টাকা দিয়েও বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস পাচ্ছেন না জবি শিক্ষার্থীরা
তীব্র পরিবহন সংকটে ভুগছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীরা। ফি দিয়েও বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন সেবা পাচ্ছেন না বেশির ভাগ শিক্ষার্থী। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন তাঁরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জবির প্রায় ১৮ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য মাত্র ১৫টি বাস রয়েছে। সেগুলোতে যাতায়াত করতে পারেন মাত্র দুই হাজার শিক্ষার্থী। ফলে বাকি ১৬ হাজার শিক্ষার্থী পরিবহন সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, জবির ছয়টি অনুষদের ৩৮টি বিভাগে প্রায় ১৮ হাজার শিক্ষার্থী পড়ালেখা করছেন। প্রত্যেক শিক্ষাবর্ষে একজন শিক্ষার্থীকে পরিবহন ভাড়া বাবদ ৬০০ টাকা করে পরিশোধ করতে হয়। সে হিসাবে ১৮ হাজার শিক্ষার্থীর কাছ থেকে পরিবহন সেবা বাবদ বছরে প্রায় সোয়া কোটি টাকা আয় করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব গাড়িগুলোর মধ্যে উপহারে পাওয়া গাড়ির সংখ্যাই বেশি। অথচ পরিবহন ফি বাবদ পাওয়া টাকা থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো নিজস্ব বাস কেনার উদ্যোগ নেয়নি। সে ক্ষেত্রে পরিবহন খাতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন পুলের পরিচালক আবদুল্লাহ আল মাসুদ বলেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেন, ‘পরিবহন সংখ্যা বাড়াতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন খুবই আন্তরিক। কিছুদিনের মধ্যেই বিআরটিসির মাধ্যমে নতুন ৫০০ গাড়ি আমদানি করবে সরকার। সেখান থেকে আমরা ১৫টি গাড়ি চেয়ে আবেদন জানিয়েছি।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শিকদার মো. শিমুল মোস্তাফি বলেন, ‘বাসে গাদাগাদি করে চলাচলের সময় আমাদের তীব্র ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। কখনো কখনো বাসে দাঁড়ানোর মতো পরিস্থিতিও থাকে না। তখন বাধ্য হয়ে লোকাল বাসে বাসায় যেতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে খুব দ্রুত বাসের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য অনুরোধ করছি।’
জবি পরিবহন পুল সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট বাস রয়েছে ২৬টি। এর মধ্যে নিজস্ব বাস রয়েছে মাত্র ১১টি। সেগুলোর মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর উপহার দেওয়া দুটি বাস এক বছর ধরে বিকল হয়ে পড়ে আছে। বিআরটিসির একতলাবিশিষ্ট প্লাস্টিক বডির এ বাস দুটির ইঞ্জিনে বড় ধরনের সমস্যা দেখা দিলেও এগুলোর যন্ত্রপাতি খোলাবাজারে না থাকায় পরিবর্তন সম্ভব হচ্ছে না। ফলে বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব বাসের সংখ্যা নয়টি। এর মধ্যে শিক্ষার্থীদের জন্য তিনটি ও শিক্ষকদের জন্য ছয়টি বরাদ্দ রয়েছে।
পরিবহন পুল আরো জানায়, বিআরটিসি থেকে ভাড়া নেওয়া বাস ১৫টি। যার তিনটি একতলাবিশিষ্ট ও ১২টি ডাবল ডেকার। একতলাবিশিষ্ট বাস তিনটিতে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা যাতায়াত করেন। ডাবল ডেকার ১২টি বাস শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন রুটে চলাচল করে।
এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আটটি মাইক্রোবাস ও একটি অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে। মাইক্রোবাসগুলোর একটি সম্পূর্ণ বিকল হয়ে পড়ে আছে। বাকি সাতটিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা যাতায়াত করেন।
প্রতিষ্ঠার ১২ বছর পরও জবির আবাসন সমস্যার কোনো সমাধান হয়নি। তাই বাধ্য হয়েই শিক্ষার্থীরা থাকছেন ক্যাম্পাস থেকে দূরবর্তী বিভিন্ন স্থানে। এমন অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব পর্যাপ্ত বাস না থাকায় বিড়ম্বনায় পড়ছেন শিক্ষার্থীরা।
এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস নির্ধারিত সময় (সকাল ৭.৩০ ও বিকেলে ৩.৪০) ছাড়া চলাচল না করায় ক্লাস শেষ হওয়ার পর দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয় বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা।