মৌসুমেও শুকনা মরিচের দামে ঝাঁজ
বাজারে দেশি শুকনা মরিচের সরবরাহ বেড়েছে। তবে কমছে না পণ্যটির দাম। বেশি খরচে আমদানি করা ভারতের মরিচের কারণেই দেশি পণ্যের দামও বাড়তি রয়েছে বলে দাবি করছেন ব্যবসায়ীরা। তবে পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশি মরিচ এখনো পুরোপুরি বাজারে আসেনি। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম, ফলে দাম কমছে না।
সাধারণত ফেব্রুয়ারি ও মার্চের মাঝামাঝি সময়ে নতুন মরিচ সরবরাহ শুরু হয়। এরই মধ্যে দেশি মরিচ বাজারে আসতে শুরু করেছে।
বাজারে এখন পাঁচ ধরনের শুকনা মরিচ পাওয়া যাচ্ছে, যার অধিকাংশই আমদানি করা। এর মধ্যে রয়েছে ইন্দোনেশিয়ার কারেন্টজাল মরিচ, ইন্ডিয়ান মরিচ ও দেশি ছোট-বড় তিন জাতের মরিচ। তবে কুমিল্লার বাতাকান্দিসহ দেশের কয়েকটি এলাকার মরিচের বেশ চাহিদা রয়েছে।
রাজধানীতে কারওয়ান বাজার, শ্যামবাজার, খিলগাঁও তালতলা বাজার, মিরপুর-১ কাঁচাবাজারসহ বেশ কয়েকটি পাইকারি মরিচের বাজার রয়েছে। এসব বাজার থেকে আশপাশের দোকান ও ভোক্তারা শুকনা মরিচ সংগ্রহ করেন।
কারওয়ান বাজারে আমদানি করা প্রতি কেজি ইন্দোনেশিয়ার মরিচের পাল্লা (পাঁচ কেজি) ৯৮০ টাকা, ভারতের মরিচ ৯৫০ ও দেশি মরিচ মানভেদে ৬২০-৬৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মানভেদে প্রতি কেজির দাম পড়ছে ১২৪-১৯০ টাকা। আর চট্টগ্রামের মিষ্টি মরিচের পাল্লা এক হাজার ২০০ টাকায় পাইকারি বিক্রি হচ্ছে।
আজ বৃহস্পতিবার শ্যামবাজারের পাইকারি আড়তে আমদানি করা প্রতি কেজি শুকনা মরিচ ১৮২-১৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজারে আসা নতুন দেশি মরিচ ১১২-১১৫ টাকা ও পুরোনো দেশি মরিচ ১২৫-১৩০ টাকা করে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে।
গত কয়েক মাস শুকনা মরিচের দাম ঊর্ধ্বমুখী থাকলেও ১৫ দিন আগের তুলনায় এখন প্রতি কেজি আমদানি করা কারেন্টজাল নামে মরিচের দাম ১৬০ থেকে বেড়ে ১৮০-১৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ সময়ে দেশি মরিচের দাম কেজিতে বেড়েছে ৮ থেকে ১০ টাকা।
কারওয়ান বাজার থেকে মরিচ কিনছিলেন ফিরোজ মিয়া। তিনি বলেন, ‘পরিবারের চাহিদা অনুযায়ী ছয় মাসের মরিচ কিনে একসঙ্গে গুঁড়া করব। এখন মরিচের মৌসুম। কিন্তু মরিচের দাম বাড়তি। গত কোরবানির আগের চেয়ে দাম এখন বেশি। কিন্তু এ সময় শুকনা মরিচের দাম এত বেশি হওয়ার কথা নয়।’
কারওয়ান বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী আওলাদ হোসেন বলেন, দেশি মরিচ এখনো পুরোপুরি বাজারে না আসায় দাম তেমন কমছে না। তবে নতুন মরিচ আসতে শুরু করেছে। মার্চের মাঝামাঝি দাম কমতে পারে। অন্য বছরের চেয়ে এবার একই সময়ে মরিচের দাম কিছুটা বেশি। মূলত মৌসুম শেষ হওয়ায় এমনটি হয়েছে।
আওলাদ আরো বলেন, বিদেশি মরিচের চেয়ে দেশি মরিচের মান ভালো। উৎপাদন খরচ কম পড়ে। আমদানি করা পণ্য উৎপাদন স্থলেই দাম বেশি। সঙ্গে খরচ যোগ হওয়ায় বিদেশি মরিচের দাম বেশি পড়ছে। বাজার এখনো আমদানি পণ্যের দখলে। আমদানি পণ্যের দাম বেশি হওয়ায় দেশি মরিচের দাম তেমন কমছে না। তবে ইন্দোনেশিয়ার কারেন্টজাল মরিচের ঝাল বেশি, আর দেখতেও সুন্দর। এতে দাম বেশি হওয়ার পরও এর চাহিদা বেশি।
