চাকরির বাজারে যোগ্য কর্মী তৈরি করছে ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি
ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে অন্যতম। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য হিসেবে ২০১৮ সালের নভেম্বর থেকে দায়িত্ব পালন করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. সহিদ আকতার হুসাইন। এর আগে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন, বিভাগীয় প্রধান, প্রভোস্ট, শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদকসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে তিনি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ একাধিক কমিটির সদস্য।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক ড. সহিদ আকতার হুসাইন ১৯৫৫ সালের ১ ফেব্রুয়ারি মুন্সীগঞ্জ জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগ থেকে প্রথম বিভাগে স্নাতক (অনার্স) পাস করেন। ১৯৭৬ সালে একই বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৮৩ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর একই বিভাগে তিনি প্রভাষক পদে যোগ দেন। ১৯৯৩ সালে তিনি অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে টেকসই উন্নয়ন বিষয়ে পিএইচডি এবং যুক্তরাজ্যের অ্যাভার্ডিন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পোস্ট ডক্টরেট ফেলোশিপ ডিগ্রি অর্জন করেন।
ড. সহিদ আকতার হুসাইন ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটিসহ দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা, শিক্ষার মান, সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলেছেন এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে। শিক্ষার্থীদের করণীয়সহ নানা বিষয় তুলে ধরেছেন তিনি। ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি রাজধানী ঢাকার ধানমণ্ডিতে অবস্থিত এবং এর স্থায়ী ক্যাম্পাস আশুলিয়ায়। এটি ২০০৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে চারটি অনুষদ রয়েছে। প্রতিটি অনুষদের স্বতন্ত্র ক্যাম্পাস রয়েছে। বর্তমানে প্রায় চার হাজার ছাত্রছাত্রী রয়েছে। আর স্থায়ী ও অস্থায়ী ভিত্তিতে ২০০ শিক্ষক রয়েছেন।
একনজরে ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি
এ বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে চারটি অনুষদ রয়েছে। এগুলো হলো—
স্কুল অব আর্টস : বিএ (অনার্স), ইংরেজি এমএ ইএলএল (ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য) এম (ইংরেজি ভাষা পড়াচ্ছে) দুই বছরের প্রোগ্রাম এম (ইংরেজি ভাষা পড়াচ্ছে) এক বছরের প্রোগ্রাম।
আইন অনুষদ : এলএলবি (অনার্স), এলএলএম (মাস্টার্স)।
স্কুল অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি : বিএসসি সিএসই (কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল), বিএসসি সিএসআইএস (কম্পিউটার বিজ্ঞান ও ইনফরমেশন সিস্টেম), এমএসসি সিএসই (কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল), বিএসসি ইইই (তড়িৎ এবং ইলেকট্রনিক), বিএসসি ইটিই (বৈদ্যুতিক ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রকৌশল)।
বাণিজ্য অনুষদ : বিবিএ (ব্যবসায় প্রশাসন স্নাতক) প্রোগ্রাম এমবিএ (ব্যবসায় প্রশাসন মাস্টার) প্রোগ্রাম : নিয়মিত এমবিএ-নির্বাহী এমবিএ।
ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা : বর্তমানে প্রায় চার হাজার। শিক্ষক সংখ্যা প্রায় ২০০ জন।
এনটিভি অনলাইন : আপনি দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন স্বনামধন্য শিক্ষক ছিলেন। পাশাপাশি উপ-উপাচার্য হিসেবেও সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এর বিশেষত্ব নিয়ে যদি কিছু বলেন?
অধ্যাপক ড. সহিদ আকতার হুসাইন : এর বিশেষত্ব হলো এ রকম; দেখুন আমি প্রায় ৩৫ বছরের বেশি সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছি। এর আগে পিএসসির অধীনে পরিকল্পনা কমিশনে দুই বছর সরকারি চাকরি করেছি। কিন্তু এ পর্যায়ে মনে হলো, দেশে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও দেশ গঠনে সহায়তা করছে। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে অনেক কথা, শিক্ষার মান, নানা ধরনের অনিয়মের কথা রয়েছে। তখন চিন্তা করলাম, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার আর মাত্র দুই বছর চাকরি আছে। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে তো জীবনের অনেক সময় কাটালাম; এখন দেখি একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে আসলে কী হচ্ছে! আমার দীর্ঘ টিচিং, রিসার্চ এবং প্রশাসনিক যে অভিজ্ঞতা, তা দিয়ে কতটুকু সহযোগিতা করতে পারি এবং এ বিশ্ববিদ্যালয়কে কোন মডেলে নিয়ে যেতে পারব এবং আমি কতটুকু কন্ট্রিবিউট করতে পারি, তা দেখাই আমার মূল উদ্দেশ্য।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্রেস্ট উপহার দেওয়ার অনুষ্ঠানে ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. সহিদ আকতার হুসাইন (বাঁয়ে)।
এনটিভি অনলাইন : বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও ভূমিকা রেখে চলেছে। এটিকে কীভাবে মূল্যায়ন করছেন?
