশে হস্তক্ষেপ করার অধিকার রাখে না। এমনটি করার অধিকারও নেই। যার যার মত তিনি প্রকাশ করবেন। এক্ষেত্রে ছাত্রলীগের কারোর মত প্রকাশের বিরুদ্ধে হস্তক্ষেপ করার সুযোগ নেই।’
ছাত্রলীগের কেউ যদি কারো মত প্রকাশের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে অপকর্ম করে তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান ইয়াজ আল রিয়াদ। তিনি আরো বলেন, ছাত্রলীগ একটি বৃহত্তর সংগঠন, ছাত্রলীগ কাউকে মারতে বলে না। যে কোনো ভালো কাজ ছাত্রলীগ সমর্থন করে। যদি কেউ ছাত্রলীগের নাম ভাঙ্গিয়ে কোনো অপরাধ করে তার দায়ভার তাঁকেই নিতে হবে।