অতিথি পাখির কলরবে মুখর জাবি
শীতের বার্তা নিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) আগমন করে অতিথি পাখি। নভেম্বরের শুরু থেকেই অতিথি পাখিরা আসতে শুরু করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকগুলোতে। পাখির কলকাকলি, ঝাঁকে ঝাঁকে বিচরণ, জলকেলি আর খুনসুটিতে মুখর হয়ে উঠেছে ক্যাম্পাস।
এদিকে জলাশয়জুড়ে লাল শাপলার শোভা নিসর্গমণ্ডিত বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুণ। লাল শাপলার মাঝে দূর থেকে আসা বিভিন্ন প্রজাতির অতিথি পাখির বাহারি খেলায় মেতে ওঠার দৃশ্যে লেকগুলো এখন জানান দিচ্ছে গ্রামবাংলার চিরচেনা সেই মনোরম পরিবেশের কথা।
শহরের ব্যস্ত জীবনের যান্ত্রিকতা আর ধুলাবালি থেকে মুক্ত এই ক্যাম্পাসটিতে পাখির দৃশ্য দেখতে প্রতিদিন শত শত পাখিপ্রেমী ভিড় করছেন। ক্যাম্পাসে ছোট-বড় আধভাঙা উঁচু ঢিবি আর জলাশয়ের পাড়ে অনেক সরালি ঝাঁক বেঁধে উড়ছে সাঁই সাঁই করে। আবার পরক্ষণেই ঝপাৎ করে বসে যাচ্ছে জলাধারে। কোনোটি আবার সাঁতার কাটছে আপন মনে।
সাধারণত হিমালয়ের উত্তরের দেশ সাইবেরিয়া, চীন, মঙ্গোলিয়া ও নেপালে এই সময়টায় প্রচুর তুষারপাতের কারণে পাখিরা বাংলাদেশের মতো নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে চলে আসে। তাই দূর-দূরান্ত থেকে আসা নাম না জানা এসব পাখিকে স্বাগত জানায় জাবি ক্যাম্পাস। শীত চলে গেলে তারাও চলে যায় তাদের আপন ঠিকানায়। তাই এসব অতিথিকে স্বাগত জানাতে নতুনরূপে সেজেছে লেকগুলো। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছোট-বড় ১০ থেকে ১২টি লেক থাকলেও পাখি আসে মূলত চারটি লেকে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে যেসব পাখি আসে, তার মধ্যে বেশিরভাগই হাঁস জাতীয় ও পানিতে বসবাস করে। এর মধ্যে সরালি, পচার্ড, ফ্লাইফেচার, গার্গেনি, ছোট জিরিয়া, মুরগ্যাধি, কোম্বডাক ও পাতারি অন্যতম।
এছাড়া অন্য প্রজাতির পাখির মধ্যে আছে মানিকজোড়, কলাই, ছোট নগ, জলপিপি, নাকতা, খঞ্জনা, চিতাটুপি, লাল গুড়গুটি প্রভৃতি।
জাবির লেকগুলোতে অতিথি পাখির পাশাপাশি বিভিন্ন প্রজাতিসহ বিলুপ্ত প্রজাতির পাখিরও দেখা মেলে। সচরাচর যেসব পাখি দেখা যায় তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল- জলময়ূর, ডুবুরি, খোঁপা ডুবুরি, ছোট পানকৌড়ি, বড় পানকৌড়ি প্রভৃতি প্রজাতি।
এ বছর আগের বছরগুলোর তুলনায় অতিথি পাখির সংখ্যা অনেক বেশি। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও পাখি গবেষক অধ্যাপক ড. মো. গোলাম মোস্তফা এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘এ বছর শীতপ্রধান দেশগুলোতে আগে শীত পড়ছে। আর আমাদের ক্যাম্পাসের লেকগুলো এ বছর অতিথি পাখির জন্য খুবই পরিবেশবান্ধব। তাই পাখিরা লেকগুলোতে অক্টোবরের শেষের দিকেই নামতে শুরু করেছে।’
পাখির প্রজাতির সংখ্যার বিষয়ে এই পাখি গবেষক বলেন, ‘জাবিতে প্রায় ২০ থেকে ২৫ প্রজাতির অতিথি পাখি আসে। এদের মধ্যে তিন থেকে চারটি হাঁস প্রজাতির।’
অতিথি পাখিদের যেন কেউ বিরক্ত না করে সেজন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন লেকের চারপাশে কাঁটাতারের বেড়া দিয়েছে। তাছাড়া কিছু নিদের্শনা সম্বলিত বিলবোর্ডও লেকের পাশে টাঙ্গানো হয়েছে। যেখানে লেখা আছে ‘ঢিল ছুঁড়বেন না’, ‘দূরুত্ব বজায় রেখে পাখি দেখুন’, ‘আমাকে বিরক্ত করবেন না’, ‘হর্ন বাজানো নিষেধ’ ইত্যাদি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পাখি মেলার আহ্বায়ক ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. কামরুল আহসান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমরা প্রতিবছর পাখিমেলার মাধ্যমে পাখিদের সঙ্গে মানুষের পরিচিতি ঘটাই। পাখির সুষ্ঠু পরিবেশ ও পাখি সংরক্ষণে সচেতনতা বৃদ্ধি করি। অতিথি পাখির বিষয়ে দর্শনার্থীদের মধ্যে সচেতনতামূলক ( যেমন- ঢিল না ছোঁড়া, আওয়াজ বা কোলাহলমুক্ত, হর্ন না বাজানো ইত্যাদি) কাজ করে থাকি যাতে পাখিরা বিরক্ত না হয়।’
কামরুল আহসান আরো বলেন, ‘এসব বিষয়ে মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। অনেক সামাজিক সংগঠনও এসব নিয়ে কাজ করছে। নিয়ম দিয়ে আসলে পাখি নিধন রোধ করা সম্ভব নয়। সবাই এগিয়ে আসলেই পাখিরা পাবে নিরাপদ আবাসস্থল।’
পাখিমেলা কবে হবে? এমন প্রশ্নে তিনি জানান, ‘আমরা প্রতি বছর জানুয়ারির প্রথম অথবা দ্বিতীয় শুক্রবার মেলাটি আয়োজন করে থাকি। এবারও আমাদের প্রস্তুতি আছে।’