দুর্নীতি যে-ই করুক, সঠিক তদন্ত হোক : জাবি উপাচার্য
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম বলেছেন, ‘ক্যাম্পাসে আন্দোলনের মাধ্যমে কিছু মানুষ আমাকে দুর্নীতিবাজ বানাতে চেয়েছিল। কিন্তু আমি নিজে চাই দুর্নীতি যে-ই করুক, তার সঠিক তদন্ত হোক। যেসব গোষ্ঠী বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মান নষ্ট করেছে, তাদের বিষয়েও তদন্ত হোক।’
আজ শনিবার ছাত্রলীগ নিয়ে নিজে ও পরিবারকে জড়িয়ে ওঠা বির্তকের বিষয়ে সাংবাদিকদের এমনটিই বলছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম।
ড. ফারজানা বলেন, ‘তদন্তের মধ্য থেকেও হয়তো ভিন্ন কিছু বের হয়ে আসবে। দেখা গেল আমার কথিত দুর্নীতি বের করতে গিয়ে অন্য কিছু বেরিয়ে এলো। দুঃখজনক হলো, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব নিজেদের গা বাঁচাতে ক্যাম্পাসের আন্দোলনের সঙ্গে নিজেদের বিষয়টি জড়িয়ে দিয়েছে।’
ছাত্রলীগ প্রসঙ্গে ড. ফারজানা বলেন, ‘তাদের দুর্ভাগ্য। আমিই ছিলাম শেষ তীর। সেই তীরেই হয়তো তারা বিদ্ধ হল।’
তাহলে কি ছাত্রলীগ নেতাদের রাজনীতি ও ক্যারিয়ার আপনার তীরের শেষ? এমন প্রশ্নের জবাবে উপাচার্য বলেন, ‘না তা কেন? তবে হ্যাঁ দুর্ভাগ্য এটা যে শেষ তীরটা আমার দিক থেকেই গেল। অবশ্য তার আগে কমিটি নিয়ে লেনদেন, সিনিয়র নেতৃবৃন্দকে বসিয়ে রেখে তাদের প্রতি অসন্মান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের তাদের অনৈতিক কর্মকান্ডের পটভূমি তাদের ক্যারিয়ারের কবর রচনা করেছে। তবে সাংগঠনিক নেত্রী হিসেবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রিয় ছাত্রলীগের আর যাতে পচন না ধরে, সে জন্য কিন্ত তিনি আগেই তদন্ত শুরু করেছিলেন।’
উপাচার্যের দাবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক যে চিঠি লিখেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে তাতে ছিল মিথ্যার ফুলঝুড়ি। তিনি বলেন, ‘তা শাক দিয়ে মাছ ঢাকার অপচেষ্টা। আমার বিরুদ্ধে তারা মিথ্যা গল্প ফেঁদেছিল।’
উপাচার্য বলেন, ‘আমি চ্যালেঞ্জ দিচ্ছি। নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি করে এ বিষয়ে তদন্ত হতে পারে। প্রয়োজনে আমি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ও আচার্যকেও অনুরোধ করব।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পের প্রথম ধাপের ৪৫০ কোটি টাকার মধ্যে ২ কোটি টাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের মধ্যে ভাগাভাগি করে দেওয়া হয়—এমন খবর সম্প্রতি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হবার পর ক্রমশ অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।
উপাচার্য ফারজানা ইসলাম ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের ঘিরে-ও খোদ বিতর্ক উত্থাপন করেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিরুদ্ধে আর্থিক লেনদেনের এই অভিযোগ তদন্তসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলনে নামেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। উল্টো দিকে উপাচার্যের পক্ষেও পাল্টা কর্মসূচি নেন শিক্ষকদের একাংশ। এতে ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ক্যাম্পাস।
এমন পরিস্থিতির মাঝেই গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেন উপাচার্য। তারপর শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবি মেনে নেওয়ার পর পরিস্থিতি আপাত শান্ত হলেও আর্থিক লেনদেনের অভিযোগের বিষয়ে সময় নেন তিনি। এরই মাঝে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে চিঠি লেখেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী। ওই চিঠিতে আর্থিক লেনদেনে নিজেদের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করে বরং উপাচার্য, তাঁর ছেলে ও স্বামীকে জড়িয়ে আর্থিক লেনদেনের ইঙ্গিত দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপাচার্যের জবাব, ‘অর্থ লেনদেনের বিষয়টি স্রেফ বানোয়াট গল্প। তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল যে ঠিকাদারের কাছ কমিশন নেওয়া। সেটা পাঁচ থেকে ছয় শতাংশ। এ বিষয়ে তারা আমার সহাযোগিতা চেয়ে না পেয়ে হতাশ হয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে যে খোলা চিঠি লিখেছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। আসলে টাকা-পয়সা নিয়ে তাদের সঙ্গে আমার কোনো কথাই হয়নি।’
উপাচার্য বলেন, ‘ঠিকাদারদের কাছে আমাকে দিয়ে কমিশনা চাইবার ইঙ্গিত দিলে আমি বলি, তোমরা টাকা-পয়সা নিয়ে কোনো আলাপ আমার সঙ্গে করবে না। তোমরা যা চাও, তা তোমাদের মতো কর।’