অধ্যাপক ড. সহিদ আকতার হুসাইন : এটা আমি যদি একটু পেছনে যাই। সারা বিশ্বে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাটা কিন্তু প্রাইভেট থেকে শুরু হয়। উপমহাদেশে তথা বাংলাদেশের কথা যদি চিন্তা করি; ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক ১৯০ বছরের শাসনামলে মাত্র দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারিভাবে চালু করেছিল, একটি হলো মাদ্রাসা, আরেকটি ছিল প্রেসিডেন্সি হিন্দু কলেজ। আর সবই প্রাইভেটভাবে শুরু হয়। যেমন সিলেটের এমসি কলেজ, বরিশালের বিএম কলেজ, ঢাকার জগন্নাথ কলেজ। তারপর ক্রমান্বয়ে সরকারিভাবে জেলায় জেলায় স্কুল করা হয়েছে। শিক্ষার মূল বিষয়গুলো তখন থেকে প্রাইভেট থেকে শুরু হয়। শুধু যেটি ছিল না, তা হলো উচ্চশিক্ষায় প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়। আমরা যদি বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয় অক্সফোর্ড বা হার্ভার্ডের কথাও যদি বলি, সেগুলো কিন্তু প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়। একইভাবে বাংলাদেশ যখন হয় তখন এ দেশে মাত্র চারটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছিল। বাংলাদেশ একটি জনসংখ্যাবহুল দেশ। সেখানে চারটি বিশ্ববিদ্যালয় তখনকার জন্য হয়তো ঠিক ছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে সরকার দেখল উচ্চশিক্ষার জন্য প্রতিষ্ঠান করা অনেক ব্যয়বহুল। তখন সরকার কী করল—বড় বড় কলেজকে অনার্স এবং মাস্টার্সের পর্যায়ে নিয়ে গেল। এখন দেখেন দেশে ১৬ কোটি মানুষ; দেশের বয়স ৪৮ বছর হয়ে গেছে। কিন্তু সে অনুপাতে পর্যাপ্ত পরিমাণ উচ্চশিক্ষার ব্যবস্থা নেই। এত লোককে সরকারিভাবে উচ্চশিক্ষা দেওয়া সরকারের পক্ষে সম্ভবও নয়। এখন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা প্রায় ৪০টি। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ৬০ হাজার। আর প্রতিবছর এইচএসসি পাস করেন কয়েক লাখ। এই প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার আগে এ দেশের অনেক ছাত্রছাত্রী ভারত, মালয়েশিয়া, যুক্তরাজ্য, আমেরিকা, কানাডাসহ অনেক দেশে চলে যেত। তখন এ দেশের কিছু ধনাঢ্য ব্যক্তির কারো কারো মাথায় এলো, দেশে কীভাবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় করা যায়। এ ক্ষেত্রে ড. আলিমুল্লাহকে বলা হয় প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের জনক। কেননা, তিনি নব্বইয়ের দশকে প্রথম এ দেশে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজি (আইইউবিটি) নামে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় চালু করেন। এরপর নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় দিয়ে শুরু হয়। এরপর দ্বিতীয় পর্যায়ে এসে ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি শুরু হয়। এই যে শুরু হলো, এখন এসব বিশ্ববিদ্যালয় দিয়েও হচ্ছে না।
তবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা অনেক ব্যয়বহুল। কেননা, এখানে ছাত্রদের টিউশন ফি দিয়ে মূলত ক্যাম্পাস চলে। প্রথমে মালিক যারা, তারা কিছু টাকা দিয়ে শুরু করলেও বিশ্ববিদ্যালয়কে গতিশীল রাখার যে ব্যয়, তা কিন্তু ছাত্রছাত্রীদের দেওয়া টিউশন ফি দিয়ে চালাতে হয়। এ ছাড়া এসব প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় কিছু পলিসি নির্ধারণ করে। তা হলো ধনাঢ্য পরিবারের ছেলেমেয়েদের পড়ালেখা করানোর জন্য কিছু পরিবেশ তৈরি করে। অন্যথায় এসব পরিবারের ছেলেমেয়েরা বিদেশে পড়তে চলে যায়। কিন্তু গরিব বা মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকজন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পারত না। আর সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনো গ্রামের গরিব-মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেমেয়েরাই পড়াশোনা করে। কারণ, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে টিউশন ফি অনেক বেশি।
তবে ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটিসহ কিছু প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় টিউশন ফি কম রাখার কারণে মধ্যবিত্ত বা নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা করার সুযোগ পায়। কেননা এ বিশ্ববিদ্যালয়ের যারা উদ্যোক্তা, তারা এ বিষয়ে কিছুটা উদার। তাই অনেক ছাত্রকে স্কলারশিপ দিয়ে পড়ালেখার করার সুযোগ করে দিচ্ছে। তারা বলেছে, আমাদের তো অন্য আয় রয়েছে। এখন পর্যন্ত এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মালিকরা কোনো লাভ নেন না। তারা শুধু মিটিংয়ের একটি সম্মানী নিয়ে থাকেন। ছাত্রদের কল্যাণার্থে ওয়েভার, স্কলারশিপ ও টিউশন ফিতে ছাড় দিয়ে যাচ্ছে। সবচেয়ে বড় বিষয়টি হলো এ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো বদনাম নেই। কোয়ালিটির সঙ্গে কোনো আপস করে না। আরেকটু বলে রাখি; এখানে ভর্তি হয় ধনাঢ্য পরিবারের ছেলেমেয়েরা। কেননা আগে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সেশনজট ছিল তীব্র। যে কারণে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে সেমিস্টার পদ্ধতিতে চলায় ছাত্রছাত্রীরা নির্ধারিত চার বছরে পড়াশোনা শেষ করতে পারে। এখন নির্ধারিত (ট্রাইমেস্টার) পদ্ধতিতে খুব দ্রুত শেষ হয়ে যাচ্ছে। এখান প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আরেকটা কারণ হচ্ছে; পাবলিক বিশ্ববিদ্যলয়ে আগে তীব্র সেশনজট ছিল। অন্যদিকে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে আগে ছিল অ্যানুয়াল (বার্ষিক) পদ্ধতি, তার পরে সেমিস্টার আর এখানে ট্রাইমেস্টার খুব কুইক বের হওয়ার সুযোগ আছে। এখন কিন্তু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সেমিস্টারে চলে আসছে। পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে দূরত্ব অনেকটা কমে আসছে। এ ছাড়া অনেক ধনীর ছেলেমেয়েরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় পড়তে চায় না। মনে করে যে পরিবেশটা তারা যেভাবে চায়, সেভাবে নেই। আর এদের টার্গেট থাকে ক্রেডিট ট্রান্সফার করে বিদেশ চলে যাওয়া।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অনুষ্ঠানে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ক্রেস্ট উপহার দিচ্ছেন ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. সহিদ আকতার হুসাইন (ডানে)।
এনটিভি অনলাইন : দীর্ঘদিন দেশের শীর্ষস্থানীয় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে আপনার যে বিশাল অভিজ্ঞতা রয়েছে; তা ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির মান উন্নয়নে কীভাবে কাজে লাগাচ্ছেন?
