ঢাবিতে সান্ধ্য কোর্সে ভর্তি স্থগিত, নীতিমালা প্রণয়নে কমিটি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) সান্ধ্য কোর্সসহ সব ধরনের অনিয়মিত কোর্স পরিচালনার জন্য নীতিমালা প্রণয়ন করতে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি একটি যৌক্তিক ও যুগোপযোগী নীতিমালা প্রণয়ন করতে সুপারিশ করবে।
গতকাল সোমবার রাতে সাংবাদিকদের এ সিদ্ধান্তের কথা জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। তিনি বলেন, কমিটির সুপারিশ না আসা পর্যন্ত সান্ধ্য কোর্সসহ অনিয়মিত সব কোর্সের নতুন শিক্ষার্থী ভর্তির সব ধরনের কার্যক্রম আগামী পাঁচ সপ্তাহের জন্য স্থগিত করা হয়েছে।
সান্ধ্য কোর্স পরিচালনার সময়োপযোগী নীতিমালা করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক নাসরীন আহমাদকে প্রধান করে একটি কমিটি করা হয়েছে। কমিটিতে আরো আছেন সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. কামাল উদ্দীন, ১৩টি অনুষদের ডিন ও দুটি ইনস্টিটিউটের (আইবিএ এবং শিক্ষা ও গবেষণা) পরিচালক। তাঁরা পাঁচ সপ্তাহের মধ্যে নীতিমালা তৈরি করবেন।
এর আগে এদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্যদের নিয়ে সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অংশ নেবে কি না এবং চলমান সান্ধ্য কোর্সের ধরনে পরিবর্তন আসবে কি না, এ দুই বিষয়ে আলোচনা হয়। তর্ক-বিতর্ক ও উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ের পর রাত ১০টায় শিক্ষা পরিষদের সভা শেষ হয়।
সভার প্রথম ঘণ্টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষার বাইরে রাখার ব্যাপারে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হয়। পরের প্রায় ছয় ঘণ্টা সান্ধ্য কোর্সের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। সভায় সান্ধ্য কোর্স পর্যালোচনা ও যৌক্তিকতা যাচাই কমিটির প্রতিবেদন নিয়ে শিক্ষকেরা তর্কে জড়ান। এ সময় ওই কমিটির প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের ডিন তোফায়েল আহমদ চৌধুরী কয়েকজন শিক্ষকের সমালোচনার জবাবও দেন। শিক্ষকদের প্রায় সবাই সান্ধ্য কোর্সের পক্ষে বিভিন্ন যুক্তি তুলে ধরেন।
সভা শেষে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, ‘পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে আলোচনা হয়েছে। সান্ধ্য কোর্স যৌক্তিকতা যাচাই কমিটির পেশকৃত প্রতিবেদন গ্রহণ করা হয়েছে। সেই প্রতিবেদন নিয়ে প্রায় সোয়া সাত ঘণ্টা আলোচনা হয়। সুপারিশের শুধু এক জায়গা একটু পরিবর্তন আনা হয়েছে সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে। সে জন্য আরেকটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।’
সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে এসে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ সান্ধ্য কোর্সের ব্যাপক সমালোচনা করেন। এরপরই বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্জুরি কমিশন সান্ধ্য কোর্সের বিষয়ে কঠোর হয়। পরে বিষয়টি নিয়ে শুরু হয় বিশ্লেষণ ও বিতর্ক। এরই মধ্যে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় সান্ধ্য কোর্স বন্ধের কথা জানিয়েছে। সদ্য সমাপ্ত সংসদ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও রাষ্ট্রপতির বক্তব্যকে সমর্থন দেন। তিনি সান্ধ্য কোর্সের ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও ইউজিসিকে কঠোর হতে বলেন।
এ ছাড়া গত ৯ ফেব্রুয়ারি সান্ধ্য কোর্সে সাময়িকভাবে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধের সুপারিশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে সান্ধ্য কোর্স যৌক্তিকতা যাচাই কমিটি। কমিটির প্রতিবেদনের বিষয় একাডেমিক সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা থাকলেও তা সম্ভব হয়নি। সে জন্য আরেকটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।