ইবিতে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে বিক্ষোভ, ছাড়া পেলেন ২২ শিক্ষার্থী
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রির দাবিতে আন্দোলনকারী ২২ শিক্ষার্থীকে আটকের ১২ ঘণ্টা পর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আনিছুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র মতে, ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ থেকে বিজ্ঞান অনুষদ বিভক্ত করে তিনটি অনুষদ করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিভক্ত হওয়া নতুন তিন অনুষদ হচ্ছে বিজ্ঞান, জীব বিজ্ঞান এবং প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদ। নতুন বৃদ্ধি হওয়া প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের ২০১৮-১৯ ও ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি দেওয়া হবে বলে জানা গেছে। একই অনুষদের ২০১২-১৩, ২০১৩-১৪, ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রির মান দেওয়ার দাবিতে গতকাল মঙ্গলবার থেকে ক্যাম্পাসের ড. ওয়াজেদ মিয়া বিজ্ঞান ভবনে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার সারাদিনের আন্দোলন শেষে কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোনো সাড়া না পাওয়ায় রাতে অনশন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। পরে ওই ভবনে ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. পরেশ চন্দ্র বর্মণ এবং প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মমতাজুল ইসলামকে অবরুদ্ধ করে রাখেন শিক্ষার্থীরা। ভোর ৫টার দিকে ঘটনাস্থলে র্যাব ও পুলিশ গিয়ে আন্দোলনকারী ২২ জনকে আটক করে। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। ছাত্র উপদেষ্টা ও ডিনকে পুলিশ ও র্যাব অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে মুক্ত করে।
এদিকে আজ বুধবার সকাল ৯টা থেকে ক্যাম্পাসে ১৪৪ ধারা জারি করে সব ধরনের মিটিং, মিছিল ও সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ।
সকাল ৯টার দিকে শিক্ষার্থীরা জরুরি অবস্থা ভঙ্গ করে প্রশাসন ভবনের সামনে আন্দোলন শুরু করে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ১২ ঘণ্টা পর তাদের ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ। পরে এক জরুরি সভায় শিক্ষার্থীদের ডিগ্রির বিষয়ে প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের অনুষদীয় কমিটিকে দায়িত্ব অর্পণ করে প্রশাসন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এস এম আব্দুল লতিফ বলেন, আগামী ৩১ তারিখের মধ্যে ডিগ্রির বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবে অনুষদীয় কমিটি। কমিটির প্রতিবেদন পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে কর্তৃপক্ষ।
ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আনিছুর রহমান বলেন, আটক হওয়া ২২ শিক্ষার্থীকে কুষ্টিয়া পুলিশ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর জাহাঙ্গীর শাহাদাতের হাতে হস্তান্তর করেছে।
বিভিন্ন খাতে ফিস কমানোর দাবিতে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের প্রধান গেট অবরুদ্ধ করে বিক্ষোভ করে। ছবি : এনটিভি
এদিকে বুধবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে ভর্তি, পরিবহন, সেশন ফিসহ বিভিন্ন খাতে ফিস কমানোর দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৭-১৮ ও ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করে। পরে ক্যাম্পাসের প্রধান গেট অবরুদ্ধ করে তারা। ফলে বুধবার সারাদিন ক্যাম্পাসের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী বহনকারী কোনো পরিবহন ক্যাম্পাস ত্যাগ করতে পারেনি।
দীর্ঘ কয়েক মাস থেকে শিক্ষার্থীরা যাবতীয় ফি কমানোর দাবিতে আন্দোলন করে আসছে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে বুধবার ফিস কমানোর বিষয়টি খতিয়ে দেখতে তিন সদস্য বিশিষ্ট রিভিউ কমিটি গঠন করেছে কর্তৃপক্ষ।
কমিটিতে হিসাব বিজ্ঞান ও তথ্য পদ্ধতি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. কাজী আখতার হোসেনকে আহ্বায়ক, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. আহসানুল হক আম্বিয়াকে সদস্য এবং অর্থ ও হিসাব শাখার উপ-পরিচালক মিন্টু কুমার বিষ্ণুকে সদস্য সচিব করা হয়েছে। কমিটিকে যথা দ্রুত সম্ভব দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভর্তি, সেশনসহ যাবতীয় ফিস ইবির ফিসের সঙ্গে রিভিউ প্রতিবেদন কর্তৃপক্ষের কাছে দিতে বলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এস এম আব্দুল লতিফ।
ফিস রিভিউ কমিটি ঘোষণার পরও শিক্ষার্থীরা প্রশাসন ভবনের সামনে অবস্থান নেয়। পরে কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে অবরোধ প্রত্যাহার করে।
ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আনিছুর রহমান বলেন, শিক্ষার্থীদের ডেকে দাবির বিষয়ে আশ্বস্ত করেছে প্রশাসন। পরে আন্দোলন স্থগিত করে তারা।