শহীদ ড. জোহা দিবস আজ

৫০ বছরেও উপেক্ষিত ‘জাতীয় শিক্ষক দিবস’ স্বীকৃতির দাবি

Looks like you've blocked notifications!
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ ড. সৈয়দ মুহম্মদ শামসুজ্জোহা। ছবি : সংগৃহীত

‘ডোন্ট ফায়ার! আই স্যাইড, ডোন্ট ফায়ার! কোনো ছাত্রের গায়ে গুলি লাগার আগে যেন আমার গায়ে গুলি লাগে।’

১৯৬৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারিতে এভাবেই ছাত্রদের বাঁচাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বন্দুকের সামনে বলিষ্ঠ কণ্ঠে চিৎকার করেছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রক্টর ও রসায়ন বিভাগের শিক্ষক ড. সৈয়দ মুহম্মদ শামসুজ্জোহা। সেদিন সত্যিই পাকিস্তানি সেনাদের বন্দুকের নিশানা হন তিনি।

ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ভিত রচিত করেছিল। আর যাদের আত্মত্যাগে এ সংগ্রাম গণ-আন্দোলনে রূপ নিয়েছিল, তাদের অন্যতম একজন ড. শামসুজ্জোহা। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রথম শহীদ বুদ্ধিজীবী তিনি। যিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জীবন রক্ষা করেছেন নিজের জীবন দিয়ে। দিবসটি এখন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পালিত হয় ‘জোহা দিবস’ হিসেবে।

বাংলাদেশে বছরে অসংখ্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দিবস পালন করা হলেও এ দিবসটি জাতীয়ভাবে পালন করা হয় না আজও। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে ড. জোহার শাহাদতের দিনটিকে ‘জাতীয় শিক্ষক দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতির দাবি জানিয়ে আসছে। কিন্তু ৫০ বছরেও দাবির বাস্তবায়ন হয়নি।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম আব্দুস সোবহান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় যেজন্য গর্ববোধ করে থাকে তা হচ্ছে, স্বাধীনতার প্রাথমিক সোপান রচনায় প্রথম শহীদ বুদ্ধিজীবী ড. শামসুজ্জোহার অবদান। এটা ঐতিহাসিক সত্য এবং দালিলিকভাবে প্রমাণিত। আমরা বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে এ দিবসটিকে জাতীয়করণের দাবি জানিয়ে আসছি। তবে অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, তা এখনো বাস্তবায়িত হয়নি।’

উপাচার্য আরো বলেন, ‘জাতীয় শিক্ষক দিবস ঘোষণার জন্য বিভিন্ন সময়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ে জানানো হয়েছে। আমরা এবার প্রক্রিয়াগতভাবে এগোতে চাই। এ ব্যাপারে প্রশাসনের কয়েকজনের সঙ্গে আলাপ হয়েছে। দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

সেদিন যা ঘটেছিল

আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহারের দাবি এবং সার্জেন্ট জহুরুল হক হত্যার প্রতিবাদে ১৯৬৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা ভেঙে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করে। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান গেটে পাকিস্তানি সেনারা মিছিলে গুলি করতে উদ্যত হয়।

খবর পেয়ে তৎকালীন রাবির প্রক্টর শামসুজ্জোহা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ছাত্রদের সামনে দাঁড়ান। এ সময় তিনি পাকিস্তানি সেনাদের গুলি করতে নিষেধ করে বলেন, কোনো ছাত্রের গায়ে গুলি লাগার আগে, তা আমার গায়ে লাগবে। একপর্যায়ে তিনি ছাত্রদের ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার আশ্বাস দেন। কিন্তু তাতে কর্ণপাত না করে বেলা ১১টার দিকে ক্যাপ্টেন হাদী পিস্তল বের করে ড. জোহাকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন। গুলিবিদ্ধ ড. জোহাকে পরে রাজশাহী পৌরসভা কার্যালয়ে নিয়ে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়।

ড. জোহার সংক্ষিপ্ত জীবনী

১৯৩৪ সালে পশ্চিমবঙ্গের বাকুড়ায় জন্মগ্রহণ করেন শামসুজ্জোহা। তিন ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছিলেন দ্বিতীয়। ১৯৪৮ সালে বাকুড়া জেলা স্কুল থেকে প্রথম বিভাগে মাধ্যমিক পাস করেন। পরে ক্রিশ্চান কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন বিভাগে সম্মান শ্রেণিতে ভর্তি হন। ১৯৫৩ সালে স্নাতক ও ১৯৫৪ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। পরে অর্ডিন্যান্স কারখানায় শিক্ষানবিশ সহকারী কারখানা পরিচালক হিসেবে কিছুদিন কাজ করেন। পরে লন্ডনের ইমপেরিয়াল কলেজ ও লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিশেষ ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৬১ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগে যোগ দেন। শহীদ হওয়ার সময় তিনি স্ত্রী নিলুফা জোহা ও এক কন্যা সন্তান রেখে যান। তাঁরা বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন।