ডাকসু সদস্যরা নিয়ম মেনেই ভর্তি হয়েছে : এজিএস সাদ্দাম
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ছাত্রত্ব টিকিয়ে রাখতে নিয়মবহির্ভূতভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স বিভাগের মাস্টার অব ট্যাক্স ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রামে ছাত্রলীগের ৩৪ জন নেতাকে ভর্তি করার অভিযোগ ওঠে। এ নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে শিক্ষার্থীদের মধ্যে। তারা অভিযুক্তদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের দাবিতে কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছে। এরই মধ্যে মুখ খুলেছে ডাকসুতে নির্বাচিত হওয়া ছাত্রলীগের নেতারা। তাদের দাবি, তারা নিয়ম মেনেই ভর্তি হয়েছেন।
আজ মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলন করেছে ডাকসুতে নেতৃত্বে থাকা ছাত্রলীগের একটি অংশ। তাদের দাবি, ডাকসুতে যারা নির্বাচিত হয়েছেন, তাঁরা সবাই নিয়মের মধ্য দিয়েই ভর্তি হয়েছেন।
ডাকসুর সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসাইন বলেন, ডাকসু নির্বাচনে যারা নির্বাচিত হয়েছেন তারা সবাই নিয়ম অনুসরণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের যে ঐতিহ্য রয়েছে, প্রথা রয়েছে, রীতি রয়েছে, সে প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন। যেভাবে একটি সুনির্দিষ্ট ছাত্র সংগঠনকে দায়ী করে বলা হচ্ছে, ছাত্রলীগের নেতা বলেই তাদেরকে ভর্তির সুযোগ দেওয়া হয়েছে।
সাদ্দাম বলেন, আমরা সুস্পষ্ট করে ডাকসুর পক্ষ থেকে বলতে চাই, ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে ঢাবিতে ভর্তি হয়নি। ভর্তি হয়েছে ঢাবির শিক্ষার্থী হিসেবে। এ প্রক্রিয়ায় শুধু ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী ভর্তি হয়নি, ছাত্রদল, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র ফেডারেশন ও স্বতন্ত্র জোটের অনেক নেতাকর্মী ভর্তি হয়েছে। দুঃখজনক যে শুধু একটি নির্দিষ্ট ছাত্র সংগঠনকে দায়ী করে চিহ্নিত করা হচ্ছে।
ডাকসুর এজিএস বলেন, শিক্ষার্থীবিচ্ছিন্ন যারা ডাকসু নির্বাচনে প্রত্যাখ্যাত হয়েছিল, তারা এ বিষয়কে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করার চেষ্টা করছে। তাদেরকে আমরা বলব, তিন দশক পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমরা গণতান্ত্রিক পরিবেশ পেয়েছি। আপনাদের হঠকারী সিদ্ধান্তের কারণে যেন পরিবেশ বিঘ্নিত না হয়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন ডাকসুর বিজ্ঞান বিষয়ক সম্পাদক আরিফ ইবনে আলী, ক্যাফেটেরিয়া বিষয়ক সম্পাদক বি এম লিপি প্রমুখ।
জানা যায়, গত গত ১১ ফেব্রুয়ারি ডাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর ছাত্রলীগের ৩৪ জন সাবেক ও বর্তমান নেতাকে ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদে ভর্তি করা হয়। এদের মধ্যে ডাকসুতে বিজয়ী হন সাতজন।
অনুষদ সূত্র জানায়, ভর্তির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হলে তা বিভাগের একাডেমিক কমিটি, অনুষদ কমিটি, ডিনস কমিটি হয়ে একাডেমিক কাউন্সিল এবং সিন্ডিকেটে অনুমোদন নিতে হবে। যদিও এই ৩৪ জনের ব্যাপারে কোনো অনুমোদন নেওয়া হয়নি।
তবে এ বিষয়ে ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডিন শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম বলেন, তিনি বলেন, লিখিত পরীক্ষা ছাড়াই ঢাবির ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের সন্ধ্যাকালীন কোর্সগুলোয় ভর্তির সুযোগ রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ধ্যাকালীন প্রোগ্রামগুলো অনুষদের নিজস্ব প্রোগ্রাম। এ ধরনের প্রোগ্রামে কোনো পরিবর্তনের জন্য তাদের একাডেমিক কাউন্সিল বা সিন্ডিকেটে যেতে হয় না।
এদিকে তার এই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম বলেন, বিভাগ থেকে ভর্তির জন্য বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। ভর্তিচ্ছুকরা আবেদন করেন। তাদেরকে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা নেওয়ার পরেই ভর্তি করানো হয়। সব অনুষদের জন্যই একই নিয়ম। এই নীতিমালা ২০১৫ সালের ২০ ডিসেম্বর সিন্ডিকেটে অনুমোদন দেয় বলে জানা যায়।
তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, নিয়মবহির্ভূতভাবে ঢাবিতে ভর্তি হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৯ সেপ্টেম্বর তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ঢাবিতে নিয়মবহির্ভূতভাবে ভর্তি করার কোনো সুযোগ নেই। এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা কাজ করছে। তাদের তদন্তের ভিত্তিতে যে প্রতিবেদন আসবে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।