অধ্যাপক ড. সহিদ আকতার হুসাইন : আমার একাডেমিক এবং প্রশাসনিক উভয় অভিজ্ঞতা এখানে কাজে লাগাচ্ছি। কেননা সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অভিজ্ঞতা এবং ত্রুটিগুলো শুধরিয়ে এখানে কাজে লাগাচ্ছি। অলরেডি এখানকার সব সমস্যা চিহ্নিত করেছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন শিক্ষক ভালো এবং কোন শিক্ষক এখানে খণ্ডকালীন হিসেবে নিয়োগ দিলে এখানকার ছাত্রছাত্রীরা উপকৃত হবে, তা আমার জানা আছে। বাংলাদেশের প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা আবার এক্সট্রা কারিকুলামে এগিয়ে। এখানে আমারও শেখার আছে। কারণ তারা সবাই অনেক স্মার্ট। পড়াশোনার দিক দিয়ে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের দিক থেকে একটু হয়তো পিছিয়ে। কিন্তু ডিবেট, এক্সট্রা কারিকুলামে তারা অনেক এগিয়ে। এ দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির ল অনেক এগিয়ে। নাম্বারে ফেললে ৫-এর মধ্যে থাকবে। পরপর তিনবার এ ইউনিভার্সিটির ছাত্রছাত্রীরা ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটিতে জোসেফ কোর্টে কম্পিটিশনে গেছে। সারা বিশ্বের প্রায় ১০০টি দেশের কয়েকশটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিবেট গ্রুপ এখানে অংশগ্রহণ করে। তার মধ্যে আমাদের অবস্থা প্রায় ৬০-এর মধ্যে থাকে। এটি চাট্টিখানি কথা নয় এবং লোকালি একটানা তিনবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। গত বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চ্যাম্পিয়ন হয়, আমরা রানার্সআপ হয়েছি।
এ ছাড়া প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বদনাম আগে ছিল; সার্টিফিকেট বিক্রি করে, টাকা আয় করে। সেটা এখন আর নেই। কারণ এখন তাদের তিনটা কম্পিটিশন ফেস করতে হয়। একটা হচ্ছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সঙ্গে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়। এখানে চাকরির বাজারের ক্ষেত্রে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েটদের বেশি অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। সেকেন্ড হচ্ছে প্রাইভেট-প্রাইভেট নিজেদের মধ্যে একটা কম্পিটিশন রয়েছে। ভালো প্রাইভেট, মিডিয়াম, লো-প্রাইভেট তাদের মধ্যে আবার কম্পিটিশন আছে। আর যেটা অভার অল গ্লোবাল কম্পিটিশন। এখন হার্ভার্ড থেকে বা অক্সফোর্ড থেকে সার্টিফিকেট নিয়ে কিন্তু বাংলাদেশে চাকরি করে। মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে হাইসেলারিতে করপোরেট লেভেলে চলে আসে। সে জন্য কম্পিটিশন বেড়েছে। যোগ্যতা ছাড়া শুধু আমাদের ছেলেদের কাছে সার্টিফিকেট বিক্রির সুযোগ নেই। সে হিসেবে আপনি যদি ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির কথা বলেন; আমরা খুব সাংঘাতিকভাবে মেইনটেন করতে চেষ্টা করি। আমি এসেছি ছয় মাস হলো। ছয় মাসে আমি এসে সবচেয়ে হ্যাপি হলাম আমার ফ্যাকাল্টি নিয়ে। দেখলাম এখানকার ফ্যাকাল্টি ইজ গুড এবং টপ র্যাঙ্কিংয়ের ফ্যাকাল্টি।
এ ছাড়া যে প্রক্রিয়ায় আমাদের শিক্ষক নিয়োগ হয় সেটা খুবই স্বচ্ছ প্রক্রিয়া। একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকচিক্য বিল্ডিং ক্যাম্পাস কেমন, এয়ারকন্ডিশন আছে কি না, সুন্দর গাড়ি আছে কি না, তার চেয়ে বেশি দরকার হচ্ছে আমার ফ্যাকাল্টি। একজন ভালো টিচার যদি হয়, টিনের ঘরে রাস্তায় পড়ালেও সে বেস্ট। সেটাই হচ্ছে আমার মত। একটি বিষয় হলো আমি এখানে এসে কী করতে পারি। এখন পর্যন্ত প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় হলো টিচিং বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শুধু টিচিং দিয়ে হয় না, গবেষণাও লাগে। আর সেকেন্ড হচ্ছে আমরা এখন ধার করা টিচার দিয়ে চালাই, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হায়ার করতে হয়। আর ১০০টি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের এত টিচার কোথা থেকে দেব। সে জন্য আমাদের নিজস্ব টিচার গড়ে তুলতে হবে।
এনটিভি অনলাইন : প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের মান উন্নয়নে এ মুহূর্তে কী কী করণীয় রয়েছে বলে আপনি মনে করেন?
অধ্যাপক ড. সহিদ আকতার হুসাইন : প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের টিচিংয়ের সঙ্গে গবেষণা দরকার, সে গবেষণায় আমরা পিছিয়ে আছি। যদিও গবেষণা অনেক ব্যয়বহুল। তবে ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির টিচাররা অনেকে পিএইচডি করতে দেশের বাইরে গেছে। তারা যখন দেশে ফেরত আসবে, তখন কিন্তু আমার মান আরো বাড়বে। আমরা গবেষণার ফান্ড বাড়িয়েছি, যদিও তুলনামূলক খুবই অল্প, শিক্ষকরা যেন ছোট ছোট গবেষণা করে আবহ অভ্যাসটা যেন গড়ে তুলতে পারে—সে চেষ্টা চলছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অনুষ্ঠানে জর্জিয়ার প্রেসিডেন্ট মিখাইল সাকাশভেলির সঙ্গে ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. সহিদ আকতার হুসাইন (বাঁয়ে)।
এনটিভি অনলাইন : প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মান নিয়ে মাঝেমধ্যে কিছু বদনাম শোনা যায় এ বিষয়গুলো যদি বলেন?
