দুই ঘণ্টাও পড়ার সুযোগ পান না সূর্যসেন হলের ছাত্ররা!
আমরা যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে উঠার আগে ১৪/১৫ ঘণ্টা করে পড়ালেখা করতাম, তারা এখানে এসে দুই ঘণ্টাও পড়ার সুযোগ পাই না। সকালে ঘুম থেকে উঠলেই আমাদের ছাত্র সংগঠনের প্রোগ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়। যাদের রাজনীতি করার ইচ্ছা আছে, তারা প্রোগ্রামে যাবে। কিন্তু কেন আমাদেরকে আমাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে প্রোগ্রামে নিয়ে যাওয়া হবে?
এভাবেই বলছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টারদা সূর্যসেন হলের ছাত্ররা। সাম্প্রতিক ইস্যুতে ওই হলের টিভি রুমে একটি মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। ওই সভায় একাধিক শিক্ষার্থী এসব কথা বলেন। সভায় হলের আবাসিক শিক্ষক ও ছাত্ররা উপস্থিত ছিলেন।
শিক্ষার্থীরা বলেন, তারা যারা কোটা সংস্কার আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন তারা বিভিন্ন রকম হুমকি পাচ্ছেন। তাদেরকে হল থেকে বের করে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। বিশ্ববিদ্যালয় মুক্তচিন্তা ও মুক্ত কথা বলার জায়গা। অথচ তারা আজ মুখ ফুটে কথা বলতে পারেন না। তাদের কথা বলার জায়গা ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন কেন দেওয়া হচ্ছে না। শিক্ষকরা ইচ্ছে করলেই এটা সম্ভব।
হলে সিট বরাদ্দ প্রসঙ্গে শিক্ষার্থীরা বলেন, হল থেকে সিট বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু সাধারণ ছাত্ররা ওই সিটে উঠতে পারেন না। সিটগুলো দখল করে রাখে অন্যরা। হলে অনেকে একজন দুই-তিন রুম দখল করে রাখার মতো নজিরও আছে। অথচ সাধারণ ছাত্ররা এককক্ষে আট-নয়জন করে থাকেন।
শিক্ষার্থীরা ক্যান্টিনের খাবারের দাম, পানির সমস্যা, নোংরা শৌচাগারসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হল প্রশাসনকে অনুরোধ করেন।
হলের প্রাধ্যক্ষ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক এএসএম মাকসুদ কামাল বলেন, ‘আমাদের অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। হলটি নির্মাণ করা হয়েছিল এক হাজার শিক্ষার্থীর থাকার জন্য। অথচ শিক্ষার্থী অনুপাতে হল না থাকায় এখন এ হলে প্রায় আড়াই হাজার শিক্ষার্থীকে থাকতে হচ্ছে। তাই কিছু কিছু সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তাসহ হলে যেকোনো বিষয়ে কোনো সমস্যা হলে তোমরা সরাসরি আমার কাছে অভিযোগ করবে। আমি অবশ্যই এসব বিষয়ে ব্যবস্থা নেব। আমাদের হলে অভিযোগ বক্স আছে। কেউ নাম প্রকাশ করতে না চাইলে অভিযোগ বাক্সে অভিযোগ দিতে পারো।’
অধ্যাপক মাকসুদ কামাল বলেন, ‘তোমরা আমাদের ইনফরমেশন দিয়ে সহায়তা করো- কোন কক্ষে অবৈধ শিক্ষার্থী আছে। আমরা ব্যবস্থা নিব।’ আবাসিক শিক্ষকদের শিক্ষার্থীদের সমস্যা সমাধানে পাশে থাকতে আহ্বান জানান তিনি।
অভিযোগ উঠেছে, মতবিনিময়সভা শেষে সভায় কথা বলা শওকত ও মশিউর রহমান নামের দুই ছাত্রকে হল থেকে বের করে দেওয়ার চেষ্টা করেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। পরে আবাসিক শিক্ষকদের হস্তক্ষেপে সেটি সম্ভব হয়নি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আবিদ আল হাসানকে ফোন করা হলে তিনি ব্যস্ত আছেন বলে ফোন কেটে দেন।