শিক্ষার্থীদের আপ্যায়ন ব্যয়ের ৫৪ লাখ টাকা প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে, ডাকসু ভিপির বিরোধিতা
নববর্ষ উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) হলগুলোতে শিক্ষার্থীদের আপ্যায়ন ব্যয়ের টাকা প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এতে বিরোধিতা করেছেন ডাকসু ভিপি নুরুল হক নূর ও সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেন।
আজ বুধবার নববর্ষের জন্য বরাদ্দকৃত হলগুলোর আপ্যায়ন ব্যয়ের ৫৪ লাখ টাকা বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস মোকাবেলায় অসহায় মানুষের সহায়তার জন্য প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে দেওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) পক্ষ থেকে এ আহ্বান জানানো হয়েছে। যদিও ডাকসু ভিপি এবং সমাজসেবা সম্পাদক এ বিষয়ে বিরোধিতা করে আসছেন।
সিদ্ধান্তটি চূড়ান্ত হওয়ায় ক্ষোভ জানিয়েছেন ডাকসু সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেন। এর বিরোধিতা করে গণমাধ্যমে দেওয়া এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে তিনি বলেন, 'ডাকসুর আহ্বানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দকৃত নববর্ষের আপ্যায়ন বাবদ প্রায় ৫৪ লাখ টাকা প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে দান করার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে। আমি, আখতার হোসেন, ডাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক হিসাবে এই সিদ্ধান্তকে প্রত্যাখ্যান করছি। মহামারি করোনার এই দুর্যোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থীই পরিবার নিয়ে চরম আর্থিক সংকটে ভুগছেন। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি নেই অনেকের ঘরে। মধ্যবিত্ত এবং নিম্ন-মধ্যবিত্ত ঘরের এসব শিক্ষার্থীর আর্থিক সহায়তা একান্ত প্রয়োজন। এ অবস্থায় শিক্ষার্থীদের সহায়তা না করে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে তাদের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ দান করা কোনোভাবেই সঠিক এবং সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত হতে পারে না।'
আখতার হোসেন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, 'আমি মনে করি, প্রত্যেক কমিউনিটি তাদের নিজ কমিউনিটির মানুষদের পাশে দাঁড়াতে পারলে এ সংকট থেকে উত্তরণ সম্ভব। তাই আমার প্রস্তাবনা- অবিলম্বে শিক্ষার্থীর জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ উপযুক্ত শিক্ষার্থীদের মাঝেই বিতরণ করা হোক।'
এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছেন ডাকসু সহসভাপতি (ভিপি) নুরুল হক নূরও। তিনি বলেন, 'ডাকসুর পক্ষ থেকে যখন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে এ আহ্বান করা হয় তখন আমি সঙ্গে সঙ্গে ভিসি স্যারকে কল দিয়ে বলেছি যে এ টাকা ডাকসুর মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দরিদ্র শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিতরণ করা হোক। ভিসি স্যার সেটি সঙ্গে সঙ্গে নাকচ করে দিয়েছেন। আমার কথা হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর তহবিলে সারা দেশের মানুষ দিচ্ছে কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ৫০০ শিক্ষার্থী আছেন যারা খুবই দরিদ্র, যদি ২০০০ টাকা করেও তাদের দেওয়া হতো তাহলে শিক্ষার্থীদের টাকা দিয়ে শিক্ষার্থীদের কল্যাণ হতো। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি আমাদের প্রস্তাব নাকচ করে দেয় তাতে আমাদের কিছু করার নেই। তবে আমরা ব্যক্তিগতভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক বর্তমান শিক্ষার্থীদের সহযোগিতায় ৬০ জন শিক্ষার্থীকে সহযোগিতা করেছি। আরো বেশ কিছু ছাত্রকে সহযোগিতা করার চেষ্টা চলছে। আমরা আমাদের জায়গা থেকে করে যাচ্ছি।'
ডাকসু ভিপি আরো বলেন, 'প্রধানমন্ত্রীর নিকট শো-আপ এবং তোষামোদির বহিঃপ্রকাশ এখানেও ঘটছে, যাতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে হাইলাইট হতে পারে। অথচ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চাইলে নিজেই শিক্ষার্থীদের নিয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলেও সরাসরি সহযোগিতা করতে পারে। প্রধানমন্ত্রীর তহবিলে দেওয়ার কোনো যৌক্তিকতা আমি দেখছি না।'
করোনাভাইরাস মহামারিতে চলমান সাধারণ ছুটিতে সব বন্ধ থাকায় অর্থকষ্টে থাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৩০০ জন দরিদ্র শিক্ষার্থী ডাকসু সমাজসেবা সম্পাদকসহ অন্যদের কাছে সহযোগিতার জন্য আবেদন করেছেন বলে জানান ডাকসুর নেতারা।