অধ্যাপক ড. সহিদ আকতার হুসাইন : আমি যদি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা বলি, ৪০টা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ালেখা কি এক রকমই হয়? ডেফিনেটলিড নট। আবার প্রাইভেটের অনেকে সার্টিফিকেট বিক্রি করে। যেগুলো বিক্রি করত আপনার জানেন, অনেক বন্ধ হয়ে গেছে। আরো বন্ধ হয়ে যাবে। কেননা সরকারের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন খুব কঠিনভাবে নজরদারি করে। এখন খুব জবাবদিহির মধ্যে থাকতে হয়। আমাদের জনবল ঠিক আছে কি না, সব পজিশনের লোক ঠিক আছে কি না, ক্লাসরুম ঠিক আছে কি না—প্রতিটি জিনিস দেখা হয়। তবে এটা ভালোর জন্য; উন্নতির জন্য। আর সার্টিফিকেট বিক্রি করে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় বেশি দিন টিকতে পারবে না। চাকরির বাজারের বিষয়ে শুধু মেডিকেল কলেজের বর্তমান উদাহরণ দিলে আপনাদের বুঝতে সুবিধা হবে। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় যেমন হয়েছে, প্রাইভেট মেডিকেল কলেজও তেমন হয়েছে সারা দেশে ১০০টার মতো। এর মধ্যে কোনো কোনোটা শুরু করে মাত্র ২৫ জন ছাত্রছাত্রী দিয়ে। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোভিসি থাকা অবস্থায় মেডিকেল কলেজের সঙ্গে জড়িত ছিলাম। কেননা দেশের অনেক মেডিকেল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে। তখন বাংলাদেশের অনেক মেডিকেল কলেজ পরিদর্শন করেছি, আবার অনেকগুলোর গভর্নিং বডির মেম্বারও ছিলাম। যেহেতু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ৫০টি প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ। সেখানে আমরা যেটা বলি টিচার-ডাক্তার পাওয়া খুব কঠিন। সেখানে যে অবস্থা ছিল, মেডিকেল পড়তে গেলে কমপক্ষে ৫০ লাখ টাকা লাগে। এখন অনেক জায়গায় এর চেয়েও বেশি লাগে।
সরকারি একটি নিয়ম করা হয়; কোনো প্রাইভেট মেডিকেলে ২৫ জন (সিট) ছাত্রছাত্রী ভর্তি থাকলে কমপক্ষে ২৫০ বেডের হাসপাতাল লাগবে। ৫০ জন ছাত্রছাত্রী ভর্তি হলে ৫০০ বেডের হাসপাতাল লাগবে। ৭০ জন ছাত্রছাত্রী হলে ৭০০ বেডের হাসপাতাল লাগবে। এটা ভালো উদ্যোগ ছিল; কেননা এসব হাসপাতালে রোগী না থাকলে প্র্যাকটিক্যাল হবে না এবং ভালো ডাক্তারও তৈরি হবে না। তখন দেখলাম হাসপাতালে পর্যাপ্ত রোগীর বেড না বাড়িয়ে সিট বরাদ্দে অনুমোদনের জন্য তদবির শুরু করে ওই সব প্রাইভেট মেডিকেল। তখন সেখানে ডাবল মনিটরিং শুরু হলো। একদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, অন্যদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর মহাপরিচালকের পক্ষ থেকে। কেননা আমরা তো হাসপাতাল বুঝি না! আমরা বুঝি এডুকেশন, টিচার ঠিক আছে কি না? এসব প্রাইভেট মেডিকেলে একটা সিট বাড়ানো মানে বুঝতে পারতেছেন ৫০ লাখ! সঙ্গে আরো আছে…। আবার এসব হাসপাতালের ছাত্রছাত্রীরা পাঁচ বছরেও শেষ করতে পারে না। সাত বছর লাগে। এটার সঙ্গে টাকা জড়িত।
এ নিয়ম করার পর যে সমস্যা শুরু হলো, যেসব প্রাইভেট মেডিকেল ১০০ সিট অনুমোদন নিয়েছে, সে মেডিকেল ৫০ জন ছাত্রছাত্রীও ভর্তি করাতে পারে না। স্টুডেন্ট নাই। তবে এখন অভিভাবকরা অনেক সাবধান হয়ে গেছে, যে কোনো ভুঁইফোঁড় মেডিকেলে গিয়ে আমি রোগী মারা ডাক্তার হব না।
ডেন্টাল কলেজের ছাত্রদের অবস্থা তো আরো করুণ। ডেন্টাল কলেজগুলো যায় যায় অবস্থা। তারা এখন ১০ জন ছাত্রও পায় না। তাদের ১০০টা সিট দেওয়ার অনুমোদন দেওয়া আছে বা ৫০টা সিট দেওয়া আছে, ১০ জনও ডেন্টাল পড়তে চায় না। অথচ এ সিট নেওয়ার জন্য এর আগে বহু ধরনের তদবির করেছিল। বাকিটা আমি বলতে চাই না। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের একই অব্স্থা।
বর্তমানে এত প্রতিযোগিতার যুগে ফাঁকি দিয়ে সার্টিফিকেট বিক্রির কোনো সুযোগ নেই। এখন সরকার যদি নজরদারি নাও করে স্থায়ী ক্যাম্পাস নিয়ে অনেক প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আটকে যাবে। এখন গভর্নমেন্ট যেটা করেছে স্থায়ী ক্যাম্পাস করতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বলে শিক্ষা নয়, সেখানে খেলাধুলার মাঠ লাগবে। এক্সট্রা কারিকুলাম লাগবে।
অভিযোগ ছিল প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় গ্যারেজের পরে, শপিংমলের ভবনের ওপরে। আসলে এটা আমাদের দেশে নয়, আমেরিকাতেও এমন আছে। আমেরিকার অনেক টপ র্যাঙ্কিংয়ের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসও এমন আছে। আমাদের দেশের মতো সার্টিফিকেট বিক্রি করার ইউনিভার্সিটি কিন্তু আমেরিকাতেও আছে।
এ ক্ষেত্রে ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির স্থায়ী ক্যাম্পাস আশুলিয়ায় চলে গেছে। সেখানে খেলার মাঠ হবে। যা যা সুবিধা থাকা দরকার সবই আছে। এই জিনিসগুলো আসতে আসতে সময় তো লাগবে। আমরা যদি বলি গত ১৫ বছরেও ঢাকা ব্শ্বিবিদ্যালয়ের মতো মানে যাচ্ছে না। সেটা ৫০ বছর পরে সে মানে অবশ্যই যাবে। এটা তো মালিকানা বলতে কিছু নাই। আপনারা তো জানেন। এটার মালিক বিশ্ববিদ্যালয় আর বিশ্ববিদ্যালয় মালিক। যত প্রপার্টি আছে, সবই এসব প্রপার্টি ইস্টার্নের নামে। মালিক পরিবর্তন হতে পারে, কিন্তু সম্পদ বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে। এটা আস্তে আস্তে হবে; এখানে আমরা অনেককে সুযোগ দিয়ে থাকি।
