শিক্ষার্থীদের প্রতি ঢাবির শিক্ষক, ‘আমি কিন্তু পুলিশ ডাকব’
নিজ বিভাগের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ঠেকাতে পুলিশ ডাকার হুমকি দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আ ক ম জামাল উদ্দিন। তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমি যদি মনে করি আমার পথে আপনি ব্যারিকেড তৈরি করছেন, তাহলে আমি কিন্তু পুলিশ আনব।’
আজ বুধবার সকালে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের সামনে এ ঘটনা ঘটে। সকাল ৯টা থেকে বিভাগের ছাত্র ও সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী মশিউর রহমানকে রিমান্ডে নেওয়ার প্রতিবাদে এবং তাঁর মুক্তির দাবিতে বিভাগের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছিলেন সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রছাত্রীরা।
সেখানে গিয়ে অধ্যাপক আ ক ম জামাল উদ্দিন শিক্ষার্থীদের ছবি তোলেন, দেখে নেওয়ার হুমকি দেন এবং পরে বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নেহাল করিমের সামনে শিক্ষার্থীদের ঠেকাতে পুলিশ আনার হুমকি দেন।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ করে অধ্যাপক আ ক ম জামাল উদ্দিন বলেন, ‘আমি যদি মনে করি আমার পথে আপনি ব্যারিকেড তৈরি করছেন তাহলে আমি কিন্তু পুলিশ আনব। এখন আপনি চিন্তা করে দেখেন। আমি কিন্তু প্রক্টরিয়াল ডাকব, ডেকে কিন্তু আমি এখানে পুলিশ আনব।’
এ সময় সেখানে উপস্থিত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. সামিনা লুৎফা বলেন, ‘স্যার ওরা প্রক্টরের কাছে চিঠি লিখতে যাচ্ছে, ওদের ওদের কাজ করতে দেন; আমরা আমাদের কাজ করি।’
অধ্যাপক আ ক ম জামাল উদ্দিন বলেন, ‘যেই শিক্ষক ক্লাস নিতে চায় না আপনারা তার ক্লাস করবেন না।’ এ সময় অধ্যাপক সামিনা লুৎফা বলেন, ‘সব শিক্ষকই ক্লাস নিতে চায়। কিন্তু ছাত্ররা না আসলে কি চেয়ার টেবিলকে ক্লাস নিবে?’
অধ্যাপক জামাল উদ্দিন বলেন, ‘আমি ক্লাস নিব, আপনারা যদি না আসেন সে দায়িত্ব আপনাদের।’ ক্লাসে না আসলে তিনি ‘রেগুলারিটি,-ডিসরেগুলারিটি’র পদক্ষেপ নেবেন বলে জানান। এই পর্যায়ে ছাত্রদের তিনি আবার পুলিশ ডেকে আনার হুমকি দেন। তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনশৃঙ্খলার একটি বিষয় আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে তো আমাদের চলতে হবে।’
গণমাধ্যমের সামনে এসব কথা বলছেন ড. সামিনা লুৎফার এমন কথায় অধ্যাপক জামাল উদ্দিন বলেন, ‘মিডিয়া হোক আর যাই হোক আমি দায়িত্ব নিয়ে কথা বলছি।’
এর আগে সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা সকাল ৯টায় ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ব্যানার নিয়ে বিভাগের সামনে অবস্থান নেন। একপর্যায়ে তাঁরা বিভাগের একটি কলাপসিবল গেট আটকে তালা মেরে দেন। অধ্যাপক আ ক ম জামাল উদ্দিন সেখানে আসেন। তিনি বলেন, ‘ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন কোনো প্রতিবাদের ভাষা হতে পারে না। আপনারা যদি ক্লাস বয়কট করেন। আপনার এগুলো বাদ দিয়ে ক্লাসে যান। আপনারা একজন আইনজীবী ঠিক করেন। কোর্টে তার জন্য ফাইট করেন।’ আইনজীবী ঠিক করলে বিভাগ থেকে তার খরচের ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
অধ্যাপক জামাল উদ্দিন বলেন, ‘যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে তাদের ধরা হচ্ছে।’
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছাত্রকে একটি সংগঠনের নেতাকর্মীরা তুলে নিয়ে গেল তার দায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কি না এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক জামাল উদ্দিন বলেন, ‘আমরা আমাদের বিভাগের কথা বলছি।’ তিনি বলেন, ‘আপনারা এইটা চালিয়ে গেলে কিছু মানুষের বন্ধু হবেন আবার কিছু মানুষের শত্রুও হবেন।’ শিক্ষার্থীরা এটাকে প্রচ্ছন্ন হুমকি বললে, অধ্যাপক জামাল উদ্দিন বলেন, ‘হুমকি না। আপনার একাডেমিক কার্যক্রমের জন্য ভবিষ্যতে আপনি নিজেই সাফার করবেন।’
এ সময় শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘আমরা ক্লাস করব না, আমাদের বন্ধু রিমান্ডে আছে।’ শিক্ষার্থীরা বলেন, তাঁরা সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মশিউরের মুক্তির দাবিতে বিভাগের চেয়ারম্যান ও প্রক্টরকে চিঠি দেবেন। সন্তোষজনক কোনো কিছু না পেলে তাঁরা আগামী রোববার আবার অবস্থান নেওয়ার ঘোষণা দেন। তাঁদের ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে বলেও উল্লেখ করেন।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার দ্য সূর্যসেন হলের আবাসিক ছাত্র মশিউরকে গত ২ জুলাই ছাত্রলীগের সূর্যসেন হল ইউনিটের নেতাকর্মীরা মারধর করে পুলিশে দেয়। পরে পুলিশ তাঁকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবন ভাঙচুরের মামলায় গ্রেপ্তার দেখায়। গতকাল মঙ্গলবার তাঁর দুদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়।
মশিউরের মুক্তির দাবিতে গত ৫ জুলাই সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করে। মশিউর ক্লাসে না ফেরা পর্যন্ত তারা ক্লাসে ফিরবে না বলে ঘোষণা দেয়।