ইসি অভিমুখে যাত্রা, বাধা পেয়ে শাহবাগে অবরোধ
সরস্বতী পূজার কারণে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচন পেছানোর দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নির্বাচন কমিশন কার্যালয় ঘেরাওয়ের জন্য রওনা হলেও তাদের শাহবাগ মোড়ে আটকে দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পরে শিক্ষার্থীরা সেখানেই অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে।
আজ বুধবার দুপুর দেড়টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের সামনে সমাবেশ শেষে মিছিল নিয়ে আগারগাঁওয়ের নির্বাচন কমিশন কার্যালয় অভিমুখে রওনা দেয় শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি শাহবাগ মোড়ে আসার পরই বাধা দেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। অবরোধের ফলে ওই সড়ক দিয়ে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
প্রায় এক ঘণ্টা অবরোধ করে রাখার পর শিক্ষার্থীরা চলে যায়। তারপর এই সড়ক দিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘পূজার দিনে নির্বাচন- মানি না, মানি না’, ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘শেখ হাসিনার বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘৩০ তারিখের নির্বাচন- মানি না, মানব না’ বলে স্লোগান দেয়।
‘হাইকোর্ট দেখাবেন না, সুপ্রিম কোর্ট দেখিয়ে ছাড়ব’
এর আগে রাজু ভাস্কর্যে সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) ও ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন নির্বাচন কমিশনের উদ্দেশে বলেন, ‘হাইকোর্টের উপর বন্দুক রেখে নির্দেশ দিয়ে আমাদের গায়ে আগুন ঢেলে দেবেন না। আপনারা (ইসি) নিজে তার উদ্যোগ নেন, আমাদের হাইকোর্ট দেখাবেন না। আমাদের হাইকোর্ট দেখালে আপনাদের সুপ্রিম কোর্ট দেখিয়ে ছাড়ব।’
প্রগতিশীল আইনজীবীদের এ দাবি আপিল বিভাগে তোলার আহ্বান জানিয়ে সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে অনতিবিলম্বে তারিখ পরিবর্তনের করতে হবে। নির্বাচন কমিশন বোকার স্বর্গে বসবাস করছে।’ শিক্ষক, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন, সশীল সমাজ, ছাত্র সংগঠনগুলোকে এই দাবিতে একতাবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
সমাবেশে আরো সংহতি প্রকাশ করেন ডাকসুর সংস্কৃতি সম্পাদক আসিফ তালুকদার, সদস্য তানভীর হাসান সৈকত, জগন্নাথ হল ছাত্র সংসদের সহসভাপতি (ভিপি) উৎপল বিশ্বাস, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) কাজল দাশ প্রমুখ। এ সময় বিভিন্ন হল সংসদের ভিপি, জিএস, এজিএসসহ ছাত্রলীগের বিভিন্নস্তরের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
ডাকসু নেতা আসিফ তালুকদার বলেন, ‘অত্যন্ত দুঃখজনক একটি ঘটনা নিয়ে আমরা হাজির হয়েছি। জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য আজ গোটা জাতি ঐক্যবদ্ধ। ঠিক সেই মুহূর্তে ইসির সিদ্ধান্ত আমরা মেনে নিতে পারি না। ছাত্রসমাজকে হাইকোর্টের ভয় দেখাবেন না, আমরা আপনাদের সিদ্ধান্তকে ভেঙে চুরমার করে দেব।’
জগন্নাথ হল ছাত্র সংসদের সহসভাপতি (ভিপি) উৎপল বিশ্বাস বলেন, ‘আমরা নির্বাচন কমিশন বরাবর চিঠি দিয়েছি। তারপরেও কেন দাবি মেনে নেওয়া হলো না তা আমরা জানতে চাই। একইদিনে সার্বজনীন উৎসব সরস্বতী পূজা এবং নির্বাচন কখনো হতে পারে না। কারণ শিক্ষার্থীসহ ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার অংশগ্রহণের মাধ্যমে এই পূজা উদযাপিত হয়। পূজার দিনে যদি নির্বাচন হয় তাহলে উৎসবের আনন্দ হবে না, তাই আমরা চাই এ দিনে যেন নির্বাচন না হয়।’ তিনি এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল ছাড়াও বিভিন্ন হলের দুই থেকে তিন শতাধিক শিক্ষার্থী এই কর্মসূচিতে অংশ নেয়।
এর আগে গতকাল মঙ্গলবার ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তারিখ পেছানো না হলে নির্বাচন কমিশনের কার্যালয় ঘেরাও করার হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
একই দিন ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোট গ্রহণের তারিখ পরিবর্তনের আবেদন জানিয়ে করা রিটটি খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। ফলে ৩০ জানুয়ারিই এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এর প্রতিবাদে সাধারণ শিক্ষার্থীর ব্যানারে মঙ্গলবার বিকেল ৫টার দিকে শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন। এতে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ পথচারীরা ও যাত্রীরা।