দুর্নীতির অভিযোগে ডাকসু ভিপির পদত্যাগ চাইলেন জিএস রাব্বানি
দুটি ফোনালাপ ফাঁসকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সহসভাপতি (ভিপি) নুরুল হক নুরকে অপকর্মের দায়ভার নিয়ে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির সাধারণ সম্পাদক (জিএস) গোলাম রাব্বানী।
আজ রোববার দুপুর ১২টার দিকে ডাকসুর সভাকক্ষে সংবাদ সম্মেলন করে নুরের প্রতি এই আহ্বান জানান রাব্বানীসহ ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে বিজয়ী ১৭ ডাকসু নেতা। এতে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন সদস্য রাকিবুল হাসান রাকিব।
জিএস গোলাম রাব্বানী বলেন, ‘আমরা ডাকসু পরিবার নূরের এই অপকর্মের দায়ভার নিতে রাজি নই। আমাদের আহ্বান থাকবে, নূর যেন তাঁর ডাকসুর ভিপির পদ থেকে অনতিবিলম্বে পদত্যাগ করেন। তিনি যদি পদত্যাগ না করেন তাহলে আমরা ডাকসুর সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং ডাকসুর সভাপতির প্রতি আহ্বান জানাব, তিনি যেন নৈতিক স্খলনের দায়ে নুরকে বহিষ্কারের ব্যবস্থা করেন।’
সম্প্রতি দুটি ফোনালাপ ফাঁস হয়। এতে ভিপি নূরের কণ্ঠ শোনা যায়। সেই দুটি ফোনে ভিপি নূরকে ব্যবসায়িক আলাপ-আলোচনা করতে শোনা যায়। এ নিয়ে কয়েকটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে নুরের বিরুদ্ধে ডাকসুর পদ ব্যবহার করে ‘তদবির-বাণিজ্যের’ অভিযোগ আনা হয়।
নুর প্রথমে ফেসবুক লাইভে এবং পরে গত বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে এসে তদবিরের অভিযোগ নাকচ করে বলেছেন, তাঁর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার জন্য মোবাইল কথোপকথনের খণ্ডিতাংশের অডিও প্রচার করা হয়েছে। তবে তিনি স্বীকার করেন, তিনি ওই ব্যক্তির সঙ্গে পারিবারিক ব্যবসা সম্পর্কিত বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা করছিলেন।
ভিপি নূর সাংবাদিকদের এটাও বলেন, ‘কেউ যদি প্রমাণ করতে পারে যে, ডাকসুর ভিপি বিন্দুমাত্র অনৈতিক লেনদেন করেছে, অবৈধ লেনদেন করেছে, দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত হয়েছে। তাদের প্রশ্ন তোলার আগেই প্রমাণটা গণমাধ্যমে উপস্থাপন করলেই ডাকসুর ভিপি পদত্যাগ করবে।’
এমন একটি পরিপ্রেক্ষিতেই আজ ডাকসুতে নির্বাচিত ছাত্রলীগের নেতারা ভিপি নুরের পদত্যাগের দাবিতে সংবাদ সম্মেলনে আসেন। এই আয়োজনের নেতৃত্ব দেন দুর্নীতির অভিযোগ উঠার পর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে অব্যাহতি পাওয়া জিএস গোলাম রাব্বানী। একই অভিযোগে রাব্বানীর সঙ্গে পদ হারান সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন।
ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদকের পদ হারানোর সময়ও একটি ফোনালাপ ফাঁস হয়েছিল। সেখানে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নয়ন প্রকল্পে থেকে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছিল রাব্বানির বিরুদ্ধে। ভিপি নুর তখন ডাকসুর জিএসের বিরুদ্ধে ‘নৈতিক স্খলনের’ অভিযোগ এনে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছিলেন।
‘অভিযোগ নয়, দালিলিক প্রমাণও রয়েছে’
