স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবিতে শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি
করোনা প্রাদুর্ভাবের মধ্যে চিকিৎসাসেবায় ব্যর্থতার অভিযোগ এনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের (ডিজি) অপসারণসহ চার দফা দাবি জানিয়েছে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। এই দাবিতে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি শুরু করছে সংগঠনটি।
আজ মঙ্গলবার বিকেল ৩টা থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাদদেশে এই কর্মসূচি শুরু করে মঞ্চের নেতাকর্মীরা। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তাদের এ কর্মসূচি চলবে বলে নেতারা জানিয়েছেন।
অবস্থান কর্মসূচিতে উপস্থিত আছেন মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল ও সাধারণ সম্পাদক মো. আল মামুন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সনেট মাহমুদ ও সাধারণ সম্পাদক ইয়াসির আরাফাত তূর্য, ঢাকা মহানগর উত্তর মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সভাপতি আহমেদ হাসনাইন, চকবাজার থানা মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সভাপতি আশরাফ উদ্দিন স্বাধীন ও সাধারণ সম্পাদক মো. সোহেল, যাত্রাবাড়ী থানা মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সভাপতি শেখ মাসুদ, ওয়ারী থানার সভাপতি তৌহিদুল ইসলাম তৈয়ব আলী প্রমুখ।
কর্মসূচির ব্যাপারে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. আল মামুন বলেন, দেশের স্বাস্থ্য খাতে পরিকল্পিতভাবে এসব দুর্নীতি ও অনিয়ম সংঘটিত করে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের সফল অর্জনগুলোকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপচেষ্টা হচ্ছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কিছু ব্যক্তির এহেন গভীর ষড়যন্ত্র কখনোই বরদাশত করবে না মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর বাংলায় কোনো দুর্নীতিবাজদের ঠাঁই হবে না। কিছুদিন আগে টাঙ্গাইলে চিকিৎসক কর্তৃক একজন মুক্তিযোদ্ধাকে লাঞ্ছিত করে তাঁর মুক্তিযোদ্ধা সনদ ছিঁড়ে ফেলা হয়েছিল। আজ পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সঠিক নজরদারির অভাবে একের পর এক এসব কেলেঙ্কারি স্বাস্থ্য খাতকে বিতর্কের দিকে ঠেলে দিয়েছে। দায়িত্বশীল পদে থাকার পরও স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডিজির দায়িত্বহীন বক্তব্য মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।
মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি সনেট মাহমুদ বলেন, সম্প্রতি স্বাস্থ্য খাতের ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি এরমধ্যে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এসব অনিয়ম ও দুর্নীতি বর্তমানের সরকারের সফল অর্জনগুলোকে ম্লান করে দিচ্ছে। পিপিই-মাস্ক কেলেঙ্কারি, আরটি পিসিআর মেশিন কেলেঙ্কারি, হিসাবরক্ষকের টেন্ডার কেলেঙ্কারি, জিকেজি কেলেঙ্কারি ইত্যাদি ঘটনার মাধ্যমে স্বাস্থ্য খাতের ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রকৃত চিত্র ফুটে উঠেছে। সর্বশেষ ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও রিজেন্ট হাসপাতালের ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতিই প্রমাণ করে স্বাস্থ্য খাত এখন মাফিয়াদের দখলে। করোনার মতো বৈশ্বিক মহামারিতেও এদের অপকর্ম থেমে নেই।
কর্মসূচিতে বক্তারা আরো বলেন, দায়িত্বশীল পদে থাকার কারণে তারা দুজন স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতি ও অনিয়মের দায়ভার কখনোই এড়াতে পারেন না। ব্যর্থতার দায়ভার নিয়ে অনেক আগেই তাদের পদত্যাগ করা উচিত ছিল। স্বাস্থ্য খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার স্বার্থে অবিলম্বে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডিজির অপসারণ দাবি করছে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ।
এর আগে গত শনিবার একই দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি সংলগ্ন রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। সেখান থেকে চার দফা দাবিতে ৭২ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেন সংগঠনটির নেতারা। এ সময়ের মধ্যে দাবি পূরণ না হলে শহীদ মিনারের পাদদেশে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল।
চার দফা দাবিসমূহের মধ্যে রয়েছে-
১. ব্যর্থতার দায়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডিজিকে অবিলম্বে অপসারণ করতে হবে।
২. স্বাস্থ্য খাতের সব অনিয়ম ও দুর্নীতি খতিয়ে দেখার জন্য বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করে অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
৩. দেশের সব জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে করোনাভাইরাস শনাক্তকরণ ইউনিট স্থাপন করে বিনামূল্যে করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।
৪. দেশের সব জেলা হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসমূহে চিকিৎসার মানসম্মত পরিবেশ নিশ্চিত করার পাশাপাশি উন্নতমানের আইসিইউ বেড স্থাপন করতে হবে।