উত্তরার চাইল্ড হ্যাভেন স্কুলে হলো বিজ্ঞান মেলা
বিজয়ের মাস। বিদ্যালয়ের বার্ষিক পরীক্ষা শেষ। ফলাফলও হয়েছে। ফলাফল শেষে মা-বাবার সঙ্গে ঘুরতে যাবে শিক্ষার্থীরা। কিন্তু তার আগেই গত দুদিন আনন্দে মেতে উঠেছিল তারা। এই আনন্দ বিজ্ঞানের সঙ্গে, কৃষির সঙ্গে, পরিবেশের সঙ্গে, রাজধানী ঢাকার ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সঙ্গে।
স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ও আনন্দমুখর পরিবেশে রাজধানীর উত্তরার চাইল্ড হ্যাভেন স্কুলে হয়ে গেল খুদে শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান মেলা। বিদ্যালয়ের প্লে গ্রুপ থেকে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গত শুক্রবার ও শনিবার বিজ্ঞান মেলায় অংশ নেয়। উত্তরার ৪ নম্বর সেক্টরের ২০ এর সি রোডে অবস্থিত বিদ্যালয়ের দুটি ক্যাম্পাসে এই বিজ্ঞান মেলা হয়। মেলার উদ্বোধন করেন প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. মঞ্জুরুল ইসলাম।
গত শুক্রবার দুপুর ২টা থেকে বিজ্ঞান মেলা শুরু হয়। মেলায় গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী প্রায় ১০০ প্রজেক্ট প্রদর্শন করে। তাদের সহযোগিতা করেন শিক্ষকরা। শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রজেক্ট দেখতে আমন্ত্রিত অতিথি, শিক্ষার্থীদের অভিভাবক, আত্মীয়স্বজন ও দর্শনার্থীদের উপস্থিতিতে মুখর হয়ে ওঠে উৎসবস্থল। খুদে শিক্ষার্থীরা প্রথমেই সালাম দিয়ে, তাদের নামপরিচয় উল্লেখ করে প্রজেক্ট সম্পর্কে দর্শনার্থীদের কাছে ব্যাখ্যা করে।
বিদ্যালয়ের প্লে শ্রেণির কক্ষে গেলে দেখা যায়, বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্ন ধরনের বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল। মেরু অঞ্চল, মরুভূমি, পোষা প্রাণী ও চিড়িয়াখানার প্রাণীরা কীভাবে থাকে তার প্রদর্শনী ছিল সেখানে।
নার্সারি শ্রেণিতে ছিল গর্বের পদ্মা সেতু প্রকল্পের দারুণ প্রদর্শনী। মনোমুগ্ধকর সেই প্রদর্শনীর সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তোলার হিড়িক পড়ে যায়। এ ছাড়া ছিল বিভিন্ন ধরনের ফলমূলের বীজ তেল দিয়ে কী কী করা যায় বা উপকারে আসে তার প্রদর্শনী।
নিরাপদ সড়ক নিয়ে সচেতনতা তৈরি করতে কেজি শ্রেণির শিক্ষার্থীরা উপস্থাপন করে রোড সেফটি ও ট্রাফিক সেফটি প্রকল্প। এ ছাড়া কীভাবে আমাদের জীবনধারণের জন্য মহামূল্যবান অক্সিজেন সরবরাহের বন উজাড় হচ্ছে, তাও তুলে ধরে তারা। পাশাপাশি বনরক্ষায় কী করতে হবে, তা নিয়েও প্রকল্প উপস্থাপন করে।
এ ছাড়া বিভিন্ন শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গ্রামীণ জীবন, স্মার্ট গ্রাম, বায়ু চাপ, সৌর বিদ্যুৎ, রকেট লাঞ্চার, ম্যাজিক মিরর, ম্যাজিক কালার, কালার রিডল, টেলিস্কোপ, টয় স্পাইডার, মিক্সার যন্ত্র, রেসিং কার, পটেনশিয়াল ইলেকট্রিসিটি, ভ্যাকুয়াম ক্লিনার, হাইড্রলিক ক্রেন, মিনি আইপিএস, ম্যানুয়াল এসি, ভবিষ্যতের ম্যানগ্রোভ বন, বিভিন্ন ধরনের কীটপতঙ্গ, প্রাণীদের শ্রেণিবিভাগ, পানির উৎস, আলোর ছড়িয়ে পড়া, পরিবেশ দূষণ, বৃষ্টির পানি ব্যবহার করে চাষাবাদ, চিনিযুক্ত পানি ব্যবহার করে ঘনত্ব টাওয়ার, জলবিদ্যুৎ উদ্ভিদ, প্লাস্টিকের বোতলের পুনর্ব্যবহার, বৈশ্বিক উষ্ণতার প্রভাব, পানি দূষণ, বাধ্য ডিম অবাধ্য ডিম, প্রাকৃতিক উপায়ে রং পরিবর্তন, আগ্নেয়গিরি, পর্যটন কেন্দ্র রাঙামাটি ঝুলন্ত ব্রিজ, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত, সুন্দরবন, ঝরনা ইত্যাদি প্রজেক্ট উপস্থাপন করে।
ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে ছিল পুরান ও নতুন ঢাকার বিভিন্ন স্থাপনা প্রদর্শনী। এসব স্থাপনার মধ্যে ছিল লালবাগ কেল্লা, আহসান মঞ্জিল, ঢাকেশ্বরী মন্দির, আর্মেনিয়ান গির্জা, কার্জন হল, তারা মসজিদ, জাতীয় সংসদ ভবন ও নির্মাণাধীন মেট্রোরেল। এ ছাড়া তারা সৌর সেচ পদ্ধতি, রোবট, ভূকম্পমাপক যন্ত্র, কয়েন উদ্ধার, বৈদ্যুতিক বর্তনী, ফু না দিয়ে বেলুন ফুলানো ইত্যাদি প্রজেক্ট উপস্থাপন করে।
বিজ্ঞান মেলায় আসা বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারের কর্মকর্তা ডা. মোস্তফা মঈন উদ্দিন বলেন, ‘ছোট শিক্ষার্থীরা যেসব প্রজেক্ট উপস্থাপন করেছে এবং যেভাবে সুন্দর করে আত্মবিশ্বাস নিয়ে ব্যাখ্যা করেছে, তা সত্যিই বিস্ময়কর। এসব শিক্ষার্থীই এগিয়ে নেবে ভবিষ্যতের সুন্দর বাংলাদেশকে।’
বিজ্ঞান মেলা প্রসঙ্গে চাইল্ড হ্যাভেন স্কুলের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, ‘ছাত্রছাত্রীদের বিজ্ঞানমনস্ক করে গড়ে তুলতে এবং প্রকৃতি, পরিবেশ ও কৃষি সম্পর্কে সচেতন করতে এবার বৃহৎ আঙ্গিকে বিজ্ঞান মেলার আয়োজন করা হয়। এ ছাড়া এবার ঢাকার ইতিহাস ও ঐতিহ্য এবং নতুন ঢাকার মেট্রোরেল সম্পর্কে জানানোর ব্যবস্থা করা হয়। আশা করি এবারের বিজ্ঞান মেলা সবার ভালো লেগেছে।’
বিজ্ঞান মেলা সফল করায় বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকা, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ধন্যবাদ জানান অধ্যক্ষ।