আজকের সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকরা গোলাম রাব্বানীকে পেয়ে সেই প্রসঙ্গটিও সামনে নিয়ে আসেন। তখন এ ব্যাপারে ডাকসুর জিএস বলেন, ‘সেই ফোনালাপে আমার সংশ্লিষ্টতা যে ছিল না, সেটা কিন্তু ক্লিয়ার হয়েছে। যাই হোক, যেহেতু ওই সময় একটা অভিযোগ ওঠেছিল, আমি আমার সংগঠনের পক্ষ থেকে এবং আমার নৈতিক দায়বদ্ধতা থেকে আমি সঙ্গে সঙ্গে অব্যাহতি নিয়েছি, আমি এবং আমার সভাপতি। এরপরে আমরা বারবার তদন্ত করতে বলেছি এই ঘটনার। এখন পর্যন্ত কোনো তদন্ত কমিটি কিন্তু গঠন করা হয়নি।’
‘আমি ডাকসুর জিএস পদ ব্যবহার করে কোনো কাজ করিনি। যদি আমার নামে ডাকসুর জিএস পদ ব্যবহার করে কোনো অনৈতিক কাজ করার অভিযোগ আসে অবশ্যই আমি আমার জিএস পদ থেকে অব্যাহতি নেব বা দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করব। আর নুরের বিরুদ্ধে ভিপি পদ ব্যবহার করার কিন্তু কোনো শুধু অভিযোগ নয়, দালিলিক প্রমাণও রয়েছে, অডিও-ভিডিও’, যোগ করেন রাব্বানী।
নূরের ‘দুর্নীতি’র দুদকের তদন্ত দাবি
ডাকসুর পক্ষ থেকে লিখিত বক্তব্যে সদস্য রাকিবুল হাসান রাকিব দাবি করেন, ‘সম্প্রতি দুটি টেলিফোন ফোনালাপ ফাঁস হবার মাধ্যমে নুরের স্বরূপ সবার সামনে উন্মোচিত হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে কাণ্ডজ্ঞান হারিয়ে অজ্ঞান হয়ে যাবার অভিনয় করতে করতে নুর যে টেন্ডারবাজি, তদবির বাণিজ্য, অনৈতিক লেনদেন ইত্যাদিতেও দক্ষতা অর্জন করেছে তা ছাত্রসমাজের সামনে পরিষ্কার হয়েছে।
ভিপি পদ থেকে নুরকে পদত্যাগ করার আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং ডাকসুর সভাপতির নিকট আমরা আহ্বান জানাই, ভিপি পদটিকে অপবিত্র, অপব্যবহার করার অপরাধ স্বীকার করে নুর যদি পদত্যাগ না করে, তাহলে যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করে তাকে ডাকসু থেকে বহিষ্কার করা হোক। আমরা একইসাথে দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রতি আহ্বান জানাই, নুরের যাবতীয় কর্মকাণ্ড সম্পর্কে তদন্তের ব্যবস্থা করা হোক। ডাকসু তথা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে কলঙ্কমুক্ত করা হোক।’
নুর শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ‘প্রতারণা’ করছে অভিযোগ করে ডাকসুর নেতারা বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কল্যাণার্থে নুরের নামে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পাঁচ লাখ টাকা বরাদ্দ করেছে, যার এক পয়সাও এ নয় মাসে ব্যয় না করে নুর শিক্ষার্থীদের বঞ্চিত করেছে, নিজের দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছে। বিগত নয় মাসে ডাকসু ভিপির উদ্যোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য একটি কাজও সম্পন্ন না হলেও এই ভিপি পদকে ব্যবহার করে তিনি নিজের রাজনৈতিক অভিলাষ পূরণের কাজ করেছেন পুরোদমে। নিজেকে জাতীয় বীর হিসেবে হাজির করতে গিয়ে তিনি আজ জাতীয় বেঈমানে পরিণত হয়েছেন।’
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন ডাকসুর সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) মো. সাদ্দাম হোসেন, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযোদ্ধাবিষয়ক সম্পাদক সাদ বিন কাদের চৌধুরী, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক আরিফ ইবনে আলী, আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক শাহরিমা তানজিম অর্ণি, সাহিত্য সম্পাদক মাজহারুল কবির শয়ন, সাংস্কৃতিক সম্পাদক আসিফ তালুকদার, সদস্য রকিবুল ইসলাম ঐতিহ্য, তানভীর হাসান সৈকত, তিলোত্তমা শিকদার, নিপু ইসলাম তন্বী, রাইসা নাসের, সাবরিনা ইতি, মুহা. মাহমুদুল হাসান, সাইফুল ইসলাম রাসেল ও রফিকুল ইসলাম সবুজ।