ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সান্ধ্য কোর্স থাকবে না : উপাচার্য
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) আর সান্ধ্য কোর্স থাকবে না বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান।
আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এনটিভি অনলাইনকে এসব কথা বলেন ভিসি ড. আখতারুজ্জামান।
অধ্যাপক আখতারুজ্জামান বলেন, ‘আমি অনেক আগে থেকেই এটাকে (সান্ধ্য কোর্স) সমর্থন করতাম না। এটি যাতে বাদ দেওয়া যায় সে ব্যাপারে আমিই প্রথমে উদ্যোগ গ্রহণ করি। কয়েক মাস আগে আমি এটি বন্ধের জন্য একটি কমিটি গঠন করি। কমিটির প্রধান যিনি বিজ্ঞান অনুষদের ডিন, তিনি আমাকে কয়েকদিন আগেই এই বিষয়ে জানিয়েছেন। কমিটি ইতোমধ্যে অনেক অসঙ্গতি পেয়েছে। আগামী এক দেড় মাসের মধ্যেই আমরা আমাদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারব।’
গত সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫২তম সমাবর্তনে এই সান্ধ্যকালীন কোর্সের কঠোর সমালোচনা করেন রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য মো. আবদুল হামিদ। তিনি এটি বন্ধেরও আহবান জানান।
এরপরেই বিষয়টি নিয়ে আবারও বিতর্ক তৈরি হয়। এর প্রেক্ষিতে আজ মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) থেকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সান্ধ্যকালীন কোর্স বন্ধের নির্দেশনা দেওয়া হয়। ইউজিসির পাঠানো সংবাদবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয় এ ব্যাপারে দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
রাষ্ট্রপতি যেটা বলেন সেটা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য এক ধরণের আইন তৈরি হয়ে যায় বলে উল্লেখ করেন ঢাবি উপাচার্য। তিনি বলেন, ‘মহামান্য রাষ্ট্রপতি বিষয়টি নিয়ে আগে থেকেই অখুশি ছিলেন। আমরা তখন থেকেই এটি বন্ধের জন্য সিদ্ধান্ত নেই। যেহেতু এটি একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া ছিল। তাই আমরা অনেক চিন্তা ভাবনা করেই এগোচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘সান্ধ্য কোর্স বন্ধের জন্য ২০১৯ সালের মে মাসে একটি কমিটি গঠন করা হয়। সান্ধ্য প্রোগ্রামের ফলে নানা ধরণের অনিয়ম, বিশৃঙ্খলা, অপ্রোয়জনীয়, ছাত্র চাহিদায় বিবেচনা, প্রথা কমানোর আদৌ প্রয়োজন আছে কিনা সেসব বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে বলা হয় ওই কমিটিকে।’
ভিসি বলেন, ‘কমিটি তার কাজ অনেকদূর এগিয়ে গেছে। আগামী এক থেকে দেড় মাসের মধ্যেই আমরা একটা কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’
ড. আখতারুজ্জামান ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে অধ্যাপনা করেন। তিনি উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পর শুরুতেই তাঁর বিভাগের সান্ধ্য কোর্স বন্ধ করেন বলেও জানান।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বিভিন্ন অনুষদের ৪২টি বিভাগে এই প্রোগ্রাম চালু আছে। এর মধ্যে ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের সাতটি বিভাগে এই সান্ধ্যকালীন কোর্স চালু রয়েছে।
দ্রুতই এই বিষয় নিয়ে একটি নীতিমালা তৈরি হবে বলেও উল্লেখ করেন ড. আখতারুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘আমরা নীতিমালা তৈরি করে যাতে এটি ভবিষ্যতে আর না হয় সে বিষয়টিও উল্লেখ করব।’
ভিসি আরও বলেন, ‘এসব বন্ধ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের যে আসল শক্তি সেটাতেই আমরা ফিরে আসব। শিক্ষার্থীরা যাতে তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ ফিরে পায় সেই বিষয়েই আমরা কাজ করব।’
সমাবর্তনে বাণিজ্যিক কোর্স সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করছে এবং এতে ক্যাম্পাসের সার্বিক পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে বলে মন্তব্য করে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। রাষ্টপ্রধান বলেন, ‘এসব বাণিজ্যিক কোর্সের মাধ্যমে প্রতিবছর হাজার হাজার গ্র্যাজুয়েট বের হচ্ছেন। এসব ডিগ্রি অর্জন করে শিক্ষার্থীরা কতটুকু লাভবান হচ্ছেন এ ব্যাপারে প্রশ্ন থাকলেও এক শ্রেণির শিক্ষক কিন্তু ঠিকই লাভবান হচ্ছেন। তাঁরা নিয়মিত নগদ সুবিধা পাচ্ছেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ক ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করছেন।’