ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ভিপি নুরুল হক নুর দাবি করেছেন, দুটি বেসরকারি টিভি চ্যানেল তাঁর কথোপথনের খণ্ডিত অংশ প্রচার করে ভুল ব্যাখ্যা দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘নিউজ টোয়েন্টি ফোর ও ডিবিসি চ্যানেলে আমার কথোপকথনের একটি অডিও ক্লিপের খণ্ডিতাংশ বিকৃতভাবে প্রচার করে ভুলভাবে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। যা আমার সম্মানহানি ও জনমনে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করেছে।’

ভিপি নুর আরো বলেন, ‘পুরো ফোনালাপটি শুনলে আমার কথার সত্যতা পাওয়া যাবে।’

আজ বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেন ভিপি নুর। সম্প্রতি দুটি টিভি চ্যানেলে ডাকসুর ভিপির সঙ্গে অন্য এক ব্যক্তির ফোনালাপ ফাস হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল বুধবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চে’র ব্যানারে মানববন্ধন করে একদল যুবক। পরে তারা ভিপির কক্ষে তালা লাগিয়ে দেয়। বিকেলে তালা ভেঙে নিজের কক্ষে প্রবেশ করেন ভিপি নুর। 

বিবৃতিতে ভিপি নুর বলেন, ‘অডিওটির প্রথম অংশের কথোপকথন ছিল আমার খালা ও আমার পরিচিত এক ভাইয়ের সাথে। যেখানে আমার খালার কনস্ট্রাকশন ফার্মের ১৩ কোটি টাকার একটি কাজের ব্যাংক গ্যারান্টি নিয়ে ভাইয়ের সাথে আলোচনা করেছিলাম। যা একান্তই ব্যক্তিগত ও পারিবারিক ব্যবসা সংক্রান্ত বিষয়। কিন্তু নিউজ টুয়েন্টি ফোর ও ডিবিসি চ্যানেলে কথোপকথনটির বিভিন্ন খণ্ডিতাংশ বিকৃতভাবে প্রচার করে এবং আমি জনৈক প্রকল্প কর্মকর্তার কাছে ১৩ কোটি টাকার ঠিকাদারি কাজের তদবির করি, এই মর্মে খবর প্রচার করে। একইভাবে ‘বাংলাদেশ প্রতিদিন অনলাইনে’ও একই সংবাদ প্রকাশ করে। কিন্তু প্রকৃত সত্য হচ্ছে সেখানে আমি কোনো প্রকল্প কর্মকর্তার সাথে কোনো কথা বলা কিংবা কোনো তদবির করিনি।’

নুর আরো বলেন, ‘অডিও ক্লিপটির দ্বিতীয় অংশে অন্য ব্যক্তির সাথে কথোপকথন নিয়ে ‘নিউজ টোয়েন্টি ফোর’ ও ‘বাংলাদেশ প্রতিদিনে’ বলা হয়েছে আমি প্রবাসী কোনো এক ব্যক্তির কাছে আর্থিক সহযোগিতা চেয়েছি এবং ডিবিসি চ্যানেলে প্রচার করা হয়েছে - টেক্সাস প্রবাসী বিএনপি নেতার কাছে আর্থিক সহযোগিতা চেয়েছি। কিন্তু প্রকৃত ঘটনাটি ছিল, জনৈক প্রবাসী ব্যক্তি ফোন করে আমাকে সহযোগিতার কথা বললেও আমি তা নাকচ করে দেই।’

ডাকসুর ভিপি বলেন, ‘পুরো ফোনালাপটি শুনলেও আমার কথার সত্যতা পাওয়া যাবে। কিন্তু খুবই আশ্চর্যের বিষয়, উক্ত ঘটনা নিয়ে সংবাদ পরিবেশন করার ক্ষেত্রে ঘটনার সত্যতা যাচাই না করে, আমার কোনো বক্তব্য না নিয়ে আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করা এবং বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের এর ইমেজ ক্ষুণ্ণ করার জন্যই উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে তথ্য বিকৃত করে এমন সংবাদ পরিবেশন করা হয়েছে।’

ভিপি বলেন, ‘ব্যক্তিগত ফোনালাপ ফাঁস করে গণমাধ্যমে প্রচার সংবিধান ও রাষ্ট্রীয় আইনবিরোধী। তা ছাড়া এভাবে তথ্য বিকৃত করে সংবাদ পরিবেশনে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে স্পষ্ট অপরাধ। তাই তথ্য-বিকৃত করে ভুল সংবাদ পরিবেশেন করায় নিউজ টোয়েন্টি ফোর, ডিবিসি ও বাংলাদেশ প্রতিদিন কর্তৃপক্ষকে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। একই সাথে দায়িত্বশীল গণমাধ্যম হিসেবে তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে খবর প্রচার ও প্রকাশের আহ্বান জানাই। অন্যথায়, ছাত্রসমাজের পক্ষ থেকে নিউজ টোয়েন্টি ফোর, ডিবিসি ও দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন বর্জনসহ আইনি ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হব।’

‘মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ’ প্রসঙ্গে ভিপি নুর বলেন ‘গতকাল মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ নামক ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের একটি সংগঠন আমার পদত্যাগ দাবি করে, কক্ষে তালা লাগায়। যার আহ্বায়ক আওয়ামীপন্থী নীল দলের বিতর্কিত শিক্ষক নেতা সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আ ক ম জামাল উদ্দিন। একই সাথে ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল নাহিয়ান জয়ও একই দাবি করেন। ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করে আমি মনে করি যে, এটি একটি পরিকল্পিত ঘটনা। আমাকে ও আমার সংগঠন তারুণ্যের স্পন্দন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদকে বিতর্কিত করে তুলে ধরতেই রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় এমন হীন চক্রান্তের আয়োজন করা হয়েছে।’