এ কারণে অনেক নিম্ন ও মধ্যবিত্তের ছাত্রছাত্রী টিউশনি করে জীবন চালায়। টিউশনি করে তো প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার কথা না। এটা পড়ার কথা ছিল সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা পড়ে তারা। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে তো পড়ার চাপ অনেক বেশি। তাই কখন পড়বে, কখন টিউশনি করবে। এখানে বার্ষিক ক্যালেন্ডারের নিয়মানুযায়ী পরীক্ষা পড়াশোনা শেষ করতে হয়।
ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির সুবিশাল লাইব্রেরিতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা। ছবি : মোহাম্মদ ইব্রাহিম
এনটিভি অনলাইন : একসময় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ছিল গবেষণার প্রাণকেন্দ্র। বোসকণাসহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে অনেক বিশ্বমানের গবেষণা রয়েছে বাংলাদেশের ছাত্র-শিক্ষকদের। ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটিকে এ পর্যায়ে গবেষণার জন্য আপনার কোনো পরিকল্পনা আছে কি না?
অধ্যাপক ড. সহিদ আকতার হুসাইন : এ ধরনের পরিকল্পনা অবশ্যই আছে। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এখনো শুধু টিচিং পর্যায়ে রয়েছে। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কিন্তু এখন সে ফান্ড নেই। তবে এ জন্য সরকারি অর্থ বরাদ্দ প্রয়োজন। এখানে অর্থের জন্য আমরা এসব প্রকল্পে হাত দিতে পারছি না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এখন নাম্বার ওয়ানে রয়েছে। সেখানেও গবেষণার জন্য বরাদ্দ খুবই অপ্রতুল। সেখানে প্রথিতযশা বিজ্ঞানী শিক্ষকরা রয়েছেন, তাই সেখানে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে কিছু ফান্ড দেওয়া হয়। বাকিটা বিভিন্ন সংস্থা এবং উন্নত রাষ্ট্রগুলোর সহায়তায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এসব গবেষণা করে যাচ্ছে, যা পর্যাপ্ত নয়। এখানে আমারা যে টিউশন ফি নিই, তা শিক্ষকদের বেতনে শেষ হয়ে যায়। তবে ইদানীং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে হেকাপ প্রজেক্টের আওতায় কোটি কোটি টাকা পাওয়া যাচ্ছে। এখানে জুট জেনমের এবং ইলিশ মাছের প্রজনন নিয়ে গবেষণা হয়েছে। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে সে পরিমাণ বরাদ্দ নেই। তবুও আমরা ৫০ হাজার এক লাখ টাকা দিয়ে ছোটখাটো কাজ করাতে পারি; শিক্ষকরা কিছুটা মাস্টার্স লেভেলের কাজ করতে পারবে। এটা করতে হলে সরকারি বরাদ্দ দেওয়া প্রয়োজন। সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে যদি বরাদ্দ দেওয়া হয়, তাহলে কিছুটা হলেও করা যাবে। সারা বিশ্বে উচ্চশিক্ষা হচ্ছে ইন্ডাস্ট্রি ইউনিভার্সিটি অ্যালায়েন্স। আমাদের দেশের ইন্ডাস্ট্রিগুলো যদি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের সমস্যাগুলো নিয়ে আসে এবং ফান্ড দেয় তাহলে আমরা তাদের সমস্যাগুলো সমাধান করতে পারি। আমাদের (ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি) ত্রিপোলির ভালো ল্যাব আছে, কম্পিউটার সায়েন্স, বিজনেসের কোনো সমস্যা নিয়ে এলে এসব সমস্যা আমরা গবেষণা করে সমাধান করতে পারি। আমাদের ব্যবসায়ীরা তো ফল ভোগ করবে। বিপরীতে আমরা গবেষণা করে দক্ষ জনশক্তি তৈরি করতে পারব। আমাদের দেশের উজ্জ্বলতা বাড়বে। কিন্তু আমাদের দেশের সমস্যা হচ্ছে ব্যবসায়ীরা টাকা দিয়েই হিসাবটা আগে চায়। কম হলো না বেশি হলো এসব আগে চিন্তা করে। অথচ বাইরের দেশগুলো এগিয়ে যাওয়ার কারণ হলো তারা যত টাকা লাগে, এ নিয়ে তাদের মাথাব্যথা নেই। তারা কোনো প্রোগ্রামের সমস্যা নিয়ে এলে প্রথমে সেই সমস্যার সমাধান চায়।
বাংলাদেশ যদি বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে একটি বিষয় আবিষ্কার করতে পারে, একটি গবেষণা করতে পারে, তাহলে দেশ মধ্যম আয়ের দেশ থেকে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হয়ে যাবে। কিন্তু আমাদের দেশের ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্টরা দ্রুত সমাধান চায়। তারা কোন মেশিনের কোন সমস্যা দেখছে; দ্রুত বিদেশ থেকে ওই মেশিনটা নিয়ে আসছে। আর আমার এখানে যদি তারা করত দুই লাখ টাকা দিয়ে করলে সমাধান করতে পারত। কিন্তু সেই সময় তাদের হাতে নেই। তবে অনেক ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্টরা এখন দিচ্ছে যে কারণে তারা ফলও পাচ্ছে। বিশেষ করে ফার্মাসিউটিক্যাল ক্ষেত্রে এবং বেসিক প্রোডাক্টের ক্ষেত্রে গার্মেন্টসে এবং ডায়িংয়ের ক্ষেত্রে প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানকে দেওয়ার কারণে অনেকে সেটার ফলও পাচ্ছে। তারা এখন রপ্তানি করছে।
এনটিভি অনলাইন : ইস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা বর্তমানে কর্মক্ষেত্রে কোনো অবদান রাখতে পারছেন কি না?
