হত্যার হুমকি : কোটা সংস্কার নেতাদের জিডি নেয়নি পুলিশ
কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে গেলে তা গ্রহণ করেনি শাহবাগ থানা। আজ বুধবার দুপুরে আন্দোলনকারীরা বলেন, রাষ্ট্র তাদের নিরাপত্তা দিচ্ছে না। তারা জীবনের হুমকির মধ্যে আছে।
শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসান বলেন, বিষয়টি যেহেতু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও রাষ্ট্রের সঙ্গে জড়িত তাই আমরা একটু সময় নিচ্ছি। তাদের সঙ্গে কথা বলে আমরা সাধারণ ডায়েরি গ্রহণ করার ব্যাপারে জানাব।
তবে আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, তারা তো মামলা করতে চায়নি। জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে জিডি করতে চেয়েছে। এখানে তো কোনো সময় নেওয়ার কথা না। পুলিশ তাদের জিডি নেয়নি। রাষ্ট্র তাদের জীবনের নিরাপত্তা দিচ্ছে না।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতাদের ওপর হামলার প্রতিবাদে আজ দুপুর ১২টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে জড়ো হয় শিক্ষার্থীরা। পরে তারা গ্রন্থাগারের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। বিক্ষোভ মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়ক পদক্ষিণ করে ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র সংলগ্ন রাজু ভাস্কর্যের সামনে এসে শেষ হয়।
এ সময় এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক হাসান বলেন, মঙ্গলবার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুহসীন হলের ১১৯ নম্বর কক্ষে আমাদের সহযোদ্ধা নুরুল হক নুরের কক্ষে তাঁকে মেরে ফেলতে হামলা করেছে ছাত্রলীগের কিছু সন্ত্রাসী। আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে সহযোগিতা করছি। তাহলে কেন এই হামলা? কোনো আন্দোলনকারীর যদি কিছু হয় তবে ছাত্রসমাজ রাজপথে তা প্রতিহত করবে।
নুরুল হক নুর বলেন, আমাদের এর আগে বিভিন্ন সময়ে হত্যার হুমকি দিলে আমরা সরকারের কাছে নিরাপত্তার দাবি জানিয়েছি। কিন্তু আমাদের কেন নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হলো না। ছাত্রলীগের কিছু চিহ্নিত সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, ইয়াবা ব্যবসায়ী আমাকে ও রাশেদকে হত্যা করে ফেলার উদ্দেশ্যে আমার কক্ষে হামলা চালিয়েছে। আমি ৯৯৯ নম্বরে কল করেও কোনো নিরাপত্তা পাইনি। সরকার দাবানল নিয়ে খেলা করছে। দাবানল নিয়ে খেললে পুড়ে ছারখার হয়ে যাবেন। তিনি তাদের ওপর হামলাকারীদের অতি দ্রুত গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান।
এর আগে সোমবার মধ্যরাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজি মুহম্মদ মুহসীন হলে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক নুরের কক্ষে গিয়ে তাদের মেরে ফেলার হুমকি দেয় ছাত্রলীগের ২০ থেকে ২৫ জন নেতাকর্মী। ও সময় কক্ষে অবস্থান করছিলেন সংগঠনের অপর যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খান। পিস্তল নিয়ে তাঁর কক্ষে যান কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি ইমতিয়াজ উদ্দিন বাপ্পি। তাঁর সঙ্গে ছিলেন মুহসীন হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান সানী, চারুকলা অনুষদ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফাহিম লিমনসহ আরো অনেকে।
মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে ছাত্রলীগ নেতা বাপ্পি বলেন, ‘এই আন্দোলন করছিস তোরা সরকারের বিরুদ্ধে। তোদের একটাকেও ছাড়া হবে না। প্রজ্ঞাপনটা জারি হলে তোদের কুত্তার মতো পিটানো হবে। কুকুরের মতো গুলি করে রাস্তায় মারা হবে। তোরা তো কেউ বাঁচবি না। বেশি বাড়াবাড়ি করিস না। শেষবারের মতো মা-বাবার দোয়া নিয়ে নিস। শুধু প্রজ্ঞাপনটা জারি হোক। তোদের কী অবস্থা করি।’ এই সময় মেহেদী হাসান সানী ও ফাহিম লিমন তাদের ওপর হামলা করার জন্য বারবার সামনে আসে। কিন্তু ঘটনাস্থলে সাংবাদিকরা উপস্থিত থাকায় তাঁরা চলে যান।
হামলার বিষয়ে নুরুল হক নুর বলেন, ‘আমি ও রাশেদ আমার রুমে ছিলাম। এর মধ্যে চারুকলা অনুষদের ছাত্রলীগের সেক্রেটারি লিমন থ্রেট দেয় যে, হল থেকে নামিয়ে দেওয়া হবে। পিটাইয়া নামাইয়া দেওয়া হবে। আমরা নাকি সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছি। একপর্যায়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি ইমতিয়াজ উদ্দিন বাপ্পি বলেন, ছাত্রদলের সুলতান সালাউদ্দিন টুকুকে মারছি। তোদের মতো পোলাপানকে খেয়ে দিতে দুই সেকেন্ডও লাগবে না। তোগোরে গুলি কইরা মারি নাই শুধু কিছু সিনিয়রের নিষেধ ছিল। তা না হলে তোদের মতো কুলাঙ্গারদের রাখতাম না এই দেশে। শুধু কিছু সিনিয়রদের নিষেধ থাকার কারণে তোরা বেঁচে গেছস। তবে তোরা বাঁচবি না। কিছু দিন পর প্রজ্ঞাপনটা জারি হোক। দেখি তোদের কোন বাপ ঠেকায়। এর ১০ মিনিট পরে রুমে পিস্তল নিয়ে এসে আমাদের মেরে ফেলার হুমকি দেয়।’
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি ইমতিয়াজ উদ্দিন বাপ্পি বলেন, ‘নুরুল হক নুর আমার পাশের রুমে থাকে। আমার এক ছোট ভাইয়ের আইডি হ্যাক করে বিভিন্ন গ্রুপে দেয়। পরে তার সাথে এই বিষয়ে আমার বাকবিতণ্ডা হয়। আমার বাবা মুক্তিযোদ্ধা। শেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. গোলাম রব্বানী বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। লিখিত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’