রাবিতে ৭ ক্যাটাগারিতে নির্বাচন সোমবার, জমেছে ভোটের রাজনীতি
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) শিক্ষক সমিতিসহ সাত ক্যাটাগরিতে ৭০ পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী সোমবার। নির্বাচনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ (হলুদ প্যানেল) এবং জাতীয়তাবাদী ও ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী শিক্ষক গ্রুপ সমর্থিত প্রার্থীরা সাদা প্যানেলের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
শেষ মুহূর্তে এসে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় নেমেছেন প্রার্থীরা। ভোট টানতে নানা ধরনের অঙ্গীকার নিয়ে শিক্ষকদের কাছে হাজির হচ্ছেন। আর এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে জমে উঠেছে ভোটের রাজনীতি।
নির্বাচনের অন্য ক্যাটাগরিগুলো হলো- সিন্ডিকেট, ডিন, অর্থনৈতিক কমিটি, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন, শিক্ষা পরিষদ ও সিনেট প্রতিনিধি। আগামী সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের জুবেরী ভবনের শিক্ষক লাউঞ্জে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ১ হাজার ১৫০ জন শিক্ষক ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এতে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. এম এ বারী।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দপ্তর সূত্রে জানা যায়, সিন্ডিকেট সদস্য পদে পাঁচজন, নয়টি ডিন, ৩৩ জন সিনেট শিক্ষক প্রতিনিধি, অর্থনৈতিক কমিটিতে একটি, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন একটি, শিক্ষা পরিষদ ছয়টি এবং শিক্ষক সমিতির ১৫টি পদে প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
নির্বাচনে আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের হলুদ প্যানেল সবকটি পদে প্রার্থী দিলেও সিন্ডিকেট ও ডিনসহ চারটি পদে সাদা প্যানেল কোনো প্রার্থী দিতে পারেনি। ফলে আওয়ামীপন্থী হলুদ প্যানেলের চারজন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এদের মধ্যে দুজন হলেন আইন অনুষদের ডিন ক্যাটাগরিতে অধ্যাপক এম. আহসান কবির, সিন্ডিকেটের প্রভাষক পদে ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের মাসিদুল হক। এছাড়া শিক্ষা পরিষদের ‘সহযোগী অধ্যাপক ব্যতীত’ ক্যাটাগারিতে তিনটি পদের মধ্যে দুজন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
সাদা দলের নেতাদের অভিযোগ, গত ১০ বছর বিশ্ববিদ্যালয়ে মেধার ভিত্তিতে নয়, দলীয় পরিচয়ে ক্ষমতাসীন দলীয় প্রশাসন শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছে। ফলে সাদা দলপন্থী কোনো প্রভাষক নিয়োগ হয়নি। এজন্য সেখানে প্রার্থী দিতে পারেনি তারা। এ ছাড়া নিজেদের দলীয় নেতাদের গাফিলতির কারণে আইন অনুষদের ডিন এবং শিক্ষা পরিষদে সহযোগী অধ্যাপক ক্যাটাগরিতে প্রার্থী শূন্য থেকে গেছে বলেও বিএনপিপন্থী শিক্ষকরা অভিযোগ করেন।
অপরদিকে, প্রার্থী নির্বাচনে ভুল ও দলীয় শিক্ষকদের মধ্যে দ্বান্দ্বিক মনোভাবের কারণে আওয়ামীপন্থী প্রার্থীরা বেশ কয়েকটি পদে হারতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন আওয়ামীপন্থী শিক্ষকরা।
এদিকে, সংখ্যার বিচারে বিএনপি-জামায়াতপন্থী শিক্ষকরা আওয়ামীপন্থীদের তুলনায় কম হলেও বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদে হারের শঙ্কা তৈরি হয়েছে আওয়ামীপন্থী প্রার্থীদের। এর মধ্যে কলা অনুষদে ডিন পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন বাংলা বিভাগের অধ্যাপক সরকার সুজিত কুমার।
প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের একাধিক জ্যেষ্ঠ নেতার দাবি, আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের মধ্যে বিভক্তির কারণে পদগুলোতে জয়ী হতে পারে বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত প্রার্থীরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে তাঁরা জানান, কিছু পদে যোগ্য প্রার্থী দিতে না পারা, বিদ্রোহী প্রার্থী থাকা এবং গত প্রশাসন ও বর্তমান প্রশাসনের সমর্থক শিক্ষকদের মধ্যে দ্বান্দ্বিক মনোভাবের কারণে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি পদ হারের শঙ্কা রয়েছে হলুদ প্যানেলের প্রার্থীদের। সেগুলো মধ্যে অন্যতম- সিন্ডিকেটে অধ্যাপক ক্যাটাগরি, ডিন পদে কলা অনুষদ, কৃষি অনুষদ, প্রকৌশল অনুষদ, বিজ্ঞান অনুষদ, জীব ও ভূ-বিজ্ঞান অনুষদ এবং শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও সহ-সভাপতিসহ চারটি পদ ঝুঁকিপূর্ণ। এগুলোতে নড়বড়ে প্রার্থী দিয়েছে হলুদ প্যানেল।
এদিকে, প্রিজাইডিং অফিসার নিয়েও আপত্তি জানিয়েছেন সাদা দলের নেতারা। তাদের অভিযোগ, প্রিজাইডিং অফিসার মনোনয়নে নির্বাচন কমিশনার ভারসাম্য রক্ষা করতে পারেনি। আওয়ামীপন্থী ২২ থেকে ২৩ জন প্রিজাইডিং অফিসারের বিপরীতে বিএনপি-জামায়াতপন্থী চার-পাঁচজন অফিসার মনোনয়ন পেয়েছেন। নির্বাচন স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্নে যাদের ভূমিকা ব্যাপক। বিষয়টির সুরাহা করতে সাদা দলের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনারকে এরই মধ্যে মৌখিক অভিযোগ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে নির্বাচন কমিশনার রেজিস্ট্রার অধ্যাপক এমএ বারীর সঙ্গে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া একাধিকবার তাঁর কার্যালয়ে গিয়েও তাঁকে পাওয়া যায়নি।
জানতে চাইলে সাদা দলের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক অধ্যাপক এনামুল হক বলেন, অদক্ষ প্রশাসকদের নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টি পরিচালিত হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের পক্ষের প্রার্থীদের জয়ী করে নিয়োগ বাণিজ্যের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়টিকে ‘আদমজী জুট মিলসে’ পরিণত করতে চাচ্ছে। এ বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের দল-মতের ঊর্ধ্বে থাকা গবেষক ও সৎ শিক্ষকরা উপলব্ধি করতে পেরেছেন এবং তারা সাদা দলের সাথে আছেন।
প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের আহ্বায়ক অধ্যাপক জুলফিকার আলী এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘সবার মতামতের ভিত্তিতে দলীয় ফোরামে আমরা প্রার্থী নির্বাচন করেছি। নির্বাচনে যোগ্য প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।’ বিদ্রোহী প্রার্থীর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিনি দলের সক্রিয় ও ত্যাগী একজন সদস্য। কিন্তু দলীয় ফোরামে নেওয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আরেকজনকে প্রার্থী করা হয়েছে। উনি নিজের চাওয়া-পাওয়া এবং আবেগতাড়িত হয়ে প্রার্থী হয়েছেন। আশা করি-বিষয়টির সমাধান হয়ে যাবে।