অধ্যাপক ড. সহিদ আকতার হুসাইন : দেখুন উচ্চশিক্ষার স্লোগান বর্তমানে পরিবর্তন হয়েছে। চাকরির বাজারে যোগ্য কর্মী তৈরি করছে ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি। আমরা নিজেরা এমপ্লয়ি নয়, এমপ্লয় বানানোর চেষ্টা করছি। এখানকার আমাদের ছাত্রছাত্রীরা অনেকে বিচারক হয়েছে; ব্যাংকের এমডি পর্যায়ে রয়েছে এবং অনেক করপোরেট পর্যায়ে রয়েছে। অনেক ছাত্র বিদেশে ভালো পর্যায়ে রয়েছে। সব জায়গায় একটি প্ল্যাটফর্ম রয়েছে; যেমন অক্সফোর্ডের একজন শিক্ষক ভাইভা বোর্ডের অপর অক্সফোর্ডের ছাত্র পেলে তখন তার প্রতি দুর্বলতা কাজ করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো শিক্ষক ভাইভা বোর্ডে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো ছাত্র পেলে তার প্রতি দুর্বলতা কাজ করে। এটা দোষের কিছু নয়। প্রকৃতিগতভাবে এটা হয়ে আসছে। এভাবে এ ভার্সিটির ছাত্রছাত্রীরা যখন একসময় একটি পর্যায়ে যাবে সে পর্যায়ে যেতে সময় লাগবে। এ র্যাঙ্কিং কীভাবে হবে। যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীরা একটি পর্যায়ে যাবে, তখনই এটির সুনাম ছড়িয়ে পড়বে।
রাজধানীর ধানমণ্ডির ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাসে পরিচয়পত্র দেখিয়ে প্রবেশ করছেন শিক্ষার্থীরা। ছবি : মোহাম্মদ ইব্রাহিম
এনটিভি অনলাইন : জঙ্গিবাদ, মাদক কিংবা অনৈতিক কাজের কোনো প্রভাব এ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে কি না?
অধ্যাপক ড. সহিদ আকতার হুসাইন : এখানে ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষার পাশাপাশি নৈতিক শিক্ষা দেওয়া হয় এবং সাইকোলজিস্টসহ বিভিন্ন কোর্স রয়েছে, মেন্টাল হেল্প ট্রেনার রয়েছে, যারা ছাত্রছাত্রীদের ভালো মানুষ হওয়ার জন্য শিক্ষা দিয়ে থাকেন। অনেক প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে লাইব্রেরিতে জঙ্গি বই পাওয়া গেছে। গোড়াতে গলদ থাকলে সমস্যা তো হবে। কিন্তু এগুলোর কোনো সুযোগ নেই। এখানে সবাই উদার এবং প্রগতিশীল। কেননা আমরা অনেক শক্তহাতে এসব দমন করি। এ বিশ্ববিদ্যালয় ১৫ বছর ধরে চলছে। এখন পর্যন্ত কোনো ছাত্র এসব কাজে জড়িত হতে পারেনি। এ ধরনের কোনো অভিযোগ নেই। এ ছাড়া রাজনৈতিক বা কোনো অন্দোলনে ও এখানকার ছাত্রছাত্রীরা যেতে পারে না। তারা কোনো সমস্যা হলে সরাসরি আমার সঙ্গে অলোচনা করতে পারে। আমাদের প্রশাসন এবং শিক্ষকরা জঙ্গিবাদ এবং যৌন হয়রানির বিষয়ে খুবই কঠোর। এ ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স। শুধু ছাত্রছাত্রী নয়, শিক্ষকরাও এখানে কঠোর নিয়মশৃঙ্খলার মেনে চলেন। আমি এসব দিক থেকে এ বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে অনেক সুখী। এখানে কোনো অতিথি এলেও পরিচয় এবং অনুমতি নিয়ে প্রবেশ করতে হয় এবং ছাত্রছাত্রীরা আইডিকার্ড নিয়ে প্রবেশ করতে হয়। অন্যথায় ৫০ টাকা জরিমানা গুনে ওই দিনের পাস নিয়ে প্রবেশ করতে হয়। যাতে সে এ ভুলটা না করে। এ কারণে জঙ্গিবাদ, মাদক, যৌন হয়রানি করার সুযোগ নেই। ক্যাম্পাসে এটা কঠোরভাবে মেনে চলা হয়। তবে বাসায় কে, কী করে সে দায়িত্ব তো আর আমার না। আমাদের যখন স্থায়ী ক্যাম্পাস হবে তখন হোস্টেল হলে আমরা এসব কঠোরভাবে মনিটর করব।
এনটিভি অনলাইন : বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিশেষজ্ঞদের ব্যাপক কদর রয়েছে; ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি এ ধরনের দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে কী পরিকল্পনা রাখছে?
