‘আমরা মারা গেলে কি প্রমাণ হতো বিশাল ঘটনা ঘটেছে’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে হামলাকে ‘সামান্য ঘটনা’ হিসেবে মন্তব্য করায় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফের করা মন্তব্যের সমালোচনা করেছেন শামসুন্নাহার হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি নিপু ইসলাম তন্বী।
আজ বুধবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে আয়োজিত এক মানববন্ধনে এ সমালোচনা করেন তন্বী।
বিতর্কিত কমিটির প্রতিবাদে মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রীদের ওপর নির্মম হামলা ও শারীরিক লাঞ্ছনার প্রতিবাদে এ মানববন্ধন করা হয়। এ সময় দেড় শতাধিক পদবঞ্চিত সাবেক নেতানেত্রী উপস্থিত ছিলেন, যারা নিজেদের সক্রিয় বলে দাবি করেন।
মানববন্ধনকারীদের হাতে বিভিন্ন ফেস্টুনে ‘জামায়াত-শিবির ছাত্রদল অনুপ্রবেশকারীদের কমিটি মানি না’, ‘আমাদের বোনদের ওপর হামলা কেন বিচার চাই, বিচার চাই’, ‘অবৈধ কমিটি মানি না’, ‘অছাত্রদের আদু ভাইদের কমিটি মানি না’, ‘ক্যাম্পাস থেকে বহিষ্কৃতদের কমিটি মানি না’, ‘বঙ্গবন্ধুর ছাত্রলীগে অছাত্রদের স্থান নেই’, ‘চাকরিজীবীব্যবসায়ীদের কুটিল কমিটি মানি না’ ইত্যাদি লেখা দেখা যায়।
মানববন্ধনে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির ২ নম্বর উপসাংস্কৃতিক সম্পাদক ও রোকেয়া হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি বি এম লিপি আক্তার বলেন, ‘যাদের কমিটিতে রাখা হয়েছে তাদের ২২ জনের আগে কোনো পদ ছিল না। অথচ তাদের পদ দেওয়া হয়েছে। আমাদের ছোট পদ দেওয়া হয়েছে বা আমরা পদ না পাওয়ার জন্য আন্দোলন করছি না। বরং কমিটিতে মাদক মামলার আসামি, বিবাহিত, অছাত্র, ছাত্রদল, রাজাকারের সন্তানদের পদ দেওয়া হয়েছে, তার জন্য আমরা আন্দোলন করছি।’
মানববন্ধনে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির ৪ নম্বর উপসাংস্কৃতিক সম্পাদক নিপু ইসলাম তন্বী বলেন, ‘আর কতটুকু লাঞ্ছিত হলে তাদের মনে হতো যে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নারীদের ওপর নির্যাতন হয়েছে? প্রশ্ন ওঠে- আমরা মারা গেলে কি সত্যতা প্রমাণ হতো যে এখানে একটি বিশাল ঘটনা ঘটেছে?’
তন্বী বলেন, সত্যিকার অর্থে বলতে আজকে দুঃখ লাগছে ছাত্রলীগের নিবেদিত প্রাণ হিসেবে মধুর ক্যান্টিনের মতো জায়গায় ছাত্রলীগের কিছু ছোট ও বড় ভাই দ্বারা নির্যাতিত হই, এরপর কোনো মা, বাবা, ভাই, বোন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ করার জন্য তাদের সন্তানকে পাঠাবে না।
নতুন উপসাংস্কৃতিক সম্পাদক বলেন, ছাত্রলীগের নারী নেত্রীরা বারবার নির্যাতিত হচ্ছে। আর কত নির্যাতন হলে তাদের টনক নড়বে? আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় লোকদের কাছ থেকে আমরা কবে বিবৃতি পাব বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নারী নেত্রীদের ওপর সত্যিকার অর্থে বিশাল রকমের হামলা হয়েছে। সেটি একটি প্রশ্ন থেকে যায়।
ছাত্রলীগের ২৯তম জাতীয় সম্মেলনের এক বছর পর গত ১৩ মে পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেন ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেতা। ওই কমিটিতে জায়গা না পেয়ে কমিটি পুনর্বিবেচনার জন্য সেদিন বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেন পদবঞ্চিতরা। সেখানে হামলা চালায় পদপ্রাপ্তরা। এ নিয়ে সন্ধ্যায় মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলন করতে গেলে সেখানেও হামলার শিকার হন পদবঞ্চিতরা।
এ ঘটনায় দেশজুড়ে সমালোচনার সৃষ্টি হলে পরের দিন মঙ্গলবার ‘ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে মারামারি খুবই সামান্য একটি ঘটনা’ বলে উল্লেখ করেন আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ।
মঙ্গলবার দুপুরে ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর সঙ্গে যৌথসভা শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন হানিফ। ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক আলোচনার মাধ্যমে ওই সমস্যার সমাধান করে ফেলবেন বলেও আশা প্রকাশ করেন হানিফ।
হানিফ বলেন, ‘অনেকের প্রত্যাশা ছিল হয়তো বড় পদ পাবে, তারা হয়তো সে পদ না পেয়ে অপেক্ষাকৃত ছোট পদ পেয়েছে। এজন্য হয়তো দু-একজনের ক্ষোভ থাকতে পারে। তবে গতকাল (মঙ্গলবার) আমরা যেরকম শুনেছি, মধুর ক্যান্টিনে যে ঘটনা ঘটেছে, এটা অত্যন্ত ছোট্ট সামান্য ঘটনা। এটা নিয়ে খুব বেশি উদ্বেগ প্রকাশ করার কিছু নেই। আমরা আশা করি দলের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক বসে এটা ঠিক করে নিতে পারবেন। সবাই ঐক্যবদ্ধভাবেই কাজ করবেন।’
আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আওয়ামী লীগ একটি বৃহৎ সংগঠন। যে সংগঠনের লাখ লাখ নেতাকর্মী মুজিব আদর্শের সৈনিক হিসেবে আছেন। এমন একটি সংগঠন যার হাজার হাজার নেতাকর্মী আছে, লাখ লাখ নেতাকর্মী আছে। তাদের মধ্যে যোগ্য নেতারা সবাই পদ-পদবির প্রত্যাশা করে। কিন্তু সবাইকে তো আর পদ-পদবি দেওয়া সম্ভব হয় না। সেই সুযোগও হয় না।’
হানিফ বলেন, ‘যেহেতু ছাত্রসমাজ তরুণ। তাদের মধ্যে হয়তো ক্ষোভটা কোনো কোনো সময় একটু বেশি আকারে দেখা যায়। এ ছাড়া ছাত্রলীগের অনেকে ভেবেছিলেন বড় পদ পাবেন, সেটা হয়তো পাননি। তারা হয়তো অপেক্ষাকৃত ছোট পদ পেয়েছেন। এই ধরনের দু-একজনের ক্ষোভ থাকতে পারে।’