পাবিপ্রবির উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে বাসভবন ঘেরাও
দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পাবিপ্রবি) উপাচার্য ড. এম রোস্তম আলীসহ প্রশাসনের সব কর্মকর্তার পদত্যাগ দাবিতে তাঁর বাসভবন ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা।
আজ শনিবার সকাল থেকে বিকেল ৪টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে বাসভবনে অবরুদ্ধ আছেন উপাচার্য। পরে উদ্ভুত পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক করতে ছাত্র উপদেষ্টা, প্রক্টরিয়াল বডির সদস্য, সব অনুষদের ডিন ও বিভাগীয় প্রধানদের নিয়ে বৈঠকে বসেন উপাচার্য।
বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা জানান, পাবিপ্রবি উপাচার্য প্রফেসর ড. এম রোস্তম আলীর কাছে এক চাকরিপ্রার্থীর ঘুষের টাকা ফেরতের অডিও ফাঁস হওয়ার ঘটনা তদন্তসহ ১২ দফা দাবি পূরণে গত পাঁচদিন ধরে আন্দোলন করে আসছে শিক্ষার্থীরা। দাবি পূরণে বেঁধে দেওয়া সময়সীমা পার হলেও প্রশাসন কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় উপাচার্যের বাসভবন ঘেরাও করেছেন তারা। দাবি পূরণ না হওয়া আন্দোলন কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ারও ঘোষণা দেন তারা।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থী প্রতিনিধি দলের সদস্য মাহমুদ কামাল তুহিন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কেবল দুর্নীতিই নয়, মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে একাধিকবার আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। আজ শনিবার সকাল থেকে আমরা সব ক্লাস পরীক্ষা-বর্জন করে উপাচার্যের বাসভবন ঘেরাও করে উপাচার্যসহ প্রশাসনের সব কর্মকর্তার পদত্যাগ দাবি করছি। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের ধারাবাহিক কর্মসূচি চলবে।’
তারা আরো অভিযোগ করেন, ঝিনাইদহে সরকারি উন্নয়ন কাজে রডের বদলে বাঁশ দিয়ে বিতর্কিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইঞ্জিনিয়ারিং কনসোর্টিয়াম লিমিটেডকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বরাদ্দ হওয়া ৪৮০ কোটি টাকা খরচের পরামর্শক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন উন্নয়ন নয়, বাজেটের টাকা লুটপাট করতেই তাদের নিয়োগ দিয়েছে।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শুধু ভিসি স্যারই নন, দায়িত্বপ্রাপ্তরা যে যার মতো করে অপকর্ম করে যাচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয়টি যেন দুর্নীতির স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। মাত্র ২৮ জোড়া বেঞ্চ কেনায় খরচ দেখানো হয়েছে সাড়ে ছয় লাখ টাকা, গাড়ি কেনার আগেই ২৬ লাখ টাকা অগ্রিম জ্বালানি কেনা হয়েছে। যার রশিদ বিল ভাউচার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ফেসবুক পেজে রয়েছে। আমরা সমস্যায় পড়লে ভিসি স্যারকে ক্যম্পাসে পাওয়া যায় না। বিভিন্ন সময়ে প্রক্টর বা ছাত্র উপদেষ্টা স্যারদের কাছে গিয়েও কোনো সুরহা পাওয়া যায় না। আমরা বাধ্য হয়েই এই দুর্নীতিবাজ ভিসিসহ কর্মকর্তাদের পদত্যাগ দাবি করছি।
এদিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ভিসির বাসভবন ঘেরাওয়ের ফলে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিসহ বিভিন্ন অনুষদের ডিন, কয়েকটি বিভাগের চেয়ারম্যান ও ভিসি অনুসারী শিক্ষকরা।
গণমাধ্যম কর্মীরা ভিসির বাসভবনে আটকেপরা উপাচার্য, রেজিস্ট্রার ডিন শিক্ষকদের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলতে বার বার চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি।
প্রসঙ্গত, গত ২৪ অক্টোবর পাবিপ্রবির ইতিহাস ও বাংলাদেশ স্টাডিজ বিভাগে শিক্ষক নিয়োগে লিখিত পরীক্ষায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ না হয়ে উপাচার্যের কাছে ঘুষ হিসেবে দেওয়া টাকা ফেরত চাওয়ার একটি অডিও বিভিন্ন মাধ্যমে ভাইরাল হয়। পরে ওই অডিওতে মন্তব্য করায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তিন শিক্ষককে শোকজ নোটিশ দেয়। এরপর গত ২৮ অক্টোবর থেকে শিক্ষার্থীরা ১২ দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করলেও তাদের দাবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্ণপাত না করায় শনিবার থেকে তারা উপাচার্য ও কর্মকর্তাদের পদত্যাগের আন্দোলন শুরু করেছে।