পাখি জনজীবনের সঙ্গে গভীরভাবে সম্পৃক্ত: জাবি উপাচার্য
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) পাখিমেলা উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির ভাষণে উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম বলেছেন, ‘পাখি জনজীবনের সঙ্গে গভীরভাবে সম্পৃক্ত।’
পাখি সংরক্ষণে গণসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ ও ওয়াইল্ড লাইফ রেসকিউ সেন্টারের যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘পাখিমেলা-২০২০’।
আজ শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম জহির রায়হান মিলনায়তন প্রাঙ্গণে এ মেলার উদ্বোধন করেন।
উপাচার্য তাঁর ভাষণে বলেন, ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পাখির অভয়ারণ্য নিরাপদ রাখতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। এজন্য পাখিবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে অনেক জলাশয় লিজমুক্ত রাখা হয়েছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পাখির বসবাস উপযোগী পরিবেশ অক্ষুন্ন রয়েছে বলেই প্রতি বছর শীত মৌসুমে দূর-দূরান্ত থেকে পরিব্রাজক পাখি নিয়মিতভাবে ক্যাম্পাসে ছুটে আসে।’
উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম আরও বলেন, ‘পাখিমেলায় এসে বাচ্চারা আনন্দ পায় এবং নানা প্রজাতির পাখির সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পায়। এই পরিচয়ের সূত্র ধরে দর্শকরা পাখিপ্রেমী হয়ে উঠেন। অনেক প্রজাতির পাখি নানা কারণে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। তাই বিলুপ্তপ্রায় পাখির প্রজাতি রক্ষার্থে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। আগে গ্রাম বা নগরে অনেক জলাশয় ও বন ছিল। সেখানে পাখি আসত। সেই পাখির ডাকে ঘুম ভাঙত সবার। বেপরোয়া ও অপরিকল্পিত নগরায়ন এবং বৃক্ষ নিধনের ফলে সবুজ প্রকৃতি ও পাখ-পাখালির বসবাসের পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে। সেই বিষয়ে এখনই সবাইকে সচেতন হতে হবে।’
মেলার আহ্বায়ক ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কামরুল হাসান বলেন, ‘পাখিমেলার মূল উদ্দেশ্য পাখি সম্পর্কে গণসচেতনতা বাড়ানো। এই সচেতনতা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পর্যন্ত পৌঁছাতে হবে। যাতে পাখির কোনো প্রজাতি বিলুপ্তির দিকে না যায়।’
অধ্যাপক কামরুল হাসান আরো বলেন, ‘দর্শনার্থীর উৎপাত কম থাকায় বিগত বছরগুলোর তুলনায় এবার পাখির সংখ্যা বেড়েছে। প্রথম দিকে কোলাহল কম থাকায় প্রশাসনিক ভবনের পাশের লেকে এবার সবচেয়ে বেশি পাখি এসেছিল। পরে কোলাহলের কারণে পাখিরা আবার অন্য লেকগুলোতে সরে যায়। সুতরাং কোলাহলমুক্ত থাকলে পাখি বেশি দেখা যাবে।’
পাখি মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক শেখ মো. মনজুরুল হক, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজ, প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মোস্তফা ফিরোজ, অধ্যাপক ড. মো. মফিজুল কবির, বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ সোহায়েল, বিশিষ্ট পাখিবিশারদ ড. ইনাম আল হক, প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুকিত মজুমদার বাবু, আইসিইউএন বাংলাদেশ প্রতিনিধি রাকিবুল আমিন প্রমুখ।
পাখিমেলায় ‘বিগ বার্ড ২০১৯’ সম্মাননা, পাখি বিষয়ক সেরা প্রতিবেদন পুরস্কার দেওয়া হয়।
দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত পাখিমেলায় ছোটদের পাখি বিষয়ক চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, কুইজ, বই-পোস্টার প্রদর্শনী, সংরক্ষিত বিভিন্ন প্রজাতির পাখি, পাখি দেখা, পাখি চেনার প্রতিযোগিতা, পাখি বিষয়ক আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
পাখি দেখা প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দেবপ্রিয় বিশ্বাস, সুলতান আহমেদ, আশিকুর রহমান, তাহসিনা সানিয়াত এবং দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিমূল নাথ, দুর্জয় রাহা অন্তু, আনিতা শাহরিয়ার ও সজীব বিশ্বাস।
পাখি ও জীববৈচিত্র রক্ষায় বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় এ বছর প্রিন্ট অনলাইন ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার তিনজন সাংবাদিককে ‘কনজারভেশন মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড-২০২০’ দেওয়া হয়। অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন দৈনিক প্রতিদিনের সংবাদের মো. তহিদুল ইসলাম, বাংলানিউজের বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বপন ও মাই টিভির মো. আব্দুল্লাহ আল ওয়াহিদ।