রাবির সমাবর্তন ফি বেশি হওয়ায় অর্ধেকের কম গ্র্যাজুয়েটের নিবন্ধন
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) একাদশ সমাবর্তন ফি বেশি হওয়ায় নিবন্ধন করেছেন মাত্র তিন হাজার ৪৩৮ জন গ্র্যাজুয়েট। অতিরিক্ত নিবন্ধন ফি ও নিবন্ধনের সময় কম হওয়ায় অর্ধেকেরও কম গ্র্যাজুয়েট অংশ নিচ্ছেন।
২০১৫-১৬ সালের স্নাতকোত্তর, পিএইচডি, এমফিল, এমবিবিএস, বিডিএস ও ডিভিএম ডিগ্রি অর্জনকারী শিক্ষার্থীরা এ সমাবর্তনে অংশ নিতে পারবেন। এই দুই শিক্ষাবর্ষে মোট আট হাজার ৮১৪ জন ডিগ্রি অর্জন করেন।
জানা যায়, আগামী ৩০ নভেম্বরে অনুষ্ঠিত একাদশ সমাবর্তন সভাপতিত্ব করবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ।
সমাবর্তনে অংশ নেওয়ার জন্য গ্র্যাজুয়েটদের গত ৫ সেপ্টেম্বর থেকে ১৪ সেপ্টেম্বরের মধ্যে তিন হাজার ৫৭০ টাকা দিয়ে অনলাইনে নিবন্ধন সম্পন্ন করতে হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক এমএ বারী জানান, ২০১৫-১৬ সালে স্নাতকোত্তর, পিএইচডি, এমফিল, এমবিবিএস, বিডিএস ও ডিভিএম ডিগ্রি অর্জনকারী গ্র্যাজুয়েটের সংখ্যা আট হাজার ৮১৪ জন। এর মধ্যে কলা অনুষদে ১৪০২ জন, আইন অনুষদে ১৬১, বিজ্ঞান অনুষদে ৬৮৫ জন, বিজনেজ স্টাডিজ অনুষদে ৭৭৬ জন, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদে ৬২২ জন, জীব ও ভূ-বিজ্ঞান অনুষদে ৬১০ জন, কৃষি অনুষদে ১১৫ জন, প্রকৌশল অনুষদে ২৪৬ জন।
এ ছাড়া চিকিৎসা অনুষদসহ পিএইচডি, এমফিল, স্নাতকোত্তর, এমবিবিএস, বিডিএস ও ডিভিএম ডিগ্রি অর্জন করেছেন মোট ৩৫৯৭ জন।
রাবির জনসংযোগ দফতরের প্রশাসক অধ্যাপক প্রভাষ কুমার কর্মকার জানান, এবারের সমাবর্তনে তিন হাজার ৪৩৮ জন গ্র্যাজুয়েট ও শিক্ষকদের মধ্যে ৬২৮ জন নিবন্ধন করেছেন।
গ্র্যাজুয়েটদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অতিরিক্ত নিবন্ধন ফি হওয়ার কারণে সমাবর্তনে অংশ নিতে পারছেন না বেশিরভাগ গ্র্যাজুয়েট। তবে ব্যক্তিগত সমস্যা ও নিবন্ধনের সময় কম হওয়ায় অনেকে অংশ নিচ্ছেন না বলে জানান তাঁরা।
গ্র্যাজুয়েটরা বলছেন, সমাবর্তনে নিবন্ধনের জন্য স্নাতকোত্তর ক্যাটাগরিতে তিন হাজার ৫৭০ টাকা ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। যা অযৌক্তিক ও অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় অনেক বেশি। অংশগ্রহণে ইচ্ছুক অনেক শিক্ষার্থী এখনো বেকার, পরিবার থেকে টাকা নিয়ে চাকরির জন্য লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছেন। এর ফলে তাঁদের নিবন্ধন ফি, রাজশাহীতে যাওয়া-আসা, থাকা-খাওয়ার খরচ জোগাড় করে কাঙ্ক্ষিত সমাবর্তনে অংশ নেওয়া সম্ভব নয়।
২০১৬ সালে পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগে স্নাতকত্তোর পাস করেছেন সৌরভ জোয়াদ্দার। সমাবর্তনের নিবন্ধন করেননি তিনি। কেন নিবন্ধন করেনি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখনো চাকরিতে যোগদান করার সুযোগ হয়নি। বাড়ি থেকে টাকা চাইতেও আর ভালো লাগে না। এর মধ্যে সমাবর্তনের নিবন্ধন ফি বেশি হওয়ায় তাতে অংশ নেয়া সম্ভব হয়নি। নিবন্ধন ফি দুই হাজার টাকা হলে হয়তো নিবন্ধন করতে পারতাম।’
২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী রোকনুজ্জামান রোকন বলেন, ‘ব্যস্ততার কারণে সমাবর্তনে নিবন্ধন করতে পারিনি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি এখন নিবন্ধনের সময় বৃদ্ধি করে তাহলে সমাবর্তনে অংশ নেয়ার সুযোগ পাবো।’
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপউপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা বলেন, ‘সমাবর্তনে অংশগ্রহণের অনিচ্ছা প্রকাশের কারণ হিসেবে আমি মনে করি তাঁদের বেকারত্ব। এর আগেরবার কয়েক বছর পর সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হওয়ায় অনেক গ্র্যাজুয়েট নিবন্ধন করেছিলেন। কিন্তু এবার ২০১৫ থেকে ১৬ সালের গ্র্যাজুয়েটদের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। যাদের অধিকাংশই হয়তো এখনো চাকরি পাননি।’
নিবন্ধন ফির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এবার নিবন্ধন ফি আরো বৃদ্ধির কথা চলছিল। পরবর্তীতে উপাচার্যকে বৃদ্ধি না করার প্রস্তাব দিলে তিনি তা গ্রহণ করেন। এজন্য আগের সমাবর্তনের মতো নিবন্ধন ফি অপরিবর্তিত রয়েছে।’