কোটা বাতিলের আশ্বাসে ‘চাকরিমুখী’ ছাত্রলীগের নেতারা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোটাপ্রথা বাতিলের ঘোষণা দেওয়ার পর চাকরিমুখী হয়েছেন ছাত্রলীগের নেতারা। কয়েক দিন ধরে ছাত্রলীগের একাধিক নেতাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে দেখা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পর গত ১২ এপ্রিল সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে কোটাপ্রথা বাতিলের ঘোষণা দেন। এর পর থেকে ছাত্রলীগের নেতারা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে পড়তে যাওয়া শুরু করেন। গত দুদিন তাঁদের একটু বেশি দেখা গেছে।
এদিকে ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আবিদ আল হাসান ও সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন প্রিন্স গতকাল সোমবার থেকে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে যাতায়াত শুরু করেছেন। গতকাল সোমবার তাঁরা কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে বসে বই হাতে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছবি আপলোড করেন। মোতাহার হোসেন প্রিন্স ওই ছবি তাঁর ফেসবুকে পোস্ট করে লিখেন, ‘কোনো গুজব হবে না…, শুধু পড়াশোনা করব সবাই একসাথে।’
এর আগে গতকাল সোমবার বিকেলে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে দ্বিতীয় দফায় সংবাদ সম্মেলন করে কোটা সংস্কার আন্দোলনের জন্য গঠিত বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। পরিষদের তিনজন যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খান, নূরুল হক ও ফারুক হোসেনকে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ধরে নিয়ে গেলে বিকেলে বিক্ষোভ মিছিল করে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এর কিছুক্ষণ পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে সম্মেলন নিয়ে সংঘর্ষ বাধে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে। তার পরপরই কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে ঘুরতে আসেন আবিদ আল হাসান ও সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন প্রিন্স। তখন আবিদ আল হাসান তাঁর ফেসবুকে লিখেন, ‘আগামীকাল সকাল থেকে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে পড়াশোনা করব। প্রচুর জ্ঞান অর্জন করতে হবে।’ মোতাহার হোসেন প্রিন্সও প্রায় একই সময় তাঁর ফেসবুকে ওয়ালে একই কথা লিখেন।
আবিদ আল হাসান আজ কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে গিয়ে ফেসবুকে চেক ইন দেন ‘ঢাকা ইউনিভার্সিটি সেন্ট্রাল লাইব্রেরি’। সহকর্মী মোতাহার হোসেন প্রিন্সকে ট্যাগ করে লিখেন, ‘ফিলিং গ্রেট।’
তবে ছাত্রলীগের নেতাদের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে আসার উদ্দেশ্য ভিন্ন বলে মনে করেন গ্রন্থাগারে আসা একাধিক শিক্ষার্থী। তাঁরা বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনের মূল উৎপত্তি এই গ্রন্থাগার থেকে। তাই ছাত্রলীগের নেতারা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের নজরে রাখতে গ্রন্থাগারে যাতায়াত শুরু করেন।
আজ মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে গিয়ে দেখা যায়, ঢাবি ছাত্রলীগের সভাপতি আবিদ আল হাসান ও সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন প্রিন্স গ্রন্থাগারের সামনে দাঁড়িয়ে। আশপাশে দেখা যায়, তাঁদের কয়েকশ সমর্থককে। আবিদ আল হাসানের সঙ্গে ছিলেন বিজয় একাত্তর হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নয়ন হাওলাদার ও তাঁর সমর্থক। আর মোতাহার হোসেন প্রিন্সের সঙ্গে ছিলেন জহুরুল হক হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসিফ তালুকদার ও তাঁর সমর্থকরা। সেখানে প্রায় দেড় ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকলেও ছাত্রলীগ নেতাদের গ্রন্থাগারে প্রবেশ করতে দেখা যায়নি।
এ বিষয়ে জানতে ঢাবি ছাত্রলীগের সভাপতি আবিদ আল হাসান বলেন, ‘আমাদের পরিচয় আমরা আগে শিক্ষার্থী। পরে ছাত্র সংগঠনের নেতা। আমরা চাকরির জন্য পড়াশোনা করতেই লাইব্রেরিতে এসেছি।’
এ ছাড়া কোটাপ্রথা বাতিলের ঘোষণার পর ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির উপ-কমর্সূচি ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক সাদ বিন কাদের ও ঢাবি শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনির খানকেও কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে পড়াশুনা করতে দেখা গেছে।