রাজধানীর হাতিরপুল ও কাঁঠালবাগান বাজারে প্রতি কেজি শুকনা মরিচ মানভেদে ১৮০-২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাইকারি বাজারের চেয়ে প্রতি কেজিতে দাম ৪০-৬০ টাকা বেশি।
দামের ব্যবধানের কারণ ব্যাখ্যা করে খুচরা দোকানি আহসান হাবিব বলেন, ‘আমরা কেনা দামের সঙ্গে কিছু লাভ যোগ করে বিক্রি করি। মরিচ এখন স্লো আইটেম। ক্রেতারা পরিমাণে কম কেনে। ফলে অনেক দিন মজুদ থাকায় ওজনে ঘাটতি হয়। মসলা প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো প্যাকেটজাত গুঁড়া মরিচ বিক্রি করায় আস্ত শুকনা মরিচের চাহিদা কমেছে। প্যাকেটজাত মরিচের চাহিদা বেড়েছে।’
পাইকারি ব্যবসায়ী আবু সাইদ বলেন, ‘দুই মাস আগে বাজারে মরিচের ঘাটতি দেখা দেয়। তাৎক্ষণিকভাবে ভারত থেকে মরিচ আমদানি করা হয়। ভারতে মরিচের দাম বেশি থাকায় আমদানি খরচ বেড়েছে। মূলত আমদানি করা ভারতের মরিচের কারণেই বাজারে সব মরিচের দাম বেড়েছে।’
এখন কুমিল্লা অঞ্চলের মরিচ আসছে। তবে সারা দেশের মরিচ আসা শুরু করেনি। নতুন মরিচ কিছুটা ভেজা থাকায় পুরোনো মরিচের চাহিদা বেশি। পাইকারি পর্যায়ে শুকনা ও ঝরঝরে মরিচের সরবরাহ শুরু হয়নি। নতুন মরিচে ঘাটতির কারণে লোকসান বেশি। মাস খানেকের মধ্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মরিচ সরবরাহ বাড়লে দাম স্থিতিশীল হবে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
ভারতের মরিচের আমদানি ব্যয় বাড়ায় দাম বেড়েছে বলে দাবি করেন শ্যামবাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী ও কমিশন এজেন্ট আতাউর রহমান জামাল। তিনি বলেন, দেশি মরিচ উঠছে, বাজারেও আসছে। এখন দাম কমে আসবে। তবে নতুন মরিচ পুরোপুরি শুকনা না হওয়ায় দু-একদিন থাকলেই ওজনে ঘাটতি হয়। ফলে পুরোনো মরিচের প্রতি ব্যবসায়ীদের আগ্রহ বেশি।
শ্যামবাজার কৃষিপণ্য আমদানিকারক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক শরীফ মোল্লা বলেন, ‘বাংলাদেশ মরিচ আমদানির ক্ষেত্রে মূলত ভারতের ওপর নির্ভরশীল। এবার ভারতেই মরিচের উৎপাদন কম। ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশে ৩০ লাখ বস্তা মরিচ সংরক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে। ভারতে যে পরিমাণ উৎপাদন হবে, তা দিয়ে চলতি বছর দেশটির মোট চাহিদার ৫০-৬০ শতাংশ জোগান হবে। ফলে দেশটিতে মরিচের দাম বেশি থাকবে। সেখানে প্রতি কেজি মরিচের দাম ১২৮ থেকে ১৩০ রুপি। বাংলাদেশি টাকায় দাম পড়বে ১৮০ টাকার মতো। ফলে দেশে নতুন মরিচ বাজারে এলে দাম কিছুটা কমলেও খুব বেশি কমবে না।’
গত বছর দেশের কৃষকরা মরিচের ভালো দাম না পাওয়ায় এবার অনেকেই কালিজিরার চাষ করেছেন। ফলে দেশেও উৎপাদন কমেছে। মসলা প্রক্রিয়াজাত কোম্পানিগুলো এখনো মরিচ কেনা শুরু করেনি। তারা বাজারে ঢুকলে দাম তেমন কমবে না। সব বিবেচনায় ক্রেতাকে পুরো বছরটাতেই মরিচে একটু বেশি খরচ করতে হতে পারে বলে বাজারসংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।