জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, মুক্তিসংগ্রাম ও সাংস্কৃতিক উৎসব
বিগত দুই বছরের মতো এবারও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ২৫-২৭ মার্চ, তিন দিনব্যাপী মুক্তিসংগ্রাম সাংস্কৃতিক উৎসব আয়োজন করতে যাচ্ছে। জীবন ও সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে, বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের মাঝে মহান মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক চেতনা ছড়িয়ে দিতে বিগত ২০১৭ সাল থেকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় মুক্তিসংগ্রাম সাংস্কৃতিক উৎসব আয়োজন করছে।
বিশেষত, ২০১৭ সালে গৃহীত রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত মোতাবেক ২৫ মার্চকে যথাযোগ্য মর্যাদায় ‘জাতীয় গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালন করা হচ্ছে। রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে বাংলাদেশে একমাত্র জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ই এ ধরনের তিন দিনব্যাপী অভিনব আয়োজন হাতে নিয়েছে। এ ছাড়া, ২৫ মার্চকে আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস হিসেবে পালনে জাতিসংঘের স্বীকৃতি আদায়ের প্রক্রিয়ায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক নেওয়া এই পদক্ষেপ তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্যরাতে বর্বর পাকিস্তানি হানানদার বাহিনী তাদের পূর্ব পরিকল্পিত অপারেশন সার্চলাইটের নীলনকশা অনুযায়ী আন্দোলনরত বাঙালিদের কণ্ঠ চিরতরে স্তব্ধ করে দেওয়ার ঘৃণ্য লক্ষ্যে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে ইতিহাসের সবচেয়ে বর্বরোচিত ও নিকৃষ্টতম গণহত্যা শুরু করে। একাত্তেরর ২৫ মার্চের গণহত্যা শুধু একটি রাতের হত্যাকাণ্ডই ছিল না, এটা ছিল মূলত বিশ্ব সভ্যতার জন্য এক কলঙ্কজনক গণহত্যার সূচনা মাত্র।
২০১৭ সালের ১১ মার্চ জাতীয় সংসদে ২৫ মার্চ জাতীয় গণহত্যা দিবস পালনের প্রস্তাব সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়। অক্সফোর্ড ডিকশনারি অনুযায়ী গণহত্যাকে সংজ্ঞায়িত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেদিন সংসদে বলেছিলেন, “‘জাতিসংঘ ১৯৪৮ সালের ৯ ডিসেম্বর ‘জেনোসাইড কনভেনশন’ গ্রহণ করে। ২০১৫ সালের ৯ ডিসেম্বর ‘জেনোসাইড ডে’ হিসেবে ঘোষণা দেয়। কাজেই আমাদের কাছে সেই সুযোগ রয়েছে, জাতিসংঘের কনভেনশন অনুযায়ী আমরা ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস হিসেবে গ্রহণ করতে পারি।”
৯ ডিসেম্বরের পরিবর্তে ২৫ মার্চকে ‘আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি আদায়ের জন্য বর্তমান সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ২৫ মার্চ কালোরাতের তথ্য-উপাত্ত জাতিসংঘসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাঠানোর উদ্যোগ ইতিমধ্যেই নিয়েছে।
সাংস্কৃতিক রাজধানী হিসেবে পরিচিত এই বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্ণাঢ্য আয়োজনে দিনব্যাপী থাকবে আলোচনা সভা, মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার জন্য সম্মাননা-স্মারক প্রদান, মঞ্চ নাটক, জাগরণের গান ও আবৃত্তি, শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানমালা, চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, আর্ট ক্যাম্প ও স্থিরচিত্র প্রদর্শনী ।
২৫-২৭ মার্চ ২০১৯, তিন দিনব্যাপী এই উৎসবের উদ্বোধন করবেন পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী গাজী গোলাম দস্তগীর বীরপ্রতীক। উৎসবের অন্যান্য দিনের কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম এমপি, এবাদুল করিম বুলবুল এমপি, ব্যবস্থাপনা পরিচালক বীকন ফার্মাসিউটিক্যাল লি. ও নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন এমপি।
এ ছাড়া সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী ফকির আলমগীর, লে কর্নেল (অব) সাজ্জাদ আলী জহির বীর প্রতীক, বীর মুক্তিযোদ্ধা ফোরকান বেগম, বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. মাখমুদা নারগিস রত্না, বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. লায়লা পারভীন বানু, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দসৈনিক মাজহারুল ইসলাম, আশরাফুল আলম প্রমুখ।
আমরা বিশ্বাস করি, দেশের অন্যতম উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবছর মুক্তি সংগ্রাম সাংস্কৃতিক উৎসব পালন করে দেশ ও জাতির প্রতি এক গুরুদায়িত্ব পালন করছে। ‘মুক্তির আলোয় আলোকিত করি ভুবন’ শীর্ষক স্লোগান নিয়ে এবারের আয়োজন সফল করতে গণমাধ্যমের সহযোগিতা একান্তভাবে কাম্য। আমারা আশা করি গণমাধ্যমের শক্তিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এই আয়োজনের সব খবর দেশ-বিদেশের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে পড়বে।
লেখক : পরিচালক, ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়