রাবিতে চাঁদা না পেয়ে নির্মাণকাজ বন্ধের অভিযোগ ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে
চাঁদা না পেয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) নির্মাণাধীন শেখ রাসেল স্কুলের নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। আজ রোববার দুপুরে ছাত্রলীগের দুই নেতা গিয়ে স্কুলের নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেন বলে জানা গেছে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অভিযোগ, দীর্ঘদিন থেকে ছাত্রলীগ তাদের কাছে ৩০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে আসছিল। এর আগে টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে ছাত্রলীগ নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ৫ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের জুবেরী মাঠের দক্ষিণ পাশে স্কুলটির নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন। চার তলাবিশিষ্ট ভবনটির নির্মাণকাজের জন্য বরাদ্দ হয় ১০ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। রাজশাহীর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘শিকদার কনস্ট্রাকশন’ নির্মাণ কাজের দায়িত্ব পায়। গত ৩০ জুলাই নির্মাণকাজ শুরু হয়।
নির্মাণকাজের তত্ত্বাবধানকারী মমতাজ উদ্দীনের অভিযোগ, কাজ শুরুর পরদিন থেকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা নির্মাণস্থলে গিয়ে তাঁকে বিভিন্নভাবে হুমকি দিতে থাকেন। পরে ১০ আগস্ট তিনি ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া ও সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনুর সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলেন। এ সময় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সম্পাদক তাঁর কাছে ৩০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। অন্যথায় স্কুলের কাজ বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেয় তাঁকে।
মমতাজ উদ্দীন এনটিভি অনলাইনকে আরো বলেন, ‘প্রায়ই ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা নির্মাণস্থলে গিয়ে আমার কাছে চাঁদা দাবি করতেন। আজ দুপুরে রাবি ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সুরঞ্জিত প্রসাদ বৃত্তসহ দুজন গিয়ে কাজ বন্ধ করার নির্দেশ দিয়ে প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার আশরাফুল ইসলামকে তুলে নিয়ে যান। কিছুক্ষণ পর তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এরপর থেকেই কাজ বন্ধ রয়েছে।’
ম্যানেজার আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘আমাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিনস কমপ্লেক্সের পেছনে ধরে নিয়ে যান। চাঁদার বিষয়টি মীমাংসার জন্য নির্দেশ দিয়ে আমাকে ছেড়ে দেন।’
আজ রোববার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে সেখানে গেলে দেখা যায়, শ্রমিকরা কাজের পরিবর্তে একসঙ্গে মাঠে বসে আছেন। হুমকির পর থেকে তাঁরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
সবুজ নামের এক শ্রমিক বলেন, ‘সকাল থেকে কাজ করছিলাম। দুপুরে দুজন এসে ম্যানেজারকে কাজ বন্ধ করে দিতে বলেন। তাঁকে তুলেও নিয়ে যান। কাজ করতে গেলে কখন কী ঝামেলা হয়। তাই আমরা কাজ করছি না।’
তত্ত্বাবধানকারী মমতাজ উদ্দীন বলেন, ‘আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। শ্রমিকদের নিরাপত্তার বিষয়টি ভেবে কাজ বন্ধ রয়েছে। এভাবে চললে কাজ শেষ হবে না। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’
তবে ছাত্রলীগ নেতা সুরঞ্জিত প্রসাদ বৃত্ত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি আজকে স্কুলের ওদিকে যাইনি। এগুলো মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগ। আমি কাউকেই তুলে আনিনি কিংবা স্কুলের কাজ বন্ধও করে দেইনি।’
এ বিষয়ে রাবি ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া ও সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু দাবি করেন, ‘আমরা কখনোই কারো কাছে এ ব্যাপারে চাঁদা দাবি করিনি। আজকের ঘটনাটি এখনও জানি না। তবে কেউ যদি ছাত্রলীগের নাম ভাঙিয়ে এমন কাজ করে তাহলে তার বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘ঠিকাদার আমার কাছে অভিযোগ করেছে। আমি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি।’
এ বিষয়ে জানতে উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুস সোবহানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।
জানতে চাইলে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য বলেন, ‘আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। ছাত্রলীগের কেউ জড়িত থাকলে আমরা কঠোর ব্যবস্থা নিব।’