রাবি প্রক্টরের বিরুদ্ধে ‘অনধিকার চর্চার’ অভিযোগ এনে হল প্রাধ্যক্ষের পদত্যাগ

Looks like you've blocked notifications!
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মতিহার হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মু. আলী আসগর সোমবার দুপুরে মতিহার হলে সংবাদ সম্মেলন করে পদত্যাগের কথা জানান। ছবি : এনটিভি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) মতিহার হলে এক অনাবাসিক ছাত্রকে উঠানোকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমানের বিরুদ্ধে ‘অনধিকার চর্চা ও ক্ষমতার অপব্যবহারের’ অভিযোগ এনে ওই হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মু. আলী আসগর পদত্যাগ করেছেন।

সোমবার দুপুরে মতিহার হলে সংবাদ সম্মেলনে আলী আসগর এ পদত্যাগের কথা জানান। ওই দিন সকালে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বরাবর পদত্যাগপত্র জমা দেন।

তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করছেন প্রক্টর। তাঁর দাবি, তিনি ওই হলে কোনো ছাত্রকেই তুলে দেননি। হল প্রাধ্যক্ষের অভিযোগ মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে প্রাধ্যক্ষ বলেন, ‘প্রক্টর মহোদয়ের অনধিকার চর্চা ও ক্ষমতার অপব্যবহারের ফলে মতিহার হলের ১২০ নম্বর কক্ষে আবাসিকতাপ্রাপ্ত ছাত্রকে হল থেকে বিতাড়িত করে তার পরিবর্তে মো. জনি মিয়াকে অবস্থানের ব্যবস্থা করা- আমার পক্ষে নৈতিকভাবে মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। সে কারণে আমি মতিহার হলের প্রাধ্যক্ষের পদ থেকে পদত্যাগ করছি।’

আলী আসগর আরো বলেন, ‘গত শুক্রবার বেলা সাড়ে ৩টায় হলে গিয়ে জানতে পারি, ১২০ নম্বর কক্ষের আবাসিকতাপ্রাপ্ত ছাত্রকে বিতাড়ন করা হয়েছে। তাঁর পরিবর্তে সেখানে শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মো. জনি মিয়া অবস্থান করছে। কিন্তু হল প্রশাসন এখন পর্যন্ত ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের জন্য আবাসিকতা বিজ্ঞপ্তি দেয়নি। এমতাবস্থায় বিকেল ৪টার দিকে জনি মিয়াকে তাঁর জিনিসপত্রসহ হল থেকে বের করে দিয়ে আবাসিকতাপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীকে ওই কক্ষে থাকার ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু জনি মিয়া আমার ও আবাসিক শিক্ষকদের সাথে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করে এবং তাঁকে বের করে দেওয়া ঠেকাতে বিভিন্ন জায়গায় মোবাইল ফোনে কথা বলার চেষ্টা করে।’

সংবাদ সম্মেলনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমান। ছবি : এনটিভি

আলী আসগর বলেন, ‘ওই দিন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় প্রক্টর মো. লুৎফর রহমান মতিহার হলে আসেন। তিনি হল প্রশাসনের অনুপস্থিতিতে ও অনুমতি ছাড়া ১২০ নম্বর কক্ষের আবাসিকতাপ্রাপ্ত ছাত্রকে বিতাড়ন করে জনি মিয়াকে ওই কক্ষে অবস্থানের ব্যবস্থা করেন। বিষয়টি আমি সেই রাতে হলের আবাসিক ছাত্র ও পরে পত্রিকায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদের বক্তব্যে নিশ্চিত হই। জনি মিয়া এখনো পর্যন্ত অবৈধভাবে ১২০ নম্বর কক্ষে অবস্থান করছে।’

এদিকে এ অভিযোগ অস্বীকার করে সোমবার বিকেল ৪টায় পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমান। সংবাদ সম্মেলনে প্রক্টর বলেন, ‘মতিহার হলে ওই দিন সকাল থেকে ১২০ নম্বর কক্ষকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। সন্ধ্যায় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ করছে জেনে প্রক্টরিয়াল বডিকে সঙ্গে নিয়ে আমি সেখানে যাই। এ সময় হলের আবাসিক শিক্ষক মো. নূরুজ্জামান ছাড়া হল কর্তৃপক্ষের কেউ উপস্থিত ছিলেন না। উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে উভয়পক্ষকে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের জন্য অনুরোধ করি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে প্রক্টরিয়াল বডি ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।’

প্রাধ্যক্ষের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে প্রক্টর বলেন, ‘আমি জনিকে হলে তুলে দেইনি। হল প্রশাসন কাকে হলে রাখবে, কাকে বের করে দেবে সেটা একান্তই হল প্রশাসনের ব্যাপার। সেখানে আমাদের কোনো এখতিয়ার নেই।’

এর আগে গত শুক্রবার মতিহার হলে অবৈধভাবে অবস্থান করায় জনি নামের এক শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগকর্মীকে হল থেকে বের করে দেন অধ্যাপক আলী আসগর। এতে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়ে হল গেইটে প্রাধ্যক্ষের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করে। পরে প্রক্টর এসে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের প্রাধ্যক্ষের সঙ্গে বসে বিষয়টি মীমাংসা করে নিতে বলেন। এরপর থেকে জনি আবার হলে অবস্থান করছেন।