অদক্ষতার কারণে বাড়ছে ব্যাংকের খেলাপি ঋণ
দেশে ব্যাংকের সংখ্যা যেমন বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে খেলাপি ঋণের পরিমাণ। অবলোপনকৃত ঋণসহ দেশে এখন প্রকৃত খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় এক লাখ চার হাজার কোটি টাকা। চলতি বছর বিতরণকৃত ছয় লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার ঋণের ১০ দশমিক শূন্য ছয় শতাংশই খেলাপিতে পরিণত হয়েছে।
চলতি বছর গত জুন মাস শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৬৩ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত তিন মাসে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েছে প্রায় চার হাজার কোটি টাকা।
ব্যবসায়ী নেতাদের অনেকেই অভিযোগ করে বলেন, উদ্যোক্তাদের ব্যবসা ভালো না হওয়া খেলাপি ঋণ বাড়ার কারণ। তবে ব্যাংগুলোর অসুস্থ প্রতিযোগিতা, অতিরিক্ত মুনাফার শর্ত, স্বল্প সময়ে পাওনা দাবি এবং অদক্ষতার কারণেও খেলাপি ঋণের পরিমাণ বাড়ছে।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস এক্সেসরিজ অ্যান্ড প্যাকেজিং ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএপিএমইএ) সহসভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন মতি বলেন, ‘এত শর্ট টাইমে একটা পাঁচ কোটি টাকার প্রজেক্টও যদি কেউ করে, তাঁর কাছে এমন অলৌকিক কিছু নাই যে মিরাকল কিছু করে সে চার বছরে সে ঋণ পরিশোধ করবে।
আমি যদি আজকে ক্লাসিফাইড হয়ে যাই আমারে কিন্তু পরে আর কোনো ব্যাংক ফাইন্যান্স করবে না। ফলে আমার যে উদ্যোগ, আমার যে ইনভেস্টমেন্ট এবং আমার ব্যাংকের যে ইনভেস্টমেন্ট সবই কিন্তু নষ্ট হবে।’
বাংলাদেশ টেক্সটাইলস মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সহসভাপতি ফজলুল হক বলেন, ‘যেখানে ব্যাংকের কোনো রিস্ক নাই সেখানে ব্যাংক কম ইন্টারেস্টেও লোন (ঋণ) দিলে কিন্তু লাভবান হবে।’
ব্যাংকিং খাতের অদক্ষতার কারণে ঋণ নেওয়ার খরচ বাড়ছে এবং এ কারণে প্রকৃত ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন ব্যবসায়ীরা।
বিটিএমএর সহসভাপতি ফজলুল হক বলেন, ‘দেশে ৫০টার মতো ব্যক্তিখাতের ব্যাংক হয়ে গেছে। ব্যবসার জন্য এত দৌঁড়ঝাপ করতেছে যে অনেক সময় কিন্তু সত্যিকার ক্লায়েন্ট কে তা নির্ণয় করতে পারে না।’
বিজিএপিএমইএর সহসভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন মতি বলেন, ‘২০১২ সালে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২৪ হাজার কোটি টাকা। এই চার বছরে কিন্তু বাকি লোকগুলো খেলাপি হয়েছে। এটা করার পিছনে কারণ হইল আমাদের যে আনুষঙ্গিক খরচ ও ব্যাংকের ইন্টারেস্ট এবং রিপেমেন্ট করার যে টাইমটা এটা খুবই শর্ট।’
সরকারি ব্যাংকে চলতি বছরের এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত সময়ে ২৭ হাজার ২৮৯ কোটি টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৩০ হাজার ৭৬ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে। এ সময়ে বেসরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার কিছুটা কমেছে। তবে বিদেশি ব্যাংক ও বিশেষায়িত ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েছে।