বড় ভাইদের নির্দেশ ছাড়া রিডিং রুমে যাওয়া নিষেধ!
ছাত্রলীগের বড় ভাইদের নির্দেশনা ছাড়া প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করতে রিডিং রুমে যেতে পারবেন না। গেলে তাঁদের গেস্টরুমে নিয়ে মারধর করা হবে বলে হুমকি দেওয়া হয়েছে। এমন অভিযোগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) স্যার এ এফ রহমান হলের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের। তাঁদের রিডিং রুমে যেতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন দ্বিতীয় বর্ষে অধ্যয়নরত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। তাঁরা সবাই হল কমিটির শীর্ষ পদপ্রত্যাশী ও হলের বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান রনির অনুসারী। অন্যদিকে রনি ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাসের অনুসারী।
জানা যায়, রনির অনুসারী দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের সপ্তাহে তিন দিন গেস্টরুম নেন। এ সময় তাঁদের ক্যাম্পাসে কীভাবে চলবে, সে বিষয়ে বিভিন্ন ‘ম্যানার’ শেখান। গেস্টরুমে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা যাতে হলের ক্যান্টিনে খাওয়া-দাওয়া না করেন, সে নির্দেশনাও দেওয়া হয়। এমনকি তাঁদের রিডিং রুমেও যেতে নিষেধ করা হয়। গেলে পরবর্তী গেস্টরুমে তাঁদের মারধর করা হবে বলেও হুমকি দেওয়া হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম বর্ষের এক শিক্ষার্থী বলেন, “গেস্টরুমে যখন রিডিং রুমে যেতে নিষেধ করা হয়, তখন পাশ থেকে আমার এক বন্ধু সিনিয়রদের কাছে জানতে চায়, ‘গণরুমে পড়া যায় না, তাহলে কোথায় গিয়ে পড়ব?’ জবাবে সিনিয়ররা বলেন, ‘প্রথম বর্ষে কোনো পড়াশোনা নেই। ঘুরবি, বেড়াবি আর রাজনীতি করবি।’”
ওই শিক্ষার্থী আরো বলেন, ‘আমরা এক রুমে ৩০ থেকে ৪০ জনের মতো থাকি। সেখানে পড়ার কোনো পরিবেশ নেই। কিন্তু রিডিং রুমে গিয়ে পড়লে সেখানে যাওয়া নিষেধ করে দিয়েছে। এমনকি হলের ক্যান্টিনে না খেতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
স্যার এ এফ রহমান হলের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘গেস্টরুমে লেকচার শেষ হলে তাঁদের জোর করে রাতে ক্যাম্পাসে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তাঁরা পড়াশোনা করতে চাইলেও করতে দেওয়া হয় না।’
অভিযুক্ত শিক্ষার্থীরা হলেন জাপানিজ স্টাডিজ বিভাগের আরিফ, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অয়ন, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের হাসান, সমাজকল্যাণ বিভাগের পলাশ, পালি ও বুড্ডিস্ট স্টাডিজ বিভাগের মাহবুব, সমাজকল্যাণ বিভাগের জাবেদ, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের তানভীর, পালি ও বুড্ডিস্ট স্টাডিজ বিভাগের আকির। তাঁরা সবাই দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।
তবে অভিযুক্ত এসব শিক্ষার্থীর দাবি, তাঁদের সিনিয়ররা যা নির্দেশনা দেন, তা তাঁরা বাস্তবায়ন করেন।
অভিযুক্তরা হল ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশী ও বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান রনির অনুসারী বলে স্বীকার করেন রনি। অভিযোগের বিষয়ে রনি এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘তাদের এ ধরনের কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। আমি খোঁজ নিচ্ছি।’
প্রথম বর্ষের একাধিক শিক্ষার্থীর অভিযোগ, এসব সিনিয়র প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের গেস্টরুমে বিভিন্ন বিষয়ে চাপ দেয়। রাজনৈতিক প্রোগ্রাম থাকলে তাঁদের ক্লাসে যেতে দেওয়া হয় না। বিভিন্ন বিষয়ে নানাভাবে ভয়-ভীতি দেখায়। রাতে তাঁদের হল থেকে বের করে দেওয়া হয়। এ সময় নির্দেশনা দেওয়া হয় রাত ১টা বা ২টার আগে হলে না ঢুকতে।
অভিযোগের বিষয়ে ঢাবি ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাসকে একাধিকবার কল দিলেও তিনি ফোন ধরেননি। সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসাইন বলেন, ‘কারো বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ পেলে আমরা ছাত্রলীগ থেকে ব্যবস্থা নেব।’
একইভাবে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক কে এম সাইফুল ইসলাম খান। তিনি এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘হলে কোনো শিক্ষার্থী কী করবে, সে বিষয়ে ছাত্রলীগ নির্দেশনা দেওয়ার কে? যদি কেউ অভিযোগ করে, তবে আমরা অভিযুক্তদের বিষয়ে ব্যবস্থা নেব।’