ডাকসু ভিপির রুমে তালা, পদত্যাগ দাবি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সহসভাপতি (ভিপি) নুরুল হক নুরের রুমে তালা দিয়েছে একদল যুবক। যুবকেরা নিজেদের ‘মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ’ নামের একটি সংগঠনের সদস্য বলে দাবি করেছে। আজ বুধবার সকালে ওই ঘটনা ঘটে। বিকেলে তালা ভেঙে রুমে প্রবেশ করেন ভিপি নুর।
জানা যায়, সম্প্রতি নুরুল হক নুরের ফাঁস হওয়া একটি ফোনালাপের জেরে তাঁর কক্ষে এই তালা দিয়েছে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের একাংশ। ওই অংশের নেতৃত্বে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক আ ক ম জামাল উদ্দিন। যদিও তাদের এই কর্মকাণ্ড সমর্থন করেনি মামুন-বুলবুলের নেতৃত্বে গঠিত সংগঠনটির আরেকটি অংশ।
সকাল ১০টার দিকে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের একাংশ ভিপি নুরুল হকের কক্ষে তালা লাগিয়ে দেয়। পরে তাঁর কুশপুত্তলিকা দাহ করে। এর আগে তারা মানববন্ধনও করে। মানববন্ধনে নুরের পদত্যাগ দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ৪৮ ঘণ্টার সময় বেঁধে দেওয়া হয়।
তবে ঢাবি শিক্ষকের নেতৃত্বে এই মানববন্ধনে বহিরাগতদের অংশগ্রহণ করতে দেখা গেছে। যদিও এ বিষয়ে জানতে জামাল উদ্দিনকে একাধিকবার কল দিলে তিনি ফোন ধরেননি।
মানববন্ধনে জামাল উদ্দিন বলেন, ‘ডাকসুর ইতিহাসে এ ধরনের ঘটনা নজিরবিহীন। তাই আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নুরকে ঢাবি ও ডাকসু থেকে বহিষ্কার করতে হবে। অন্যথায় ভিসিকে স্মারকলিপি দেব।’ এ সময় তিনি নুরকে পদত্যাগ করতে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটামও দেন।
এর আগে গতকাল মঙ্গলবার একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুরের একটি অডিও ক্লিপ ফাঁস করা হয়। অডিওতে ডাকসু ভিপিকে জনৈক এব ব্যক্তির সঙ্গে ব্যবসায়িক কথাবার্তা বলতে শোনা যায়। এ ছাড়া প্রবাসে এক বাংলাদেশির সঙ্গে টেলিফোনে টাকা লেনদেনের বিষয়ে কথা বলতে শোনা গেছে তাঁকে। তবে এটি ব্যক্তিগত ফোনালাপ বলে দাবি করেন ভিপি নুর।
ভিপি নুর এনটিভি অনলাইনকে জানান, ফোনালাপটি তাঁর ভাইয়ের সঙ্গে ছিল। যেটা ব্যবসায়িক। কিন্তু একটি ইলেকট্রনিক মিডিয়া এটাকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করেছে। তিনি বলেন, ‘পুরো কথা না শুনিয়ে কিছু অংশ কেটে প্রচার করেছে, যা সাংবাদিকদের নৈতিকতার সঙ্গে যায় না। আমি এর বিরুদ্ধে একটি প্রতিবাদলিপি ও উকিল নোটিশ পাঠাব।’
ভিপি বলেন, ‘কেউ যদি আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণ করতে পারে তবে আমি পদত্যাগ করব।’
বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ডাকসুতে তালা ভেঙ্গে নিজের কক্ষে প্রবেশ করেন ভিপি নুর। তিনি বলেন, ‘রুমে তালা দেওয়ার বিষয়টি আমি প্রক্টরকে জানালে তিনি অপরাগতা প্রকাশ করেন। তিনি ডাকসুর প্রতিনিধিদের নিয়ে সমাধান করার পরামর্শ দেন।
ভিপি নুর বলেন, ‘অধ্যাপক জামাল উদ্দিন এর আগে নীল দলের বৈঠকে শিক্ষককে মারধর করেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। তা ছাড়া, এই সংগঠনটি ছাত্রলীগেরই একটা অংশ। কেননা, ছাত্রলীগ আমার বিরুদ্ধে অনেক ষড়যন্ত্র, হামলা করেছে। কিন্তু তারা সফল না হওয়ায় এ ধরনের সংগঠন খুলে আমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ষড়যন্ত্রমূলক কর্মকাণ্ড করছে।’
অধ্যাপক জামাল উদ্দিনের নেতৃত্বে ভিপি নুরের রুমে তালা দেওয়ার বিষয়টি সমর্থন করেন না ‘মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চে’র বুলবুল-মামুন কমিটির নেতাকর্মীরা। সংগঠনের নেতা আমিনুল ইসলাম বুলবুল এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমরা তাঁর (অধ্যাপক জামাল উদ্দিন) কাজটি সমর্থন করি না। কেননা বাংলাদেশের অলিতে গলিতে বড় বড় দুর্নীতিবাজ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে আগে আন্দোলন করা দরকার। আমরা সেটাই করব।’
ডাকসু ভিপি বলেন, ‘এই আন্দোলনে যারা এসেছে তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নয়। তারা অছাত্র, বহিরাগত। একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের লজ্জা থাকলে তিনি বহিরাগত, অছাত্রদের ক্যাম্পাসে নিয়ে এসে আন্দোলন করেন? উপাচার্য দেশে এলে আমরা তার বিরুদ্ধে কোন ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া যায় সে বিষয়টি দেখব।’