কৃষি ব্যাংকের নিরীক্ষক আপত্তি কেবল জমছেই
কৃষি ব্যাংকের নিরীক্ষক (অডিট) আপত্তি কেবল জমছে, নিষ্পন্ন হচ্ছে অল্পই। বিভিন্ন অনাদায়ী অর্থ বছরের পর বছর আদায় হচ্ছে না। লোকসান গুনতে হচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানকে।
২০০৯-১০ অর্থবছরে নিরীক্ষক আপত্তির সংখ্যা ছিল ২৭৯টি, কিন্তু ২০১২-১৩ অর্থবছরে তা দাঁড়িয়েছে এক হাজার ১২০টিতে। গত পাঁচ অর্থবছরে নিরীক্ষক আপত্তি বেড়েছে চারগুণ।
গত পাঁচ অর্থবছরে আপত্তি জমেছে দুই হাজার ৫১৮টি, যার মধ্যে নিষ্পন্ন হয়েছে ৯২৮টি। অর্থাৎ এ সময়ে ৬৩ শতাংশ নিরীক্ষক আপত্তিই অনিষ্পন্ন রয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সাম্প্রতিক সময়ে অনুষ্ঠিত সরকারি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকের জন্য বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের সার্বিক কার্যক্রমের তথ্য উপস্থাপন করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ।
সংসদীয় কমিটির ওই বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, ভুয়া কাগজপত্র জমা দিয়ে বিভিন্ন অস্তিত্বহীন প্রকল্পের নামে কৃষি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে যাচ্ছেন অনেক গ্রাহক। ব্যাংকটির অসাধু কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় নেওয়া এসব ঋণ বছরের পর বছর আদায় হয় না। ফলে লোকসান গুনতে হচ্ছে এ প্রতিষ্ঠানকে। এ বিষয়ে ব্যাংকটিকে সতর্ক করেছে সংসদীয় কমিটি।
বিভিন্ন ঋণ আদায় না হওয়া এবং অডিট আপত্তির বিষয়ে জানতে চাইলে কৃষি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ ইউসুফ বলেন, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ব্যাংকটির উপমহাব্যবস্থাপক (নিরীক্ষা-১) দুলাল চন্দ্র সরকার বলেন, ‘আসলে নিরীক্ষা ব্যবস্থাপনায় কিছু সমন্বয়হীনতা রয়েছে। তিন ধরনের নিরীক্ষা হয়ে থাকে। অভ্যন্তরীণভাবে ব্যাংকের পক্ষ থেকে তা করা হয়। এ ছাড়া অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকেও করা হয়। এসব পক্ষের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে।’
দুলাল চন্দ্র সরকার আরো বলেন, ‘মাঝে কিছুদিন হরতাল-অবরোধের কারণে যোগাযোগে বিঘ্ন ঘটায় মামলা নিষ্পত্তিতে ঝামেলা হয়েছে। তবে আগের অর্থবছরগুলোতে কিছু জমে গেলেও চলতি অর্থবছরে তার অনেকাংশেই নিষ্পন্ন হয়েছে। এই তথ্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের উপস্থাপিত তথ্যে যুক্ত হয়নি।’
অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্যে দেখা যায়, ২০০৯-১০ অর্থবছরে ২৭৯টি নিরীক্ষক আপত্তির বিপরীতে ২৭০টি নিষ্পন্ন হয়। ২০১০-১১ অর্থবছরে ১৯৫টির বিপরীতে ১৫৩টি, ২০১১-১২ অর্থবছরে ৩৪৫টির বিপরীতে ৫৮টি, ২০১২-১৩-তে ৫৭৫টির বিপরীতে ১১৪টি এবং ২০১৩-১৪ অর্থবছরে এক হাজার ১২০টির বিপরীতে ৩৩৩টি নিরীক্ষক আপত্তির নিষ্পত্তি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে মোট দুই হাজার ৫১৮টি নিরীক্ষক আপত্তিতে জড়িত অর্থের পরিমাণ ছিল তিন হাজার ৫৬৬ কোটি ৮৩ লাখ ২০ হাজার টাকা। যেখানে মোট ৯২৮টি নিষ্পন্ন আপত্তিতে আদায় হয়েছে এক হাজার ৩০৫ কোটি ২৩ লাখ ২০ হাজার টাকা।
গত পাঁচ বছরে দুই হাজার ৫১৪টি নিরীক্ষক আপত্তির মধ্যে আর্থিক বিধি অনুসরণ না করার জন্য ৯২৫টি, তামাদি ঋণ ও অন্যান্য কারণে ৪৬২টি, আয়কর সংক্রান্ত ৮৭টি, বিভিন্ন প্রকার অনাদায়ী ঋণ-সংক্রান্ত ৬৪২টি, গৃহনির্মাণ অগ্রিম (জমি ক্রয়) ২৪৮টি এবং ভ্যাট কর্তন-সংক্রান্ত ১৫০টি নিরীক্ষক আপত্তি করা হয়।