চুরি যাওয়া ১৫ মিলিয়ন ডলার পাওয়ার আশা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের
যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে চুরি হওয়া অর্থের মধ্যে ১৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার শিগগিরই দেশে ফেরত আনা সম্ভব হবে বলে আশা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এই অর্থ ফেরত আনার প্রক্রিয়া এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। অর্থ ফেরত আনার শেষ ধাপ হিসেবে ফিলিপাইনের স্থানীয় আইন অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংককে এফিডেভিটের মাধ্যমে অর্থ ফেরতের আবেদন জানিয়ে সে দেশের আদালতে আবেদন করতে হবে।
আজ রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা বাসস এ তথ্য জানিয়েছে।
এতে বলা হয়, পারস্পরিক আইনি সহায়তা (এমএলএ) অনুরোধের আওতায় ফিলিপাইনের ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে আগামী ১৬ থেকে ৩০ আগস্টের মধ্যে আদালতে আবেদন করবে। বাংলাদেশ ব্যাংক এরই মধ্যে এফিডেভিট প্রদান এবং অন্য প্রয়োজনীয় দলিলাদি সরবরাহ করেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ বিষয়ে সার্বক্ষণিক ফিলিপাইনের ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস এবং অ্যান্টি মানিলন্ডারিং কাউন্সিলের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ দূতাবাসকেও প্রয়োজনীয় তথ্যাদি ডিপ্লোমেটিক চ্যানেলে পাঠানোর জন্য সরবরাহ করছে।
ফিলিপিনো-চায়নিজ ব্যবসায়ী কিম অং-এর ফেরত দেওয়া ১৫ মিলিয়ন ডলার বাংলাদেশকে ফেরত দেওয়ার জন্য অ্যান্টি মানি লন্ডারিং কাউন্সিল ও আদালতে একটি জয়েন্ট মোশন দাখিল করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১ জুলাই আদালতের পক্ষ থেকে এই অর্থ বাজেয়াপ্তকরণের আদেশ জারি করা হয়। এর ফলে ১৫ মিলিয়ন ডলার ফেরত পাওয়ার প্রক্রিয়ার চূড়ান্ত ধাপ অর্জিত হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে আরো উল্লেখ করা হয়, রিজার্ভ থেকে চুরি হওয়া অর্থের যে অংশটা ফিলিপাইনে উদ্ধার হয়েছে, তা দেশে ফেরত আনতে বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে এবং এ প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। এসব উদ্যোগের ধারাবাহিকতায় বর্তমানে চুরিকৃত অর্থের একটি অংশ দ্রুত দেশে ফেরত আনা সম্ভব হবে।
গত ৪ ফেব্রুয়ারি হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ লেনদেনকারী হিসাব থেকে মোট ৭০টি ভুয়া পেমেন্ট নির্দেশনার (পিআই) মাধ্যমে সর্বমোট ১৯২৬ মিলিয়ন ডলার অবৈধভাবে স্থানান্তরের প্রচেষ্টা গ্রহণ করা হয়। এর মধ্যে একটি পিআইয়ের বিপরীতে শ্রীলঙ্কায় ২০ মিলিয়ন ডলার এবং চারটি পিআইয়ের বিপরীতে মোট ৮১ মিলিয়ন ডলার ফিলিপাইনের একটি ব্যাংকের চারজন গ্রাহকের হিসাবে পাঠানো হয়। শ্রীলঙ্কার ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুরোধে সম্পূর্ণ অর্থ এরই মধ্যে ফেরত দিয়েছে।
ফিলিপাইনে পাঠানো ৮১ মিলিয়ন ডলার রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনের (আরসিবিসি) চারটি হিসাবে জমা হয় এবং সমপরিমাণ অর্থ ব্যাংকের একই শাখায় পরিচালিত অপর একজন গ্রাহকের হিসাবে জমা হয়। যা পরবর্তী সময়ে একটি মানি রেমিটেন্স কোম্পানি হয়ে ফিলিপাইনের ক্যাসিনোতে চলে যায়। এরপর একজন ফিলিপিনো-চায়নিজ ব্যবসায়ী ক্যাসিনো থেকে এই অর্থ তুলে নেন।
মোট ৮১ মিলিয়ন ডলার আরসিবিসির জুপিটার স্ট্রিট, মাকাতি সিটি শাখায় পরিচালিত ভুয়া অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর হয়। তখন বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সহযোগিতা চাওয়া হয়। ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সে দেশের অ্যান্টি মানি লন্ডারিং কাউন্সিলের ওপর এর তদন্তভার অর্পণ করে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে অর্থ ফেরত আনার বিষয়ে একাধিকবার টেলিফোনে আলোচনা করেন এবং তদন্ত সম্পন্ন করে আরসিবিসির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানান।
এ ছাড়া ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের কাছে চিঠি পাঠানো এবং কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় গত ৫ আগস্ট আরসিবিসির বিরুদ্ধে ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এক বিলিয়ন পেসো (আনুমানিক ২১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) জরিমানা আরোপ করে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ চুরিতে আরসিবিসির সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি আরো সুস্পষ্ট হয়েছে।