ঢাবিতে শিবির সন্দেহে চার শিক্ষার্থীকে ছাত্রলীগের ‘নির্যাতন’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) আবারও গেস্টরুমে নিয়ে নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। ইসলামী ছাত্র শিবিরের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে চার শিক্ষার্থীকে মারধর করে ছাত্রলীগ পুলিশে দেয়। এর মধ্যে গুরুতর আহত অবস্থায় দুজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায় পুলিশ।
গতকাল মঙ্গলবার রাত ২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে এ ঘটনা ঘটে। ছাত্রলীগের নেতারা শিবির সন্দেহে পুলিশে দিলেও কোনো প্রমাণ না পেয়ে তাদের ছেড়ে দেয় পুলিশ।
এ ঘটনায় আহতরা হলেন ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মো. মুকিম চৌধুরী, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সানওয়ার হোসেন, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মিনহাজ উদ্দীন ও একই বর্ষের আরবি বিভাগের শিক্ষার্থী আফসার উদ্দিন। এর মধ্যে গুরুতর আহত হওয়ায় মুকিম ও সানওয়ারকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।
ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, জহুরুল হক হল শাখা ছাত্রলীগের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সহসভাপতি আনোয়ার হোসাইন ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমির হামজা শিবির সন্দেহে মুকিমকে গেস্টরুমে নিয়ে আসে। পরে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে কথাবার্তায় হামজার মনে সন্দেহ সৃষ্টি হয়। পরে তাঁরা মুকিমের সঙ্গে যোগাযোগ থাকায় আফসারকেও গেস্টরুমে নিয়ে আসে। এরপর তাঁদের দুজনকে হলের বর্ধিত ভবনে নিয়ে যাওয়া হয়। উভয়ের সঙ্গে সানওয়ার, মিনহাজের ম্যাসেঞ্জারে যোগাযোগ থাকায় তাদেরও ডাকা হয়।
ভুক্তভোগীদের বর্ণনা মতে, জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে তাদের জহুরুল হক হল ছাত্র সংসদের সহসভাপতি সাইফুল্লাহ আব্বাসী অনন্ত ও হল শাখা ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক শাহীন আলম চড়-থাপ্পড় মারতে থাকেন। এ সময় লাঠি, রড দিয়ে পিটিয়ে এবং কিল-ঘুষি মারেন হলের সাবেক সহসভাপতি কামাল উদ্দিন রানা ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমির হামজা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘রাত ১১টার দিকে মুকিমকে রুমে পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে বন্ধুরা রাত ১টার দিকে তাঁকে খুঁজতে বের হলে গেস্টরুম থেকে বড় ভাইদের মুকিমকে সঙ্গে নিয়ে বের হতে দেখি। এ সময় মুকিম আহত অবস্থায় ছিল।’
আরেক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘আনোয়ার হোসাইন তাদের ডেকে আনলেও মারধরে জড়িত ছিলেন না।’
তাদের মারধর শেষে হলের আবাসিক শিক্ষক বিল্লাল আহমেদের মাধ্যমে প্রক্টর টিম ও পুলিশের হাতে দেওয়া হয়। পরে পুলিশ আহত অবস্থায় তাদের শাহবাগ থানায় নিয়ে যায়।
এদিকে ঘটনার বিষয়ে জহুরুল হক হল সংসদের সহসভাপতি সাইফুল্লাহ আব্বাসী অনন্ত, সহসভাপতি আনোয়ার হোসাইন ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমির হামজা দাবি করেন, চারজন যে শিবির করে তার প্রমাণ তাঁরা পেয়েছিলেন। তা ছাড়া, তাদের থেকে দুটি শিবির সংশ্লিষ্ট বইও উদ্ধার করেছি। যা পুলিশের নিকট দেওয়া হয়েছে।
যদিও গতকাল রাত ২টার দিকে সাংবাদিকদের সঙ্গে তাদের কথা হলে তাঁরা কোনো বইয়ের নাম বলতে পারেননি। পরে পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে তাদের বিরুদ্ধে শিবিরের কোনো সংশ্লিষ্টতা না পাওয়ায় দুপুর দেড়টার দিকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
জানতে চাইলে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসান বলেন, তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। কিন্তু কোনো প্রমাণ না পাওয়ায় তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রাব্বানী এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘পুলিশকে বলে দেওয়া হয়েছে যে, কোনো প্রমাণ না পেলে তাদের থানায় না রাখতে। নির্যাতনের বিষয়ে তিনি বলেন, এটা হলের অভ্যন্তরীণ বিষয়। তবে যদি কেউ আমাদের কাছে অভিযোগ করে তবে আমরাও বিষয়টি দেখব।’
আনোয়ার হোসেন ও আমির হামজা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়ের অনুসারী। এ বিষয়ে জয় বলেন, ‘আমি যতটুকু জানি তাদের মারধর করা হয়নি। তবে যদি কেউ মারধর করে তবে এটা সমর্থনযোগ্য নয়।’