অধ্যাপক ড. সহিদ আকতার হুসাইন : আমরা অবশ্যই চেষ্টা করছি; আমাদের দুর্বলতা হলো ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির ১৫ বছরে বিশ্ববিদ্যালয় পাঁচটি মাত্র বিভাগ নিয়ে চলছে। কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং, বিবিএ, এমবিএ, আইন এবং ইংরেজি বিভাগ আছে। আমরা আইটি সেক্টরকে গুরুত্ব দিচ্ছি। এখানে আমাদের গ্র্যাজুয়েট ছেলেরা খুবই ভালো করছে। ক্রিয়েটিভ আইটি নামে একটি আইটি সংস্থা রয়েছে সেখানে আমাদের গ্র্যাজুয়েটরা কাজ করে বেশ সুনামের সঙ্গে। আমাদের স্থায়ী ক্যাম্পাস হয়ে যাওয়ার পর এ বিষয় নিয়ে আমাদের আরো পরিকল্পনা রয়েছে।
এনটিভি অনলাইন : গবেষণা ও শিক্ষার মান উন্নয়নে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে সরকার থেকে কী কী সুবিধা পাচ্ছেন। আরও কী ধরনের সুবিধা দরকার বলে মনে করেন?
অধ্যাপক ড. সহিদ আকতার হুসাইন : সরকার থেকে কোনো গবেষণার জন্য কোনো সুবিধা নেই। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিভিন্ন প্রজেক্টগুলো যেভাবে পায় সেগুলো প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়কে ও দিতে হবে। এ ছাড়া সরকার থেকে যদি স্থায়ী ক্যাম্পাসের জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কিছুটা জমি বা কমমূল্যে যদি জায়গা দেওয়া যায় তাহলে সেই টাকাটা গবেষণা বা ছাত্রছাত্রীদের কল্যাণে ব্যয় করা যায়। কেননা এটাতো একটি ইন্ডাস্ট্রি। জনসংখ্যাকে জনসম্পদে রূপান্তর করার জন্য এর চেয়ে ভালো কানো জায়গা আর নেই। বিশ্বব্যাংক হেকাপ প্রজেক্ট এর আওতায় শিক্ষাখাতে টাকা দিচ্ছে এটা তো ইতিহাস। তারা প্রথম চিন্তা করছিল এটা লোকসান খাত। কিন্তু পরে দেখলো না এটাতো লাভবান প্রজেক্ট। এখন আরো বেশি বিনিয়োগ করছে। এরপরে হিট নামের সংস্থাটি কলেজ পর্যায়ে ইনভেস্ট করছে। শিক্ষার মানকে উন্নয়নের জন্য।
এনটিভি অনলাইন : ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি থেকে পড়াশোনা শেষ করে শিক্ষার্থীরা কর্মক্ষেত্রে কেমন সাফল্য রাখছে। এতে কর্তৃপক্ষের কোনো অবদান আছে কী?
অধ্যাপক ড. সহিদ আকতার হুসাইন : এটা মিক্সড বলব। এখানে ইস্টার্নের প্রতিষ্ঠানগুলোতে তাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজের ক্ষেত্রে রেফারেন্স দেওয়া হয়।
এনটিভি অনলাইন : বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা ভূমিকা থাকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে শিক্ষাবিনিময় করার, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এই বিশ্ববিদ্যালয়কে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে আপনার কোনো উদ্যোগ আছে কি?
অধ্যাপক ড. সহিদ আকতার হুসাইন : আমাদের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে এমইউ আছে, আমাদের ক্রেডিট ট্রান্সফার আছে এবং কম টিউশন ফিতে ক্রেডিট ট্রান্সফার করতে পারে। আমাদের আরো উদ্যোগ আছে ভালো ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে ক্রেডিট ট্রান্সফারের সুবিধা করার জন্য। এ ছাড়া আমাদের কিছু শিক্ষক চাইনিজ ল্যাংগুয়েজের ওপর কোর্স করে এসেছেন, জাপানিজ ল্যাঙ্গুয়েজের ওপর কোর্স চালু করার জন্য আমরা উদ্যোগ নেব। কিছুদিন আগে কানাডার একটি ইউনিভার্সিটি থেকে এসেছে আমাদের সঙ্গে এমইউ স্বাক্ষর করার জন্য। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মান বৃদ্ধির জন্য এবং মান বাড়ানোর জন্য আমরা এসব কাজ করছি।
এনটিভি অনলাইন : আপনার শিক্ষকতা জীবনে সবচেয়ে সেরা ছাত্র কে? তাকে পেয়েছেন কী?
অধ্যাপক ড. সহিদ আকতার হুসাইন : আমার অনেক ছাত্র ছিল। আমার সেরা ছাত্র ছিল ড. আক্তার হোসেন মোল্লা। সে এখন আমেরিকায় থাকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সে সমাজবিজ্ঞান পড়ে পরে মাইক্রোবায়োলজিতে পড়েছিল। তার আবিষ্কার ছিল, ‘ইনভিট্টো’ ভাইরাস সে তৈরি করে। ‘অ্যাবোট’ নামে যে কোম্পানিতে সে চাকরি করে, তার অধীনে প্রায় সাতশ দেশি-বিদেশি পিএইচডিধারী রয়েছে, যাদের বস সে। সে এবার আমার ইউনিভার্সিটিতে আসবে; বক্তব্য দেওয়ার জন্য। এত বছর পরও সে খুবই সাধারণ জীবনযাপন করছে। এত বছর আমেরিকায় থাকে, কিন্তু সে বাংলায় সাবলীল ভাষায় কথা বলে। কিছুদিনের মধ্যে সে দেশে আসবে এবং আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে সে ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশে বক্তব্য দেবে।
আমার এ রকম আমার অনেক ছাত্র রয়েছে যারা ডিআইজি পদে রয়েছে। এসপি আছে ডজন খানেক হবে। এএসপি রয়েছে ২৫ জনের মতো। এ রকম অনেক বড় বড় পর্যায়ে রয়েছে। যেগুলো আমাকে খুবই অনুপ্রাণিত করে। এ রকম হাজার ছাত্রছাত্রী রয়েছে যারা এসে বলে স্যার আমি আপনার ছাত্র ছিলাম।
এনটিভি অনলাইন : আপনি যখন ছাত্র ছিলেন আপনার জীবনের সেরা শিক্ষক কে ছিলেন?
