পূজার দিনে নির্বাচন প্রতিহতের ঘোষণা জগন্নাথ হল সংসদের
হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পূজার দিনে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করায় নির্বাচন কমিশনের (ইসি) বিরুদ্ধে কড়া হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের শিক্ষার্থীরা। নির্বাচনের তারিখ না পেছালে তাঁরা তা প্রতিহতের ঘোষণা দিয়েছেন।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল পরবর্তী প্রতিবাদ কর্মসূচি থেকে এই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তাঁরা।
জগন্নাথ হল ছাত্র সংসদের সাংস্কৃতিক সম্পাদক কান্ঞ্জিলাল রায় জীবন বলেন, ‘সবচেয়ে বড় সরস্বতী পূজা যে ঢাকাতে হয়, যে ঢাকাতে ৪৪ লাখ হিন্দু বসবাস করে সেই ঢাকায় সরস্বতী পূজার মত একটি সাংস্কৃতিক উৎসবের দিন বাংলাদেশের দুই প্রধান সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের ভোট গ্রহণের মত সিদ্ধান্ত নির্বাচন কমিশন নেয় কেমন করে? আমরা জগন্নাথ হল ছাত্র সংসদ ও জগন্নাথ হলের সাধারণ শিক্ষার্থী, আমাদের শরীরে এক বিন্দু রক্ত থাকতে আমাদের সাংবিধানিক অধিকার নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে এই নির্বাচন কমিশন খেলতে পারবে না।’
জগন্নাথ হল ছাত্র সংসদের সদস্য মিঠু চন্দ্র শীল বলেন, ‘আমাদের আবেগ ও ভালবাসার জায়গা শ্রী শ্রী সরস্বতী পূজা ৩০শে জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে। সেই দিন নির্বাচন কমিশন কর্তৃক ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ভোট গ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। আমাদের পূজাটা সব সময় পূর্ব নির্ধারিত তারিখে হয়ে থাকে। নির্বাচন কমিশন এই ধৃষ্টতা কীভাবে দেখালেন যে, আমাদের এই পূজার আনন্দমুখর পরিবেশ নষ্ট করার জন্য এই দিন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছেন।’
রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে জগন্নাথ হলের অন্তত তিন শতাধিক শিক্ষার্থী জড়ো হয়ে নির্বাচনের তারিখ পেছানোর দাবি জানিয়েছেন। এতে হল সংসদের ভিপি উৎপল দাসসহ হল সংসদ ও হলের সাধারণ শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় তারা ‘পূজার দিনে নির্বাচন, মানি না মানব না’, ‘ডাকসু মানে না, পূজার দিনে নির্বাচন’, ‘পরিবর্তন করো, পূজার দিনে নির্বাচন’ প্রভৃতি স্লোগান দেন।
আগামী ৩০ জানুয়ারি ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তারিখ নির্ধারন করেছে নির্বাচন কমিশন। ওই একই দিনে সরস্বতী পূজার দিন হওয়ায় এ নিয়ে গত বেশ কিছু দিন ধরেই আপত্তি জানিয়েছে আসছে হিন্দুধর্মাবলম্বীরা। নির্বাচনের তারিখ পেছানোর দাবিতে এর আগেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন ব্যানারে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।
গত ৫ জানুয়ারি সরস্বতী পূজার কারণে ৩০ জানুয়ারি ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোট গ্রহণের নির্ধারিত তারিখ পেছানোর জন্য রিট করেন আইনজীবী অশোক কুমার ঘোষ।
আইনজীবী জানান, ২৯ ও ৩০ জানুয়ারি হিন্দু সম্প্রদায়ের সরস্বতী পূজা অনুষ্ঠিত হবে। এ উপলক্ষে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সরস্বতী পূজার আয়োজন করা হবে। কিন্তু ঢাকায় সিটি নির্বাচন উপলক্ষে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা হবে। এ জন্য সিটি নির্বাচনের পেছানোর জন্য রিটটি করা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার ভোটের দিন পরিবর্তনের নির্দেশনা চেয়ে করা রিট খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। আজ মঙ্গলবার বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। এতে আগামী ৩০ জানুয়ারি দুই সিটিতে নির্বাচন হতে বাধা নেই বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।
এ সময় রাষ্ট্রপক্ষের সহকারী আইনজীবী তৌহিদুল ইসলাম আদালতকে জানান, পূজা ২৯ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে। রাষ্ট্রীয়ভাবে ওই দিন প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকবে। ৩০ জানুয়ারি নির্বাচন হলে উৎসবে কোনো বাধা হবে না। ভোট শুধু ঢাকা সিটিতে। সারা দেশে পূজা পালনে কোনো সমস্যা হবে না। প্রতিষ্ঠানগুলোতে সকাল ১০টার আগেই পূজা শেষ হয়ে যায়। সুতরাং পূজার জন্য এ ধরনের আদেশ দেওয়া ঠিক হবে না। তা ছাড়া আগামী ২ ফেব্রুয়ারি থেকে এসএসসি পরীক্ষা। এর পরই এইচএসসি পরীক্ষা। এভাবে রাষ্ট্রীয় এবং ধর্মীয় অনুষ্ঠান সারা বছরই অনুষ্ঠিত হচ্ছে।