ঢাবির হলে শিক্ষককে মারধর, ছাত্রলীগ নেত্রী বহিষ্কার
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শাড়ি বিতরণ নিয়ে গত রোববার সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে ছাত্রলীগের দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। মারামারি থামাতে গেলে হলের সহকারী আবাসিক শিক্ষক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জোবাইদা নাসরীনকে মারধর ও লাঞ্ছিত করেছেন ছাত্রলীগের নেত্রীরা।
এ ব্যাপারে গত সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, শিক্ষক সমিতির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ও হলের প্রাধ্যক্ষ বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন জোবাইদা নাসরীন। লাঞ্ছিত করার ঘটনায় দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সালসাবিল রাবেয়াকে সংগঠন থেকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। এদিকে, শিক্ষকের ওপর হামলার ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে দ্রুত বিচার দাবি করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সহসভাপতি (ভিপি) নুরুল হক নুর।
প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক ছাত্রলীগ নেত্রী জানান, গত ৪ জানুয়ারি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৭২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ছিল। ওই দিন বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে ছাত্রলীগ কর্মীদের মধ্যে শাড়ি বিতরণ করছিলেন হল শাখার সাধারণ সম্পাদক রওনক জাহান রাইয়ানসহ ছাত্রলীগের অন্য নেত্রীরা। এ সময় কর্মীদের মধ্যে ছয়জন শাড়ি না পাওয়ায় তাঁরা রুমে চলে যান। হল শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সালসাবিল রাবেয়া ছয়টি শাড়ি সেখান থেকে নিয়ে ছয়জনের রুমে গিয়ে দিয়ে আসেন। সালসাবিল ছয়টি শাড়ি কর্মীদের দেওয়ার কারণে ওই সময় ক্ষোভ প্রকাশ করেন হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রওনক জাহান রাইয়ান। সে সময় বিষয়টি নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে হল সংসদের বহিঃক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক ছাত্রলীগের পাপিয়া আক্তার, হল সংসদের সমাজসেবা সম্পাদক ইসরাত জাহান ইতি ও মিলি রানী আহত হন।
খবর পেয়ে হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক জাকিয়া পারভীনের নির্দেশে ঘটনাস্থলে যান আবাসিক শিক্ষক জোবাইদা নাসরীন ও তাহমিনা হক। তাঁরা সালসাবিল ও রিয়াকে হল থেকে বের করে আনতে গেলে ফটকের কাছে তাঁদের ওপর আবারও হামলা চালান রওনকের অনুসারীরা।
এ সময় ‘ছাত্রলীগের সমালোচনা করে পত্রপত্রিকায় লেখালেখির’ অভিযোগ তুলে আবাসিক শিক্ষক জোবাইদা নাসরীনের ওপরও হামলা করেন ছাত্রলীগের নেত্রীরা। তখন সালসাবিল ও রিয়াকে মারতে মারতে হল থেকে বের করে দেন রওনকের অনুসারীরা।
এ ব্যাপারে গত সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, শিক্ষক সমিতির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ও হলের প্রাধ্যক্ষ বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন জোবাইদা নাসরীন।
বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. জাকিয়া পারভীন বলেন, ‘জোবাইদা আমার হলের যেকোনো সমস্যা সাহসের সঙ্গে মোকাবিলা করেন। তাঁর ওপর হামলার ঘটনা অবশ্যই ন্যক্কারজনক। আমরা সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেছি। তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে। এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেব।’
এ বিষয়ে ঢাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা উপাচার্যকে এ বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিতে চিঠি দিয়েছি।’
সহযোগী অধ্যাপক জোবাইদা নাসরীন বলেন, ‘শাড়ি নিয়ে ছাত্রলীগের দুপক্ষের মারামারি অভ্যন্তরীণ বিষয়। কিন্তু হলের হাউস টিউটর হিসেবে আমাদের দায়িত্ব হলো কেউ আক্রান্ত হলে তাকে সেভ করা। কে কোন দল করে, সেটা আমাদের দেখার বিষয় নয়। কিন্তু সেখানে একজন শিক্ষক হিসেবে ছাত্রীরা আমার গায়ে হাত তুলেছে।’
ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করে জোবাইদা নাসরীন বলেন, ‘তাদের মারধরের কারণে আমার ঘাড় ফুলে গেছে এবং আমার পায়ে প্রচণ্ড ব্যথা। আমি এখন চিকিৎসাধীন। প্রশাসনের কাছে বিচার দিয়েছি। আমি এ ঘটনার তদন্ত সাপেক্ষে সুষ্ঠু বিচার ও নিরাপত্তা চাই।’
ডাকসু ভিপির নিন্দা ও বিচার দাবি
সহযোগী অধ্যাপক জোবাইদা নাসরীনের ওপর হামলার ঘটনায় গতকাল মঙ্গলবার রাতে গণমাধ্যমে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে নিন্দা ও দোষীদের শাস্তির দাবি জানান ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুর।
বিজ্ঞপ্তিতে নুর বলেন, ‘গত ৫ জানুয়ারি বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে শাড়ি নিয়ে ছাত্রলীগের হল শাখার নেত্রীদের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষ থামাতে গেলে হল শাখা ছাত্রলীগের নেত্রীরা হলের হাউস টিউটর নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. জোবাইদা নাসরীনকে শারীরিকভাবে আঘাত ও লাঞ্ছিত করে। আঘাতের ফলে ড. জোবাইদা নাসরীনের ঘাড়ের রগ ফুলে যায় ও পায়ে প্রচণ্ড আঘাতপ্রাপ্ত হন। এ ছাড়া ওই ঘটনায় হলের দুজন শিক্ষার্থী আহত হন এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভীতি ছড়িয়ে পড়ে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ওই ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায়।
একই সঙ্গে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধ যথাযথ ও দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানায়, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে।’