অধ্যাপক ড. সহিদ আকতার হুসাইন : আমার সেরা শিক্ষক ছিলেন অধ্যাপক ড. আমিনুল ইসলাম। উনি আমার শিক্ষাগুরু। উনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ছিলেন। এ ছাড়া ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ছিলেন। তিনি দীর্ঘ বছর মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের ডিন ছিলেন। উনি খুবই সহজ ভাষায় পড়াতেন। ছাত্ররা যে ভাষায় বুঝতে সক্ষম সে ভাষায় উনি পড়াতে পারতেন এবং স্বাভাবিক জীবন যা ১৫ কারণে উনাকে সবাই মাটির আমিনুল স্যার নামে ডাকত।
ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির ধানমণ্ডির ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরা। ছবি : মোহাম্মদ ইব্রাহিম
এনটিভি অনলাইন : আপনার স্মরণীয় ও জীবনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা যদি বলেন…।
অধ্যাপক ড. সহিদ আকতার হুসাইন : আসলে আমার শিক্ষক হওয়ার ইচ্ছে ছিল না। আমার পছন্দের ছিল ডিপ্লোম্যাসি। স্বপ্ন ছিল রাষ্ট্রদূত হবো। কারণ, আমি টেবিল টকে খুবই ভালো। এখনো ইচ্ছে আছে আমি যদি সুযোগ পাই রাষ্ট্রদূত হওয়ার। সরকার যদি ইচ্ছে করে আমাকে নিয়োগ দেওয়ার তাহলে আমি যেতে পারি। কারণ আমি ড্রিম তৈরি করি। ড্রিম দেখে লক্ষ্যে পৌঁছাই না। বরং জায়গায় গিয়ে ড্রিম তৈরি করি। পলিটিকসে আসার ইচ্ছে ছিল না। কিন্তু শিক্ষক হওয়ার পর চিন্তা করলাম পরিচিতির দরকার আছে। তাই শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে ছোট্ট একটি পদে নির্বাচন করলাম জিতে গেলাম। এরপর পেয়ে বসল। তবে শিক্ষক সমিতির বাইরে যাওয়ার ইচ্ছে হয়নি। এখনো নেই।
এনটিভি অনলাইন : উচ্চশিক্ষা নিতে গিয়ে মজার কোন গল্প যদি থাকে…
অধ্যাপক ড. সহিদ আকতার হুসাইন : আমি যখন অস্ট্রেলিয়াতে পিএইচডি ডিগ্রি করি, সরকার থেকে একটি স্কলারশিপ এলো। অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম ছিলেন ডিন। প্রত্যেক বিভাগ থেকে একজন করে শিক্ষকের নাম দিতে হবে। এরপর নাম দেওয়ার পর আমার ডিপার্টমেন্ট থেকে আরেকজনকে করল। যখন টাইপ হতে যাচ্ছে তখন একজনের পুরুষের পরিবর্তে মহিলার নাম পরিবর্তন হলো। আমরা তখন চিন্তায় পড়ে গেলাম আমাদের নামও বাদ যাই কি না। অস্ট্রেলিয়াতে উইমেনকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। মজার বিষয় হলো, সবার আগে আমারটা হলো। ছয় মাস পরে একজন মহিলা শিক্ষক চলে গেছেন। তিনি আর ফিরে আসেননি।
এনটিভি অনলাইন : নতুন করে যারা ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হতে চান, তাদের উদ্দেশে কিছু বলুন। উপাচার্য হিসেবে ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি নিয়ে আপনার পরিকল্পনা কী কী রয়েছে?
অধ্যাপক ড. সহিদ আকতার হুসাইন : আমার ছাত্রদের বলব, নিজস্ব ক্যাম্পাসের একটা স্বকীয়তা ও উজ্জ্বলতা আছে। এটা হলো তার পরিচয়; অ্যালমামেটার। যখন আমরা এখানে থাকি তখন বলা হয় ভাড়া করা বাড়িতে থাকি। আর যখন নিজস্ব ক্যাম্পাস হলো তখন বলা হলো, ঢাকা থেকে অনেক দূর হয়ে গেছে। এই যে একটা ডিলেমা, এটা থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে। আমরা স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়া-আসার জন্য ফ্রি ট্রান্সপোর্টের সুবিধা করে দিচ্ছি। নতুন হিসেবে এটা করে দিচ্ছি, কিন্তু ভবিষ্যতে হয়তো এটা দিতেও পারব না। কিন্তু যদি মেট্রো সার্ভিস চালু হয়, তখন মেট্রোরেল থেকে নামলে উত্তরা থেকে মাত্র ১০ মিনিটের পথ। আমি মনে করি, যেসব ছাত্রছাত্রী ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয় তারা উপযুক্ত শিক্ষা পাবে, উপযুক্ত নাগরিক হতে পারবে, কর্মক্ষেত্রে দেশের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারেও তারা অবস্থান করে নিতে পারবে। কেননা এখানে শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী সবাই সচেতন। আশুলিয়ায় স্থায়ী ক্যাম্পাসে ছাত্রছাত্রীদের চিকিৎসা সুবিধা দিতে ইতিমধ্যে এনাম মেডিকেলের সঙ্গে আমরা চুক্তি করেছি; আমরা ছাত্রছাত্রীদের জরুরি ক্ষেত্রে যেন কম খরচে জরুরি চিকিৎসা পায়, শিক্ষা, ক্যাম্পাসকালীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা, খাবারে মান, মানসিক চিকিৎসা সব ধরনের সুবিধা দেওয়া হবে। আমার বিশ্বাস, ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি গত ১৫ বছরে যে পরিমাণ এগিয়েছে, আগামী পাঁচ বছরে তার চেয়ে বেশি এগিয়ে নিতে পারব।
এনটিভি অনলাইন : স্যার, এনটিভি অনলাইনের পক্ষ থেকে আপনাকে ধন্যবাদ।
অধ্যাপক ড. সহিদ আকতার হুসাইন : আপনাকে এবং এনটিভি অনলাইনের পাঠকদেরও অনেক শুভেচ্ছা ও ধন্যবাদ জানাচ্ছি।